কয়েকটি পারাবত উড়ে গেল এই জানালায়
আকাশের রোদ কখনও বা কেন জানি
বললে,
তারা সব ফিরে এল একে একে।
উপরের স্তবকটি আগে পড়া না-থাকলে এটি কার লেখা তা বলা কঠিন হবে, কারণ এতে এমন কোনো মুদ্রাচিহ্ন নেই যা আগে বা পরে কোনো কবির কাব্যযাত্রায় স্বতন্ত্রভাবে বিস্তারিত হয়েছে। এমনিতে স্তবকের দ্বিতীয় পঙ্্ক্তিটিকে মনে হয় প্রক্ষিপ্ত : পারাবতের মতোই কোথাও থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে যেন—আবার এও মনে হয় : পঙ্ক্তিটি হয়ত ছিলই—পারাবতেরই মতো—কিন্তু তার দু-একটি শব্দ পালকের মতো কোথাও খসে পড়েছে, কারণ তা না থাকলে, ‘আকাশের রোদ কখনও বা কেন জানি’ বাক্যটি নিরর্থক হয়ে পড়ে। বাক্যটি পৃথকভাবে অসমাপ্ত ও অর্থহীন বটে, তবু, ব্যাকরণগত যোগ না থাকা সত্ত্বেও বাকি তিন পঙ্ক্তির সঙ্গে বসে একটি রহস্যনিবিড় অর্থও পেয়ে যায় এবং স্তবকটি আমাদের আকৃষ্ট করে। এখানে ‘তারা’ কয়েকটি পারাবতের সর্বনাম, উড়ে গিয়েছিল তাই ফিরে এল; ‘বললে’র আড়ালে আছেন একজন ‘তুমি’—এই তুমি হয়ত-বা ‘আমি’ই—যার প্রমাণ দ্বিতীয় স্তবকের ‘অবসর পাবে?’ প্রশ্নকথাটি :
তারা সব ফিরে এল যদি
অতন্দ্র রাতের স্রোত পায়ে ঠেলে
তবু কি এখন,
যে লেখা হয়নি লেখা, অবসর পাবে?
নিশ্চিতই বলা যায় এখানে ‘তুমি’ কি ‘আমি’ কেউ একজন রয়েছে, যে কিনা লেখে, এমনকি প্রথম স্তবকের তৃতীয় পঙ্ক্তির একটিমাত্র ক্রিয়াপদকে দ্বিতীয় পঙ্ক্তির শেষে বসিয়ে ‘আকাশের রোদ’কে কর্তা/বক্তা বানালেও এই তথ্যের কোনো হেরফের হয় না। কবিতার শেষ স্তবকটির সঙ্গে প্রথম দুই স্তবকের বিষয়গত দূরত্ব কম নয়, যদিও আবার ভুল করে তাদের—পারাবতদের—নদী পার হয়ে সীমাহীন দূরত্বে উড়ে যাওয়ার তথ্য আছে, তবু, এই দূরত্ব সত্ত্বেও, স্তবকটি লিখনভঙ্গিমার জন্য শিল্প-সংবেদনসূত্রে আমাদের মনে স্থায়ীভাবে ছাপ রেখে যায় :
একগলা গলে যাওয়া নগরীর নদী
পার হয়ে পায়ে পায়ে আমরা ক’জন
এইখানে হাঁটুভেঙে আলসে বলে
বললুম,
আকাশের নীলচোখ আধোবোজা ছিল;
শুধু তারা ভুল করে
নদীটুকু পার হয়ে
উড়ে গেছে সীমাহীন যোজন দূরে ॥
সৈয়দ শামসুল হকের ‘কয়েকটি পারাবত’ শিরোনামের এই কবিতাটি ছাপা হয়েছিল কৃত্তিবাস-এ, ১৩৬১ বঙ্গাব্দে—১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে—কিন্তু তাঁর এই অসাধারণ কবিতাটি আর কখনো কোনো বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এখানে এমনটি ভাববার কি সুযোগ আছে যে এ-কবিতার কোনো পাণ্ডুলিপি তাঁর কাছে ছিল না এবং কৃত্তিবাস-এর ওই সংখ্যাটি, অথবা পরে-প্রকাশিত কৃত্তিবাস পঞ্চাশ বছর নির্বাচিত সংকলনটিও তাঁর চোখে পড়েনি? হতে পারে, তবে তা না-হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি, কারণ এই কবিতাটিই শুধু নয়, তাঁর প্রথম বই বুনোবৃষ্টির গান, যেটি বাজারজাত হয়নি কখনো, সেটিই তো গুম হয়ে গিয়েছিল, যার কথা শ্রেষ্ঠ কবিতার ভূমিকায় একবার লিখলেও, ১৯৯৭ সালের কবিতা সংগ্রহ-এ আর উল্লেখই করেননি কবি। অনুমান করি, শেষপর্যন্ত এই শুরুটা হয়ত আর তাঁর পছন্দ হয়নি, যে-লেখক তাঁর জীবনটাকেই ‘প্রণীত’ বলে মনে করেন, তাঁর পক্ষে একটি বইকে অতৃপ্তির কারণে গুম-করে-ফেলা অসম্ভব নয়। হয়ত সেই বইয়ে পূর্ববর্তী কোনো কবির লক্ষযোগ্য প্রভাব থেকে গিয়েছিল, হয়ত জীবনানন্দ, হয়ত-বা অন্য কেউ। কিন্তু শেষমেশ পুরো বইটাকে কি বাতিল করা গেল? গুমবইয়ের নামকবিতাটি তো শ্রেষ্ঠ কবিতা, কবিতা সংগ্রহ ও কবিতাসমগ্র-এর শুরুতেই জীবনানন্দের প্রভাবসমেতই শোভা পাচ্ছে :
বৃষ্টি এসে ভেজায় কখন নাগেশ্বরীর মাঠ।
দুরন্ত এক বাতাস নাড়ে বুনো চালতা ফল—
হৃদয় যেন। রংগপুরের কনকরঙা মেয়ে
হঠাৎ সাড়া জাগিয়ে দিয়ে লুকোয় পরাণ পণে।
এই দেখেছি এই দেখিনি বৃষ্টিভেজা মাঠ।
এখানে তৃতীয় পঙ্ক্তিটিকে আশা করি কেউ দাঁড়ি তুলে নিয়ে এভাবে পড়বেন না যে : ‘হৃদয় যেন রংগপুরের কনকরঙা মেয়ে’, বরং উপমাটি পরবর্তী পঙ্ক্তিতে থাকলেও পড়তে হবে ‘দুরন্ত এক বাতাস নাড়ে বুনো চালতা ফল—/হৃদয় যেন।’ কেননা, এটাই কবির ইচ্ছা, এই কারণেই দুটি জ্যান্ত যতিচিহ্ন : দাঁড়ি ও ডেশ [এখানে ডেশকে টানাদড়ি বললেই ভালো]। পাঠকের মনে পড়তে পরে সৈয়দ হকের ‘কবিতা এখন’ লেখাটির কথা, যেখানে বলেছিলেন অভ্যেসের কারণে ‘শব্দ’ ও ‘বাক্যগ্রন্থনা’র ভেতর থেকে সবসময় বাঁধা অর্থটা বের হয় বা বের হতে চায়, কিন্তু কবির উচিত তাতে নতুন মানে দেওয়া। এখানে উপমাটা অবশ্য দূর-চিন্তাপ্রসূত, কোনো গড় ও স্বাভাবিক উপমা নয়, তবু জীবনানন্দের ‘তোমার হৃদয় আজ ঘাস’কেই মনে করিয়ে দেয়। তার চেয়ে কি ভালো ছিল না ‘কয়েকটি পারাবত’কে কোনো বইয়ে যুক্ত করা অথবা শুরুর দিকের এই কবিতাটির চেতনাকে মনে রেখে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়া, কেননা এখানে পূর্ববর্তী কোনো কবির প্রভাব তো চোখে পড়ছে না, থাকলে কিছুটা চীনা ও ফরাসি কবিতার কিছু প্রভাব থাকলে থাকতে পারে, এবং থাকেও যদি, সেই পথে আরও কিছু দূর এগিয়ে গেলে নিজস্ব ভিটেমাটির প্রভাবে নিশ্চয়ই তা উবে যেত।
