কবিতা

আস্তে কথা বলো এবং অন্যান্য কবিতা

আস্তে কথা বলো

বহুবার- বহুবার আমি আমার কবরের পাশে বসে দেখেছি,
কান পেতে শুনেছি- ভেতর থেকে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে একটা কবিতা।

সম্পর্কিত

নির্জনতার শাড়িতে জ্বলজ্বল করছে তেত্রিশ কোটি জোনাকি। শুভা- আমি,
আমি দেখছি-
অপেক্ষায় বাড়ছে দারুণ নৃশংস আলোয়; আলোকিত সব খুনি শ্বাপদের ভীড়।
বৃষ্টিবিঘ্নিত সম্প্রচারে
চোখবেয়ে কান্নার দিন মিশে গেলো
শরীর রাজপথ জুড়ে।
অবাধ্য হাইমেন ফেটে,
ঠোঁটের বারান্দায় ফুটে ওঠলো সহস্র গ্লাডিওলাস।
বাতাসে বাতাসে গুঞ্জনপূর্ণ সমাবেশ-
বাতিল করা প্রশ্ন ছিলো আমার বুকপকেটে রাখা।
অমীমাংসিত প্রশ্ন ঢাকা, নদী হলো কবে?
স্মৃতির গায়ে লেপ্টে কেনো থাকে তীব্র ন্যাপথালিন গন্ধ?
আচ্ছা বুকের ভিটায় কেনো উদাম নাচে ছেনাল বিষাদ?
কেনো হাতের রেখায় বসবাস যত্তসব অনাহারী দুক্ষগণিকার?

কোজাগরী সন্ধ্যার শাড়িতে হ্যাজাক বাতি,
সভ্যতা,
কবিতা,
শিশ্ন,
উপাদেয় রুটি,
আর জীবন ক্লীটের হাতঘড়িতে ক্লীবতার সাহচর্য নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।

কাজেই
আস্তে কথা বলো, সময় ঘুমাচ্ছে।


দুপুর তিনটা বত্রিশ

‘দুপুর তিনটা বত্রিশ, খুন হয়ে পড়ে আছে রোদ।’- ফেরি করছে পত্রিকা। আমার মাথায় এক চিলতে শৈশব। মানুষ অর্থহীন অথচ অর্থবহ এক গন্ধ বহন করে বেড়ায়, অথচ নিজের গন্ধটা নিজে টের পায় না কোথাও, তাই ধরা পড়ে যায়, বিছানায় নতুন পুরুষ, জামায় নতুন লিপিবদ্ধ চুল। আসলে সবাই রেহনুমা খালা নয়, সেই শৈশবে উনি দুপুরবেলায় যখন শরীরমিতি শেখাচ্ছিলেন আমায় তখন জ্বলে থাকতো ঘরের কোনে মোমবাতি, আমি দরদর করে ঘামতে থাকতাম আর বলতাম ‘ফ্যান ছেড়ে মোমবাতি নেভালে কষ্ট কম হতোনা?’ উনি হাসতেন, বলতেন ‘পাপ একটা শিল্পকর্ম! পাপ তখনই পাপ হয়ে ওঠে যখন কর্পুরের মতন কর্ম থেকে উবে যায় শিল্প।’ আমি বুঝতাম না, না বুঝে প্রায় তিন বছর….. এরপর অনেক পর যখন আমি বড় হয়ে উঠি তখন বুঝি বিশ্বাসঘাতক আমার গন্ধ টের পায়নি কেউ, আমি উইপোকা হয়ে ধ্বসিয়ে গ্যাছি গোটা সংসার, নাহ নিরোধ নয়, নিরোধ নয়। মোমবাতি গিলে ফেলতো ঘরে সব ঘামের গন্ধ, এরপর কোথাও মোমবাতি দেখলে আমার সন্দেহ হয় খুব, অবশ্য এর অনেক পরে আমি জানতে পারি, যে প্রেমিকা বুকে চেপে ঘুমায় পাশবালিশ তাকে বিশ্বাস করা যায়না, রেহনুমা খালা কোলবালিশ দুটি বুকে আর পায়ের ফাঁকে চেপে নিয়ে ঘুমাতেন।

খুন হয়ে গেছে রোদ- সংবাদ ফেরি করছে দুপুর তিনটা চুয়াল্লিশ।


অংকটা মিলছে না

একদিন তোমাদের এইসব দিনরাত্রি,
এইসব ঝড়বাদলের ঝাড়বাতি,
সূর্যবাগানের আগুনঘোড়া,
অপ্রাকৃত সঙ্গমে জন্ম নেয়া কলাবতী ফুল,
নগ্ন মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে আসা শুকনো আঙুল,

সব- সব কিছু সেই ছোট্টবেলার স্কুলজুতোয় বেঁধে নেয়া
প্রজাপতির মতন বেধে, তোমাদের
টেক্সট বিজ্ঞান আর অবরুদ্ধ গণিতে ছুড়ে দিয়ে নিষ্ফলা সমাজবিজ্ঞানের ডায়ালগ ‘খেলাটা ভালো ছিলো’

