কৌশিক মজুমদার শুভ

কৌশিক মজুমদার শুভ

কৌশিক মজুমদার শুভ; কবি ও গল্পকার। পেশায় চিকিৎসক। প্রকাশিত বই- একটি ধূমকেতু ও কয়েকটি বিশ্বযুদ্ধ (২০১৮), রিসকা (গল্প) (২০২০), নৈঃশব্দ্য; হরিণীরা (২০২১)।
গল্প

একটি কুকুর উপজীব্য

১ যেসব শীতের কুয়াশায় প্রিন্ট করা ভোরবেলা হুইসেল কানে এলেও বিরক্তির উদ্রেক হয়, এমন ঘুমোপযোগী ভোরবেলা টেলিফোনে তাগাদা পেয়ে জিপ নিয়ে মেয়রের শালার বাড়িতে ছুটছেন ওসি শহীদুল। তড়িঘড়ি ইন ভুল করা  প্যান্টের ওয়েস্ট লুপ থেকে স্যান্ডোগেঞ্জির কানা বের হয়ে আছে। খাপের পিস্তল বিরক্ত হয়ে  ঘুমিয়ে আছে, বহুদিন এর কোনো ব্যবহার নেই তবু বের হলেই খামাখা এই উৎপাতটাকে সাথে নিয়ে বের হতে হয়। এমনিতেই গাউটের ব্যাথায় মাজা-কোমড় থিতু মেরে থাকে এরমধ্যে এই আরেকটা বাড়তি ওজন, পুলিশের ইউনিফর্মটা বিলোপ করে পোশাকের স্বাধীনতা দেয়া দরকার। অন্তত ইন-ফিন তো উঠিয়ে দেয়া যেতে পারে, শহীদুল সাহেবের এই মত। চাকরির প্রথমদিকে বেশ লাগতো- ইউনিফর্ম, ইন করা প্যান্টের লুপে বেল্ট, চামড়ার খাপে অস্ত্রটা ভরলেই শরীরে একটা আলাদা উত্তেজনা হোতো। যেন তাপমাত্রা বেড়ে গ্যাছে দুই ডিগ্রি। এখন আর সেই উপযোগ নেই- তবে কিছুটা তো আছেই হাতে একটা লোডেড পিস্তল থাকলে আর অন্যের সামনে তা নাচিয়ে নাচিয়ে দ্যাখানো গেলে পুরুষের শান বেড়ে যায়। ‘ধুরো! এই বেইন্নাকালে-  মেয়রের শালাবউয়ের কি ওলাওঠা হইছে’, বিরক্তির সাথে বলেন শহীদুল। ওলাওঠা না হলেও কাহিনী নেপথ্যে একটা আছে। মেয়রের শালার একটিমাত্র মেয়ে। সকালবেলা একটা কুকুর কিভাবে যেন দেয়াল ডিঙিয়ে বাড়ির বাগানে ঢুকে তাকে কামড়েছে। শুধু তাই না, ধরতে যাওয়াও মন্ত্রীর শালা বউকেও আঁচড়ে দিয়েছে। কুকুরটা এখনো বাড়ির বাগানে, ভয়ে বাড়ির লোকজন কুকুরটার ধারে কাছে যাচ্ছে না, বাড়ির বাইরেও বের হচ্ছে না। একধরনের গৃহবন্দী অবস্থায় আছে বলে জানা গেছে। তাই সকাল সকাল মেয়রের তলব,  যেন তৎক্ষনাৎ ফোন পেয়ে ওসি তার শালার বাড়ি গিয়ে অহেতুক উৎপাত থেকে রেহাই করে। এতেই ইতি না- এই কুকুর কার?  তদারক করে কুকুর মালিকের নামে মামলা ও উপযুক্ত সাজা কার্যকর হতে দেখতে চান তিনি। ‘শালার পুত! কুকুর কামড়াইছে ডাক্তারের কাছে যাও, ইনজেকশন লাগাও, একটাতে না হয় গুষ্টি সুদ্ধা সবাইরে ধইরা ধইরা পাছায় ইনজেকশন ভইরা দাও, মেয়রের শালার, শালাবউর, লাগলে মেয়রের সুন্দরী বউডারেও দুইটা হান্দাইয়া দাও- দমকল ডাকো- পুলিশ ক্যান? পুলিশের চাকরী কি নাকি কুত্তা ধাবড়াইতে লইছি! …মারানির পোলা!’ শহীদুল সাহেব বরিশালের লোক রাগ হলেই তার আঞ্চলিক পরিচয় তার গালাগালিতে ফুটে ওঠে। পাশে বসে কনস্টেবল জাফর ঝিমায়, মাঝেমধ্যে ওসির কথায় জোর দিতে হুঁ, হুঁ করে, শহীদুল সাহেবের নির্দেশ। ‘কথায় হ্যাঁবোধক তাল না দিলে আসলে গুরুত্ব থাকে না- লাখ টাকা দামের কথাও দুই পয়সার মনে হয়’। ওসি শহীদুলের ফিলোসোফিনামার অনেকগুলো বয়ানের মধ্যে এটা একটা। ‘কুকুর তো ধরতে যাচ্ছি তা বন্দুক পিস্তল ছাড়া তো সাথে কিছু নাই, কি নেয়া যায় কও…

বিস্তারিত পড়ুন »
গল্প

পরী

ক্রমাগত পুড়তে পুড়তে সিগারেটের ছাই লোকটার আঙুল অবধি পৌঁছেছে, তখনই বৃষ্টিপরবর্তী শহরের আধভেজা হাওয়া শেষ ছাইটুকু পেড়ে নিয়ে গেল। টিনের…

বিস্তারিত পড়ুন »
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।