কিন্তু সমস্যা হলো, কোনো একক চেতনায় দীর্ঘদিন স্থির থেকে তাঁকে নিয়ে কোনো মূর্র্তি তৈরি করার সুযোগ তিনি কখনোই কাউকে দেননি। এই অবস্থা দোষের না গুণের সে-বিচার আলাদা, কিন্তু তা যে পুরোটাই প্রতিভাজাত তাড়না, সে-সম্পর্কে একটি লক্ষ্যভেদী মন্তব্য করেছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
এটা একেবারেই মিথ্যা নয় যে, সৈয়দ শামসুল হকের মাথার ভেতর একটা পোকা ছিল। মাথার এই পোকাকে ঘাড়ের ভূতও বলা হয়। নামান্তরে এটি হচ্ছে প্রতিভা, যেটি যার ওপর ভর করে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে দেয় না, তাড়িয়ে বেড়ায়। শামসুল হকও তাড়া-খাওয়া মানুষ ছিলেন। তার কোনো বিশ্রাম ছিল না। প্রতিভা তাকে মনেপ্রাণে এবং সর্বক্ষণের জন্য সাহিত্যের কাজে ব্যস্ত রেখেছে।
এই অবস্থাই তাঁকে প্রথম জীবনের বহু কবিতা ও প্রথম বই বাতিল করে দিতে তাড়িত করেছে, কারণ এর কাছাকাছি সময়েই তো তাঁর মুম্বাই-যাত্রা বা কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা এবং তা ত্যাগ করা, চিত্রনাট্য লেখা এবং চিত্রালীতে ঢুকে-পড়া ইত্যাদি—এই সব তৎপরতা নিশ্চয়ই ‘কয়েকটি পারাবত’ ও বাতিলকৃত প্রথম বইয়ের প্রতীকী সংকেতময়তা থেকে অনেকটাই আলাদা। এরপরই না তাঁর দ্বিতীয় বই—এখন যেটি প্রথম বই বলে গণিত ও পরিচিত—একদা এক রাজ্যে। তখনো অবশ্য সেই চেতনা শেষ হয়ে যায়নি এবং শেষ যে হয়নি তার প্রমাণ আমরা পেতে পারি তাঁর ‘খঞ্জনি’, ‘দুইজন’, ‘আমাকে ফেলে’, ‘মহিলাকে শিল্পীর উত্তর’, ‘আত্মার মৃত্যু ও কবি যা দেখেছে’ ও ‘একদিন চিরদিন’ প্রভৃতি কবিতা পড়ে। ‘খঞ্জনি’ কবিতাটি পড়লে মনে হয় এটি একজন বাউলের নিষ্কাম কাজের প্রতি কবির সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি; কিন্তু তা তো বাহ্য অর্থ, গূঢ় অর্থে এই ধুলোর বাউল তো আর বাউল নয় শুধু, সে যে-কোনো শুভকাজেরই প্রেরণা :
আকাশে উদাসী মেঘ, মর্ত্যে তুমি বাজাও খঞ্জনি
ধুলোর বাউল তুমি, তাকে তুমি ব্যাপ্ত করে আছো।
নিমের আড়াল আর কামরাঙা ছায়া
সেখানে দাঁড়াও এসে;
ছেলে, বুড়ো, আধবুড়ো, আইবুড়ো,
সকলেই সন্তানের অধিকারে ভালোবাসা বোনে,
তুমি বাজাও খঞ্জনি।
‘দুইজন’ ও ‘আমাকে ফেলে’ কবিতা দুটি প্রেম-সংকেতময় এবং তাতে অধ্যাত্ম-ইঙ্গিতও কম নয়; ‘দুইজন’ কবিতায় রয়েছে তারা কোথায় কীভাবে আছে তার আভাস ও ইশারা আর ‘আমাকে ফেলে’ কবিতাটিতে রয়েছে দুইজন যে শেষমেশ একাত্মা—সেই চিন্তার প্রকাশ, এবং কে না বলবে যে এই চিন্তায় উপনিষদ ও সুফি ভাবনার পরিচয় স্পষ্ট :
আমাকে ফেলে কোথায় যাবে তুমি?
যেখানে যাও অন্ধ-বন লক্ষ তারার রাত,
ব্যথার মতো বাতাস বয়ে যাবে।
আমাকে তুমি এড়িয়ে বলো কেমন করে রবে?
