কবিতা

রইদের ডায়েরি এবং অন্যান্য কবিতা

শূন্য

দেবদারুর ডাল হইতে ঘুঘু ডাক দিলে
আকাশের জমা সব শূন্য মালা হই উঠে!
হৃদয়ে আমি আর তুমিরে জায়গা না দিলে
কিবা আর রয়!
মহা ঐ শূন্য অগনন মালারূপে
ভাসায় ব্যস্ত না থাকলে
নক্ষত্রের আলোরে জড়াই না ধরি মাটির দিকে
পাঠাই দিত নাকি!

সম্পর্কিত

ট্রায়াল রুম

ট্রায়াল রুমে ঢুকি আর আমি বার হইতে
না পারি, দেখি সেইখানে মহাবিশ্বের ছদ্মবেশি একখানা আয়না,
আর একটা স্টিলের হ্যাঙার
তাতে আমার পুরানা পোশাকগুলি পাল্টাইয়া ঝুলাই রাখি ।
আমি বুঝতে পারি ঐ আয়না জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানের
যে ট্রায়াল রুম, আমি সেইখানে, এলিয়েনরা আসে,
তারা তাদের ধবধবা অমল ধবল মেঘের পোশাক পরায়
নিয়া যায় কদম ফুলের গন্ধ বিছানো
মহাবিশ্ব ছদ্মবেশি আয়নার গভীরে
পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখতে শুধু আমি ভুলি যাই!


রইদের ডায়েরি

একটু আগেই পার্কের ভিতরে থতমত নিয়োজিত ছিলাম।
এখন উদাসীন গাছগুলি ভিজতেছে।
সময় করি মেঘ সরুক।
হয়ত একটু পরেই কিছুর জেরে
আমি হই উঠবোনে!

পাখির ছায়া বৃষ্টিতে মিয়ায়ে গেছে।
পাখি ও পার্কের নিজস্ব শূন্য
আমার প্রকাশ্য অনুরাগী।
আকাশ ফর্সা করি লই আগে।
নাম না জানা প্রতিবিম্ব হারা অনেক কিছুরেই
আজ বোধ হয় চুমা দিতে হবে।
একটানা আমি কখনও টিকিনি!


মুরুব্বিদের সেকাল

একটা আরামদায়ক সেকাল ছিল
তার প্রত্যেক কোণায় জ্ঞানী মুরুব্বিরা বাস করত।
তারা ভাবত অবহেলা ভরে।
যেসব কবিতা মনে দাগ কাটে
এদেরে নিছক কোনো নরম শব্দ রূপে
পরজগত ফেরত পাঠায়েছে ফের।
এরা পৃথিবীর দুঃখী সুন্দরী ছিল একদিন
অভিমান বসে লুপ্ত হই গেছে!
গভীর রাতে বটের পাতার নিচে
কুয়াশায় কান পাতলে
কাদের অন্তর
শোনা যাইত!


মেঘের আব্বা –আম্মা

যখন ও খুব ছোট। ওরে নিয়া পাহাড়ে উঠি। ভাগ্য কি খারাপ পাহাড়ে উঠি
দেখি আকাশে কোনো মেঘ নাই। ছেলে বলে,
আব্বু-আম্মু হেন পাহাড়ে কেন আনলা যেইখানে মেঘ নাই।
ও তখনও সত্য/মিথ্যার পার্থক্য বুঝত না। ওরে বললাম,
বাবা, তোমার বাপ-মা যদি উড়াল দিই
এ পাহাড়েরতে আরেকটু উপরে উঠি, দেখবা দু-টুকরা মেঘ উঠতেছে!
ও কইলো, না, আমার মেঘের আব্বা-আম্মা দরকার নাই।
আমার ভয় করতেছে , আমারে জড়াই ধরো।
আমি কইলাম, হ বাবা, আমার ও ভয় করতেছে। মেঘ হই উড়তে গিয়া পাছে যদি ঝরি পড়ি। তখন তুমি আব্বু-আম্মুরেই আর পাইবা কই। চলো আমরা বাড়ি ফিরি যাই।
ও কইলে, হ, তোমরা আমারে বালিশের কভারের মতো প্যাঁচায়ে বেড়াই ধরো!

আপনার মতামত জানান

জহির হাসান

জহির হাসান; কবি ও চিত্রশিল্পী। জন্ম ২১ নভেম্বর ১৯৬৯, যশোর জেলার পাইকদিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে যশোর ও ঝিনাইদহের গ্রামে। লেখালেখির শুরু ৬ষ্ঠ শ্রেণি। প্রথম কবিতা প্রকাশ ১৯৮৪ সালে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্ফুলিঙ্গ পত্রিকায়। আগ্রহ ধর্ম, ভাষা, দর্শন ও চিত্রকলায়। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।