আমি মাথা মুছে নেবো,
শরীর পুড়িয়ে ভিজিয়ে নেবো।
প্রতিষ্ঠার চা বাগানে দাঁড়িয়ে দেখে নেবো
চোখের সামনে থাকা তোমাদের দ্বিতীয় ঘোড়াটা জন্মান্ধ।
বুঝে নেবো
অংক মিলছে না তোমাদের অথচ খেলাটা ভালো ছিলো।


বৃহস্পতিবার রাত

বৃহস্পতিবার রাত এলে আমি সন্ধ্যেবেলায় মদ কিনে খেয়ে
রাত হতে না হতে ঘুমিয়ে পড়ি।
বিষণ্ণতা নেমে আসা শহরে, জাদুঘর থেকে বেরিয়ে আসে
আমার বিগত সকল আত্মহত্যাগুলো।
যাদের ভার বইতে পারে না মহাকাশের মীমাংসিত রহস্যটাও।

আমি ভুলে যাই- বৃহস্পতিবার রাতে একসময় শহরে
নেমে আসতো ম্যাজিশিয়ান।
নারী, তাবৎ শহরের নারীরা অপেক্ষা করতো
মুসাফিরের নামাযের, আবহাওয়া অধিদপ্তর-
জোরে বাতাস বইতে পারে সাথে নিম্নাঞ্চলজুড়ে ঘটবে অঝোরে বৃষ্টি- বার্তা প্রচার করতো শহরে।
রাতভর ঝমঝম বৃষ্টি আর প্রার্থনায় সকালের পত্রিকার শিরোনামে – ম্যাজিশিয়ানের আঙ্গুলে ছুঁয়ে আঙ্গুল,
জেগে ওঠে শরীরের প্রতিটি লোমকূপ ছুটির দিনে যাচ্ছে।

আর আজ বৃহস্পতিবার এলে সন্ধ্যায় মদ কিনে,
খেয়ে রাত হলে পরে আমি স্মৃতিভূক প্রাণী ঘুমিয়ে পড়ি।
আসলে শহরজুড়ে মিথ্যেবাদী হ্যামিলনের মেয়র,
ইতিহাসেও তাই সকল অপরাধ ম্যাজিশিয়ানের যে ভালোবাসতো। তাই বলি
আমাকে সকাল হলে পরে জাগিয়ে দিও,
যীশুবিদ্ধ ক্রুশ নিয়ে আমি ফজরে যাবো,
নাম-ঠিকানাহীন
ভোরে ঝুলে পড়বো তোমাদের ঘুমন্ত অবয়বে।


বিয়েটা করেই ফেললাম

প্রিয় শহরবাসী, বিয়েটা করেই ফেললাম আজ!
হ্যাঁ, ভুল শোনেন নি।
ঠিক বলছি, একরত্তি মিথ্যে নেই এতে।
যতটা মিথ্যে সাঁজিয়ে আপনারা বলেন মদ্যপ মিথ্যে বলে না,
ঠিক তারচেয়ে বেশি সত্য, পৃথিবীর আদিম ধর্মগ্রন্থের
থেকেও সত্য, আমি বিয়ে করে ফেলেছি এই একটু আগে।
ঠিক যখন কবিতা ভালোবেসে উন্নাসিক হতে চাওয়া মলয়,
আপনাদের ছলাকলার ছন্দ বিশারদ হয়ে ওঠা
নিতে না পেরে চীৎকার করে উঠেছে,
ঠিক সেই সময় নুরজাহান রোডের দেয়ালে আমি,
আমি সোয়েব মাহমুদ মুত্রাঘাতে,
হাতের পরাস্ত রেখাগুলোকে আপনাদের হেরেমের বিশ্বস্ত প্রেমিকার স্তনে লেপ্টে দিয়ে,
অতীত আর ভবিষ্যৎ কেটে দিয়ে ,মায়ের চেয়ে অশ্লীল
এক নারী, শব্দ শব্দে লিখা কবিতাকে বিয়ে করে ফেললাম,

সম্পূর্ণ ধর্ম মোতাবেক
আকাশে তাকিয়ে তিনবার ‘কবুল’ প্রত্যাখান না করে
জবাবে তিন বিদ্যুৎ চমকে বিয়ে সম্পন্ন আমাদের।

প্রিয় শহরবাসি, বিয়েটা এভাবেই হয়ে গ্যাছে।
এর বেশি আর কিছু শুনবার যোগ্যতা
ছন্দ অক্ষরের অন্তর্বাস ছোঁয়াতে হারিয়েছেন আপনারা।

আপনার মতামত জানান

সোয়েব মাহমুদ

সোয়েব মাহমুদ; কবি। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘রবীন্দ্রনাথ কখনওই এখানে চা খেতে আসেননি’। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য বই- ‘একটি আত্মহত্যা স্থগিত করে এসেছি’, ‘আড়াইতলা সিঁড়িঘরে ব্যক্তিগত নিঃশ্বাস’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।