এ-পর্যন্ত পড়লে দুই আত্মার মধ্যে কিছুটা দূরত্ব রয়েছে বলে মনে হয়, কিন্তু দ্বিতীয় স্তবকে যখন পড়ব ‘যতই তুমি সরাতে চাও আমার অনুভব?/তোমার চোখে গভীরতর স্বপ্ন হয় শিখা—/জ্বেলেছি আমি তোমাকে চেয়ে অন্ধকার রাতে,/ছড়িয়ে পড়ে আমার ছায়া তোমার চেতনায়’, তখন বোঝা যায় ‘চাওয়া’ আর ‘স্বপ্ন’ নামক দুই বিনিসুতা কীভাবে দুই চেতনা এক-হয়ে-যাওয়ার বার্তাটুকু প্রকাশ করছে।
এই ‘আমি’ হল সৈয়দ শামসুল হকের ‘স্বয়ং কবি’ আর ‘মন’ হলো ‘আমি-কবি’র উপস্থিত চরিত্র—তাঁর মতে—‘কবি এই চরিত্রটিকে নির্মাণ করেন, ঠিক যেমন নাট্যকার নির্মাণ করেন তাঁর নাটকের চরিত্র’;, পরবর্তীকালে গৃহীত তাঁর একটি শব্দ ধার নিয়ে কথাটিকে আরও সর্বমাধ্যমিক করে বলা যায় : ‘প্রণীত’ চরিত্র। এই চরিত্রই নাকি পরে—কবির মতে—প্রতীক হয়ে উঠবে বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালায়, এর আগে পূর্ববর্তী কবিতাসমূহে নাকি ‘প্রতীক হয়ে ওঠেনি’, হয়ে ওঠার অপেক্ষায় ছিল।
দুই
‘কয়েকটি পারাবত’ কবিতার সূত্র ধরে সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার কবিতা নিয়ে এত কথা বলবার পর এখন লক্ষ করছি এ-বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য আছে খোদ কবিরই। ‘কবিতার ভেতরে কবি-চরিত্র ও তার দেখা বাস্তবতা’ শিরোনামক লেখায় তিনি বলছেন কবিতা লেখার পনেরো বছর পরে একদিন খেয়াল হলো বিশেষ এক ব্যক্তি ও তার ভাবকে তিনি তাঁর লেখায় ব্যবহার করতে চাইছেন—লক্ষ করছেন—তাঁর ‘করোটিতে’ একজন কবি ও তার কবিতাকে : ‘যেন নদীর ভেতরে চর জেগে উঠছে’; এই কবি আবার স্বয়ং কবি নন, কবিতার ভেতরকার চরিত্র, লিখছেন : ‘লক্ষ করি আমার প্রথম দিককার কবিতায় একটি চরিত্র হিসেবে ওই আমি-কবির উপস্থিতি—সর্বনামে কখনো সে উঁকি দিচ্ছে, কখনো সে উত্তম পুরুষে পঙ্ক্তি ঠেলে বেরিয়ে আসছে। তখনো সে প্রতীক হয়ে ওঠেনি, হয়ে ওঠার অপেক্ষায় যেন নিকটেই আছে, হয়ে সে উঠবে আরও কিছুদিন পরেই বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালায়।’
এখানে লক্ষ করবার বিষয় এই যে, তিনি তাঁর কবিতার প্রথম পর্যায়কে বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছেন আর বলতে চাচ্ছেন এই যে কবিতার ‘চরিত্র’ সে ‘আমি-কবির উপস্থিতি’ বটে, কিন্তু তাঁর মতে, ‘এই চরিত্রটিকে স্বয়ং কবি বলে ধরে নিলে ভুল হবে’। এ-অবস্থায় তো এই প্রশ্ন উঠতে পারে যে : তিনি যে-প্রকৃতির কবি, তাঁর পক্ষে এখানে কোনো ‘জীবন দেবতা’র অস্তিত্ব মানবার কথা নয়, তাহলে এই ‘স্বয়ং কবি’ আর ‘আমি-কবি’র পাথর্ক্যটা কী? এই সূত্রে মনে পড়ছে দার্শনিক বিমলকৃষ্ণ মতিলালের একটি লেখা ‘আমি ও আমার মন’-এর কথা, যেখানে ‘আমি’ আর ‘মন’-এর পার্থক্য বিষয়ে ভারতীয় নৈয়ায়িক ও দার্শনিকদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি লিখেছেন :
‘আমি’ বলতে যাকে বোঝায় সে হচ্ছে জ্ঞানকর্তা, একরূপ সর্বময় কর্তা। ‘মন’ বলতে অর্থাৎ নৈয়ায়িক যাকে মন বলে বোঝাতে চান তাকে কর্তা বলা যাবে না। সে হচ্ছে করণ বা ইন্দ্রিয় অর্থাৎ অন্তঃকরণ। তার স্বাতন্ত্র্য নেই, জানা শোনা ভাবনা তার কাজ নয়, তার কাজ হ্েচ্ছ জানা শোনা ভাবনায় কর্তাকে সাহায্য করা মাত্র। সে সহায়ক, নিজে কর্তা নয়, কর্তা হচ্ছে আত্মা।
এই ‘আমি’ হল সৈয়দ শামসুল হকের ‘স্বয়ং কবি’ আর ‘মন’ হলো ‘আমি-কবি’র উপস্থিত চরিত্র—তাঁর মতে—‘কবি এই চরিত্রটিকে নির্মাণ করেন, ঠিক যেমন নাট্যকার নির্মাণ করেন তাঁর নাটকের চরিত্র’;, পরবর্তীকালে গৃহীত তাঁর একটি শব্দ ধার নিয়ে কথাটিকে আরও সর্বমাধ্যমিক করে বলা যায় : ‘প্রণীত’ চরিত্র। এই চরিত্রই নাকি পরে—কবির মতে—প্রতীক হয়ে উঠবে বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালায়, এর আগে পূর্ববর্তী কবিতাসমূহে নাকি ‘প্রতীক হয়ে ওঠেনি’, হয়ে ওঠার অপেক্ষায় ছিল।
আসলেই কি তাই? কবিতাগুলো স্ব-রচিত বলে প্রকাশিত কবিতার ভাষার নিজস্ব প্রকৃতি-পরিধির বিরুদ্ধে গিয়ে কি এমন কথা বলা যায়? আমরা বরং এখানে তাঁর প্রথম পর্যায়ের আরেকটি কবিতা পড়ে তা যাচাই করতে পারি :
একদিন মালিনীকে শুধালেন তাতার মহিষী
‘আর কত ফুল তুই ফোটাতে পারিস?
এমন কি ফুল আছে ভোরে যার হবে না মরণ?’
মালিনী বৃক্ষের কাছে শুধাল তখন
‘কোথায় সে বীজ আছে বলে দাও, যদি জানো তুমি’
আমি ফুল ফোটাবো নতুন।’
প্রাচীন পাতার হাত সে বৃক্ষের আকাশের নীল
দেখে উল্লসিত, ওড়ে কোটি চিল, বলে—
‘মৃত্যু এক অনুপম ফুল, মৃত্যু তার হয় না কখনো,
সময় করে না তার সুগন্ধ হরণ।
সেই ফুল ফুটবার হয়েছে সময়।’
সে রাতে সম্রাট এসে তাঁকে সেই ফুল দিয়েছিল ॥
এই কবিতার প্রতীক যদি ‘প্রতীক’ না হয়ে ওঠে তাহলে তো এটি একটি গল্পমাত্র, অন্য কিছু নয়, এবং সে এমনই এক গল্প যা কখনো বাস্তবে ঘটবার নয়, পাওয়ারও নয়—যা কেবল রূপে রূপকে বা রূপকথায় পাওয়া সম্ভব। কিন্তু একে যদি রূপকথাই ধরি, তবু কবির সচেতন কারুকৃত্যে এটি এমন এক রূপ পেয়েছে যে তাতে শিল্পীজীবনের এক গূঢ়তর পরিণামের ইঙ্গিত ফুটে ওঠে এবং গল্পটিও তার সাধারণ রূপকথার মেজাজ হারিয়ে এক শিল্পকর্মে উন্নীত হয়। তারপরও তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাহলে কি প্রতীক কাকে বলে তা বুঝতেন না সৈয়দ শামসুল হক? এর জবাব আছে তাঁর ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা : কবি ও কবিগণ কিভাবে’ প্রবন্ধে।
এই প্রবন্ধটি পড়লে বোঝা যায় প্রতীক বিষয়ে তিনি খুবই উচ্চাশী—এ-ক্ষেত্রে তাঁকে পরস্পর-বিরোধী/সম্বন্ধী উনিশ শতকের ‘প্রতীক’-এর সংজ্ঞাপ্রদানকারী জুফ্রোয়া, বালঁশ, পিয়ের ল্যরু ও স্যাঁৎ-ব্যভ্ প্রমুখের কাতারে গণ্য করা যায়, কারণ এতে বিশেষভাবে তাঁর নিজস্ব চিন্তা যুক্ত হয়েছে। তাঁর মতে, বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালার পূর্ব কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোতে ‘কবি-কবিতা’ প্রতীকটি ছিল প্রেম-বিচ্ছেদে খিন্ন ও বয়সের আগে বৃদ্ধ এক যুবক, যার পায়ের নিচের চিত্রগুলো চূণিত, বাস্তব ণ্ডি, ধ্বস্ত সময় থেকে উত্থিত, ‘যার পঙ্খহীন চোখে নিষ্করুণ অবলোকিত’, কিন্তু বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালায় এসে সে তৃতীয় পুরুষের বদলে উত্তম পুরুষে—প্রথমে একবচনে পরে বহুবচনে চিত্রিত; তাঁর মতে, ‘মানবের স্বপ্নসমূহের অনুবাদই কবি, তথা মানবের কাজ এবং মানবিক জীবনই হচ্ছে প্রতীক অর্থে কবিতা।’ বোঝাই যাচ্ছে প্রতীককে তিনি একবাচনিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে চূর্ণিত খণ্ডিত ধ্বস্ত চিত্রে স্থাপন না করে পুরো মানবব্যাপারের ক্ষেত্রে চিন্তা করতে আগ্রহী। বোঝা যাচ্ছে, প্রতিভার ভূত তাকে আরো বড়ো ক্যানভাসের দিকে ঠেলতে চাইছে—কথাসাহিত্যের দিকে তাঁর যাত্রা শুরু হয়ে গেছে তো আগেই—ছোটো বিষয় ও উপলব্ধিতেও আর মন ভরছে না, ১৯৬৯ এবং তার পরবর্তী সময়ের আঁচও এসে লাগছে, ফলে কবিতায় রাজনৈতিক ভাষ্যও তৈরি হবে—লিখবেন কাব্যনাট্য, লোকভাষানির্ভর সনেট, লিখবেন আরও কিছু কবিতাও এবং এর সঙ্গে আগে-পরে বিভিন্ন দেশের বিবিধ চেতনার কবিতার অনুবাদ তো থাকবেই।
বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালার পর তাঁর কবিতায় সময় ও রাজনীতির লক্ষ্যযোগ্য প্রভাব পড়েছে। এই চেতনায় অস্তিত্বের প্রশ্নে একজন কবির দায়বদ্ধতার ব্যাপার জড়িয়ে থাকে বলে একে ছোটো করে দেখা যায় না এবং প্রয়োজন ও সাময়িক গণদাবির কারণে স্বরগ্রামের যে-পরিবর্তন ঘটে, তার জন্যও শিল্পের সূক্ষ্ম-সংবেদনগত আবেদন ক্ষুণœ হল কি না সেই প্রশ্নও সব সময় তোলা যায় না। এ-ক্ষেত্রে কাব্যনাট্যের দৃষ্টান্তযোগ্য সাফল্যের কথা বাদ দিলে তিনি কবিতায় সমকালিক শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান ও শহীদ কাদরীর চেয়ে সবিশেষ স্মরণযোগ্য কোনো আবেদন সৃষ্টি করেছেন তা বলা যাবে না। তিনি নিজেও যে তাঁর এই সময়কার কবিতার সাফল্য বিষয়ে খবু সরব ছিলেন তা না, শুধু এটুকু বলেছিলেন যে, বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা পর্যন্ত প্রথম পর্যায় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করে দেখলেন, ‘ততদিনে বাংলাদেশ গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ভিতর দিয়ে হাঁটছে।’ আরও বললেন, ‘আমার কবিতা লেখার শুরুতে, সেই যে বাস্তবতাকে আমি, চূর্ণিত ভাঙা আয়নার টুকরোর মতো কৌণিক ও তীক্ষ্ণধার দেখেছি, কুড়িয়েছি, মুঠো করেছি ও ফেলে দিয়েছি; সেই আমি সে সকল বলবার জন্য তখনই আমার কবিতার কলমে দেখতে পাচ্ছি গদ্যধারা’—এ-গদ্যধারা তো সময় ও প্রয়োজনেরই গদ্যময় বাস্তবতা—এই চেতনার সঙ্গে কথাসাহিত্যের সবিস্তার অভিজ্ঞতাও যখন যুক্ত হল, তখন স্বাভাবিক কারণেই তাঁর কাব্যভাবনায় এল এক লক্ষ্যযোগ্য পরিবর্তন : তিনি আর ছোটো ‘খিন্ন’ ‘খণ্ডিত’ ‘ধ্বস্ত’ ‘চূর্ণিত’ চিত্রজগতে থাকতে চাইলেন না, ফিরতেও চাইলেন না। যদিও নাভিমূলে ভস্মাধার-এ আবারও সেই পূর্ব-অভিজ্ঞতায় ফিরে গেছেন বলে কবি বলেছেন, কিন্তু তা ঠিক নয়, বইয়ের নামকবিতায়ই রয়েছে তার উদাহরণ :
নাভিমূলে ভস্মাধার : পদ্যবার্তা ক্রমে পুড়ে যায়;
এই শ্যাম বঙ্গভূমে আবরাহার হাতির বৃংহতি;
শব্দলাশ বুকে ধরে শুয়ে আছে কবি মূঢ়মতি;
মরে যাওয়া নদীটির স্তনে লাল কাঁকড়া হেঁটে যায়।
আর আঙ্গিকের ক্ষেত্রেও কবির নিজের স্বীকারোক্তি : ‘এ ক্ষেত্রে করণ পাল্টেছে এই যে, আমি দেখতে পাচ্ছি এর একেকটি কবিতা একেকটি ক্ষুদ্র মোজাইক বটে, আবার সবগুলো মিলে, ওই বত্রিশটি কবিতা মিলে রচনা করেছে বড় মাপের একক একটি মোজাইক।’ একথা বলবার জন্য এখানে এই ‘একক’ত্বকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই যে, কবি এখন ছোটো ক্যানভাসে অতৃপ্ত, অনেকদিন ধরে তাঁর মনে হচ্ছিল বাংলাভাষায় ‘খ- কবিতার সব সম্ভাবনা’ আবিষ্কার করে ফেলেছেন, এখন একে কিছুদিনের জন্যে পাশে রেখে অন্যদিকে মুখ ফেরানো প্রয়োজন—হয়ত দীর্ঘকবিতা, হয়ত কাব্যনাট্য, হয়ত অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিলে ‘একক’ত্ব। এমনই এক এককত্বের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হলো তাঁর পরানের গহীন ভিতর কাব্যগ্রন্থটি।
