বই : রইদের ডাইরি
লেখক : জহির হাসান
প্রকাশক : ঘাসফুল
আড়াল
অভাঙা অশ্রুর ফোঁটা
গড়াক
নিচেরদিকে!
দেখি
ওর ভাগ্যে
—–কী ঘটে!
মেঘেরআব্বা -আম্মা
যখন ও খুব ছোট। ওরে নিয়া পাহাড়ে উঠি।
ভাগ্য কী খারাপ পাহাড়ে উঠি দেখি
আকাশে কোনো মেঘ নাই। ছেলে বলে, আব্বু-আম্মু
হেন পাহাড়ে কেন আনলা যেইখানে মেঘ নাই!
ও তখনও সত্য/মিথ্যার পার্থক্য বুঝত না।
ওরে কইলাম, বাবা, তোমার বাপ-মা যদি উড়াল দিই
এ পাহাড়েরতে আরেকটু উপরে উঠি,
দেখবা দু-টুকরা মেঘ উঠতেছে!
ও কইলো, না, আমার মেঘের আব্বা-আম্মা দরকার নাই।
আমার ভয় করতেছে, আমারে জড়াই ধরো।
আমি কইলাম, হ বাবা, আমার ও ভয় করতেছে।
মেঘ হই উড়তে গিয়া পাছে যদি ঝরি পড়ি।
তখন তুমি আব্বু-আম্মুরেই আর পাইবা কই।
চলো আমরা বাড়ি ফিরি যাই।
ও কইলে, হ, তোমরা আমারে
বালিশের কভারের মতো প্যাঁচায়ে বেড়াই ধরো!
বৃষ্টি ফোঁটা
নামতে নামতে কথা হইতেছে।
দুইটা বৃষ্টির ফোঁটা
তালগাছের মাথার দিকে নামতেছে-
বর্ষা ভাল্লাগে না! তাদের ঠান্ডা লাগতেছে
তারা আর ভিজতে চাইতেছেনা!
তাদেরএকটা নীল ছাতা
তাদেরএকটা হলদা ছাতা দরকার
একটা জামা দরকার
একটা বেবি ফ্রক দরকার।
তারা আর ভিজতে চাহে না
ওরা ছোট দুইজন
ওরা কেবলা শিশুতোষ দুইজন!
ট্রেন
দূরে তালগাছ, দুই ধারে ধানখেত
আমবন,
একটা মৌচাক ঝুলতেছে
আমি অন্য কারো স্বপ্নের ভিতর
ট্রেনের জানালায় বসি
দর্শক হই একবার
দৃশ্য হই একবার!
একদল বোবার কণ্ঠ পাথর চাপা পড়ছে
তারা সরাইতে গিয়া পাথর
তাদের কণ্ঠ খুলি খুলি পড়তেছে!
রাতের পