১
ছুরির নিচে গলা পেতে দে’য়া রাজহাঁস জানতো না—ছুরি ছিল শুধু এক অজুহাত।
২
পাড়ার দোকানে একহাতে চুল আর অন্য হাতে প্যান্ট সামলাতে সামলাতে কোন হাতে বিস্কুট নে’য়া যায়—এই দ্বিধায় ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে নীতেশ। নিজের দিকে তো তাকানো যায় না, তাই তোমারে ভালোবেসেছিলাম। হঠাৎ গেয়ে ওঠা তোমার গানের পরে দুটো পাখি বসে থাকে। তুমি গান গাও। আমিও বসে থাকি। শ্মশানে মড়া পোড়ানোর লম্বা লাইনে মায়ের মৃতদেহের পাশে দাঁড়ানো সন্তানের দুর্দশা নিয়ে বসে থাকি। তুমি গান শেষ উঠে চলে যাও। নীতেশ তাকিয়ে থাকে। আমি বসে থাকি। মনে পড়ে—আজ সমাজবিজ্ঞান ক্লাসে ম্যামের চুল খোলা ছিল।
৩
সমস্ত মনোযোগ ভেঙে, বৃষ্টি নামে। তুমি বলেছিলে, যে দেশে বৃষ্টি হয় না, সেখানেও মানুষ গান শোনে। অঞ্জনের গান থেকে ডানদিকে মোড় নিলে এলভিস প্রেসলি আর বাঁদিকে টাউনহল। টাউনহলের সামনে রিক্সায় ঘুমিয়ে পড়া ক্লান্ত কোনও মুখে, শহীদ মিনারের সামনে খুলে রাখা স্যান্ডেলের ভুট হয়ে থাকায়, চায়ের দোকানে কেটে রাখা আদার টুকরোয়, লংয়ের বাটিতে ঝুঁকে পড়া অহরহ আঙুলে, বান্ধবীর ছোট করে কাটা চুলে তোমারে মনে পড়ে। মনে পড়ে—কোন গাছেই মানিয়ে নিতে না পারা হাওয়ার পা কীভাবে জড়িয়ে যায় পলিথিনে।
৪
জানালাগুলোকে আমার পোস্টকার্ড মনে হয়। রোজ কিছু না কিছু লিখে যায় সবাই। কেউ লেখে প্রিয়জনের নাম, কেউ ঠিকানা। এই যে রাস্তায় হুটহাট মানুষজন ঠিকানা জিজ্ঞেস করে, অমুকের বাড়িটা কোনদিকে, মন করে জড়িয়ে ধরি তাকে। অথচ নীতেশের কাছে রোজ সকালে কলতলায়, পাশের বাড়ির বউদির কাপড় কাচার অশ্লীলতাটুকু হলো মানুষের মন। এর থেকে কতোটাই বা দূরে যাওয়া যায়। যেভাবে সুতোয় বাঁধাপরা বোতাম তার একঘেয়ে যৌনজীবন থেকে দূরে যেতে পারে না। তাই ছিঁড়ে গেলে, কেউ কেউ কিছুটা জুড়েও যায়।
৫
নীতেশ গার্লস কলেজের দিকে ফিরে মাস্টারবেট করে। জানলা দিয়ে কারও চোখে চোখ পড়লে, সুন্দর করে হাসে। হাত নাড়ে। কিন্তু প্রতিবার শেষদৃশ্যে কেউ না কেউ ঢুকে পড়ে। হাত উঁচু করে তেড়ে আসে। নীতেশ প্যান্টের চেন লাগাতে ভুলে যায়। খোলা চেন নিয়েই সে চলে যায়। কিন্তু চলে যাওয়া কি এতোটাই সহজ? চলে যেয়েও তুমি কেমন থেকে গেছো! আমার মধ্যে, সন্তানহারা মায়ের স্তনের মতো।