পরানের গহীন ভিতর কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো পড়ে প্রথমেই একথা মনে হয় যে সৈয়দ শামসুল হক লোকভাষাকে আশ্রয় করে একসঙ্গে এতগুলো কবিতা যে লিখে উঠবেন তার কোনো পূর্বাভাস তাঁর কাব্যচেতনায় খুঁজে পাওয়া কঠিন। বরং এগুলো যদি সমকালীন কবি ওমর আলী লিখতেন তাহলে তা স্বাভাবিক মনে হত, কারণ তাঁর এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি কাব্যগ্রন্থের পল্লিরমণীর বুলিতে লিখিত ‘আমি কিন্তু যামুগা’ কবিতাটি তার বড়ো প্রমাণ। তাহলে কি ১৯৬০ সালে গ্রন্থভুক্ত এই কবিতাটিই পরানের গহীন ভিতর-এর উৎসবীজ? তা বলা যাবে না হয়ত, তবে এই কবিতাটি যে তার গোপন প্রেরণা নয়, বা এটি যে তাঁর করোটিতে কখনো সবিশেষ অনুরণন তোলেনি তাও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এখানে ওমর আলী ও সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার দুটি স্তবক পাশাপাশি পড়ে দেখা যেতে পারে :
আমি কিন্তু যামুগা। আমারে যদি বেশী ঠাট্টা করো।
হুঁ আমারে চেতাইলে তোমার লগে আমি থাকুম না।
আমারে যতোই কও, তোতাপাখি, চান, মণি, সোনা।
আমারে খারাপ কথা কও ক্যান, চুল টেনে ধরো।
[‘আমি কিন্তু যামুগা’, এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি ১৯৬০]
আমি কার কাছে গিয়া জিগামু, সে দুঃখ দ্যায় ক্যান
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছন নিয়া ক্যান অন্য ধান খ্যাত রোয়?
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।
[কবিতা ৪, পরানের গহীন ভিতর ১৯৮১]
পরানের গহীন ভিতর-এর তেত্রিশটি কবিতার এই একক/সমগ্র-এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে যেভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধির দিকে নিয়ে যান তাতে ওমর আলীর একটি কবিতার সাফল্য অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। ওমর আলীর কবিতায় রয়েছে এক সরল গ্রাম্য নারীর অভিমান/রাগ-এর প্রকাশ এবং তা একস্বরিক, আর এই তেত্রিশটি কবিতায় একই অঞ্চলের ভাষা থাকলেও এতে এসেছে একাধিক স্বরের ব্যঞ্জনা। পুরো বইয়ের বিষয়গত এককত্বের মধ্যেও কোনো কোনো কবিতা কাল-অতিক্রমের দাবি নিয়েও হাজির :
কত না দুধের ক্ষীর খায়া গ্যাছে কালের গোপাল
কতবার কত রোয়া কারবালা খ্যাতের খরায়
কতনা রঙীলা নাও নিয়া গ্যাছে কাল যমুনায়,
অঘোরে হারায়া গাভী ফেরে নাই নিজস্ব রাখাল।
[কবিতা ২৫]
এখন কোথায় যাই, এইখানে বড় সুনসান
মানুষের দুঃখ আছে, জগতের আছে কি জানি না—
জগত এমনভাবে হয়া যায় হঠাৎ অচিনা।
মনে হয়, আমার থিকাও একা বৃক্ষের পরান,
আমার থিকাও দুঃখী যমুনার নদীর কিনার।
আমার তো গ্যাছে এক, কতকোটি লক্ষ গ্যাছে তার।
[কবিতা ৭]
