সুরের কুমকুম
এখানে ফিদা হয়ে আছে বাতাস—
তোমার ঘ্রানে,
আমাকে দিয়েছে দিশা তোমার সফরের সুর
কেমন নরম হবে বলো রোদ আমাদের দেখা হবার দিনে?
সুর থেকে সুরে খালি সন্তরণ—
তবু আমি মনে রাখতে পারিনা লিরিক
তবু, দুনিয়ারও কারো কারো তুবা
গাছ থাকে— আমি যেমন থাকছি তোমার
আমাকে চাইতে বলো কতকিছু!
কুমকুমদানি আর রঙের তুলি
আরো কিছু রুশ অনুবাদ, তুমি ভুলে গেলে তবু বলি থাক ওসব এবার—
শুধু ভেঙেচুরে তোমাকে দিয়ো
আমার পাজরের ওপর—অন্ধকার ওমে
তোমার পাঞ্জাবীর রঙ যেনো ধুতে গিয়ে লেগে থাকে আমার নখে—
কত পারুলের গুনগুন আমার আত্মার ভিতর তোমার কথা বলে !
সারাদিন সারারাত ভরে কি সুর শোনাবো তোমাকে আমি?
পারুলের বনে ডুবে আমরা দুজনই
হবো প্রিয় আরশের শাদা ফুল—
২৩ ডিসেম্বর ২০২১
তাহাজ্জুদ
এই অন্ধকারের রাত!
হয়ত আকাশে কোথাও দুয়েকটা তারা খসে পড়ে—
মাবূদ,
এখন জেগে আছে শুধুই তারা যারা তোমার প্রিয়!
মাবূদ,
তারা জেগে আছে বিভোল বিলাপে—
তারা জেগে আছে ওয়াজিফার প্রতি হরফে হরফে—
দ্যাখো, তাদের স্বর কাপছে শিশুর ঠোঁটের মত টলটল আর কন্ঠার ভিতর শুধুই বিরহ করছে সুর!
তারা জেগে আছে বিনীত কান্নায়—
তারা জেগে আছে এক নিরুপম ঘরে—
যেখানে ছায়া আর মিঠা বাতাস একসাথে কেপে ওঠে তোমার জিকিরে!
কি এক দরদ নিয়ে বসে আছি মাবূদ!
শুধু ভাবছি ফানা হয়ে যাওয়া এই ক্বলবের কথা—
শুধু ভাবছি রাবেয়া বসরীর সাথে জেয়ারতের কথা!
এতটাই স্বচ্ছ বোধ হয় কখনও
যেনো ফুসফুসে শুনছি বাতাসের আসা যাওয়া—যেনো ধক করে জ্বেলে ওঠা এই অদৃশ্য নুরের কুমকুম হাতে নিয়ে দেখছি!
কি আর আছে এই পাপের মত জীবনে
তোমার মহিমা ছাড়া?
কি আর আছে মাবূদ তোমার সুকূন ছাড়া?
আহা!
কতকাল পর একটা দীর্ঘ নামাযে
মাবূদ, তোমাকে পেয়েছি
তোমাকে পেয়েছি নতজানু আত্মার গালিচায়—
তোমাকে পেয়েছি মৃদু
যেনো ফোটার আগেই মিলিয়ে যাওয়া বুদ্বুদ
যেনো আশ্বিনের আগেই শিউলির মরে যাওয়া—
ইচ্ছা করে সারাটা রাত ধরে বসে থাকি
এই মখমল জায়নামাযে!
ফোটা ফোটা ঝরে যাই সফেদ সিজদায়—
রাকাতের পর রাকাত নামায পড়ে যাই শুধু
যেনো মনে হয় অামি ধূলা ঝাড়ছি
আমি ধূলা ঝাড়ছি তোমার ঘরের গিলাফ থেকে—
আমি ধূলা ঝাড়ছি আমার আমলনামার মাসহাফ থেকে—
আহা শাদা বেহেশত! আমাদের রুহের ভিতর কী গভীর ভাবনার সুগন্ধ ছড়াও!
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
রাতের ট্রেন
আরো একটা সফর হবে তোমার সাথে
শাউনের রাতের ট্রেনে—
কি যে স্নেহের ভিতর আমাদের হাত ধরে থাকা! অাহা তালু ঘেমে যাবে
আহা মেঘের মত এক রাতে—
মুখোমুখি যতবার বসি ভাবি দুনিয়ার সব পাহাড়ের মাটি ফুলের গন্ধে ভিজে যায়—
আর লাল পালকের ভিতর যে ‘মখমখ’ নরম হতে হতে পায়রার পায়ের দিকে নিয়ে যায় সেখানে শুধু গোলাপের পাপড়ি ছড়ায় বাতাস—
আমি চিনেছি তোমার চোখের রঙ, নিবিড় কী যে! আহা তাকালে মনে হয় একটা নিঝুম বন আমার জন্য পেতে রেখেছে বিছানা আর হলুদ পাতা—
আমি বলে দিতে পারি তোমার দেহের ছায়া ছায়ার ভিতর কেমন পাখির বাসা!
আহা! কেমন নিনাদ যে ওঠে রুহে—
আত্মার আব্রু আমার!
তোমার চুল আর নখের ঘ্রান আলাদা আলাদা বলে দিতে পারি আমি—
২২ অগাষ্ট ২০২২
প্রগলভতা
এখন কত রাত! তুমি ঘুমায়েছো
তুমি ঘুমায়েছো আমার চুলের সুরভির মত মৃদু—যেনো ঘরে একটা বিড়াল হাটলেই তুমি জেগে যাবে—
আমি হাটি আর ভাবি বুঝি স্বপ্নেই আসবে আজ!
এমনও দিন কি আসে দুনিয়ায়?
আমার ভ্রম আমাকে অন্ধ করে রাখে—
পাখির ডানা আর পাহাড়ি বাতাস আমি ভুলে যাই
আমি ভুলে যাই সমস্ত দৃশ্য—রূপ আর ভঙ্গি
মর্মর পাথরের মত এই বুক তবু কেনো যে এত বার ভাঙে?
কত রাত ধ্যানের মত বধির আর আচ্ছন্নতায় গলে গেছে—
দূরে মিনারেটের আলোতে আকাশটা তোমারই শহরের বলে ভ্রম লেগেছে—
পুরান রুমালের মতই তো এই রুহ তবু কেনো এত সুবাস ছাড়ে?
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
আত্মার রেণু
হঠাৎ হঠাৎ’ই এমন নিস্তেজ হাওয়া বুঝতে পারি—
নিজের অস্তিত্বের ভিতর স্মৃতির স্ফুরণ ফুরায়ে যেতে থাকে—
প্রজাপতির পাখায় আর কোনো গ্লেজ থাকেনা, পাৎলা করে একটা ছবি ওঠে,
আবার মুছে যেতে থাকে—মগজে—
নাকি তার চে’ও আরো অনেক ভিতরের গোসতের লালায়? ছবি ওঠে—ছবি মুছে যেতে থাকে—
কখনও স্বপ্ন আর বাস্তবের ফারাক ভুলে যেতে থাকি, কথাগুলোর উৎস মূলত স্বপ্ন?
নাকি বাস্তব? বয়েসের সাথে দ্বিগুণ দ্বিধা বাড়ে—
স্বপ্নের ভিতর এক অনন্ত শূন্যে উড়ে যেতে মায়ের কেমন হালকা বোধহয়
খালি এই অনুভূতি’ই অচ্ছুৎ হয়ে থাকলো আমার কল্পনার ভিতর—
প্রাচীন অতিতের খুটিনাটি আর আমার বংশগত রোগের বিবরণগুলা মা জেনেছিলো—স্বপ্নে—
‘প্রামাণিক’ উপাধিটার ভিতর মন্দিরের ঘাম এখনও শুকায়না—
নয় বছর বয়েসি কিশোরীর চোখ নিয়ে পুরানত বাড়ির উতলা বৃষ্টির গন্ধ নাকে আসে—উঠান তলায়ে যায়—শাদা শাদা মৌরি ফুল—
সেদিন বিকালের ঘুমে আমি দেখে এসেছি ইয়াকুতস্কির রঙ
নিখুত নির্জন আর মতির মত শাদা—
আমার আত্মা ঘেমে যায় এই নোনাধরা বাড়িটার ঘ্রাণে—
দেয়ালে লেখা ঠিকানার বাকা বাকা হরফ আর সিড়ির শ্যাওলা সবুজ ভেলভেট হয়ে আছে চিরদিন—
আমার প্রাচীন অস্তিত্বের ভিতর—
আমি প্রতিদিন’ই ঘুরে আসি আমার মায়ের যুবতী সৌন্দর্যের জেল্লার কাছ থেকে—
আমার শৈশব আমাকে নিয়ে যায় খুব ঠাণ্ডা একটা মৃত্যুর কাছে—যেখানে পালক নাচানোর চেতনাটুকু আর বাকি থাকেনা—
এই পারদের পাৎলা পর্দার ছবিগুলা মূলত আমার আত্মার রেণু—
২ মার্চ ২০২২