বইয়ের এককত্ব এবং এককত্বের মধ্যেও এমন কিছু স্বতন্ত্র দৃষ্টান্ত রয়েছে তাঁর পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোতেও।
তা সত্ত্বেও সৈয়দ শামসুল হক যে নিরবিচ্ছন্ন কবিতা লিখে গেছেন তা নয়, বরং কবিতাবহির্ভূত রচনায়ই তিনি মগ্ন ছিলেন বেশি, আসলে যেকোনো মাধ্যমেই হোক, সাহিত্যক্ষেত্রে নিরন্তর সক্রিয় থাকার চিন্তা তাঁকে আমৃত্যু তাড়িত করেছে। একেই তো বলা হয়েছে ঘাড়ের ভূত—প্রতিভার ঘাড়ের ভূত—যা তাঁকে বিভিন্ন মাধ্যমের দিকেই শুধু তাড়িত করেছে তা নয়, কবিতামাধ্যমেরও নানা শাখা-প্রশাখার দিকে নিয়ে গেছে। এ-কারণে, তাঁর কাব্যযাত্রা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও, এবং তিনি তাঁর কবিতা সংগ্রহ-এর সমস্ত কবিতাকে বইয়ের নাম মুছে দিয়ে উপস্থাপন করলেও, সেগুলোতে কোনোপ্রকার একাকারত্ব বা সার্বভৌমত্বেও পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায় না, বরং পৃথক পৃথক এককত্বের নিদর্শনই চোখে পড়ে। এই বিচিত্র প্রকৃতিই সৈয়দ হকের কবিতার বিশেষত্ব, ধারণা করি এ-বিষয়ে তিনি পুরোটাই সচেতন ছিলেন, কারণ নিজের কবিতা রচনার ক্ষেত্রে, অসহায় না থেকে করোটিতে বিচিত্র ভাবনার রূপ তিনি আগেই তৈরি করে নিতেন। নানা চেতনার বিচিত্র প্রকৃতির কবিতা অনুবাদের প্রতি তাঁর আগ্রহের কারণও তো তা-ই হবার কথা, এবং একথাও তো সকলের জানা যে এই অনুবাদগুলো তাঁর কবিতা না-লিখতে-পারা সময়ের কাজ হলেও এগুলোকে তিনি অনুবাদমাত্র মনে করতেন না, বলতেন : ‘এ-সকল অন্য ভাষার অন্য কবির লেখা হলেও এখন তারা আমারই উচ্চারণে আমার কবিতা বটে; আবার ঠিক আমারও নয়; যেনবা বিম্বিত তারা আমার করোটিতে—আমার অন্তর্গত জলের কম্পনে চূর্ণিত, স্থিরতায় আমারই বর্ণসংশ্লেষে ভিন্ন-রঞ্জিত’, তাই তাঁর কবিতার মূল্যায়নে এই অনুবাদগুলোও আরেক একক ও প্রণীত কর্ম হিসেবে বিবেচনাযোগ্য।
এরকম বিচিত্র এককত্বের সমাহারই সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আর এ-কারণেই সমালোচকের চোখে তিনি ‘পঞ্চাশের সবচেয়ে পরীক্ষাপ্রবণ’, বিশেষ-কোনো কাব্যাদর্শে অবিশ্বাসী, সৃষ্টিশীল যন্ত্রণায় অস্থির, ‘বৈচিত্র্যবিলাসী’ এবং ব্যক্তিত্বে স্বতন্ত্র—বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালার পর থেকে মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে এরকম একেক সময় একেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি আমাদের চমকিত করেছেন। তিনি যখন কথাসাহিত্য বা অন্য মাধ্যমে মগ্ন হয়েছেন তখন তাঁর কবিতার পাঠকও অন্যমনা হয়েছেন—হতে বাধ্য হয়েছেন—কিন্তু ফের আবার যখন পরানের গহীন কথা বলতে চেয়েছেন, ভালোবাসার দিনে ভালোবাসার রাতে ফিরে এসেছেন, মাইকেল এঞ্জেলো বা হাফিজের গজলকে নিজের-করে-নিয়ে ঘরে ফিরেছেন, তখন পাঠককে আবারও তাঁর দিকে ফিরে তাকাতে হয়েছে, কারণ ফিরে না-তাকিয়ে কোনো উপায় ছিল না।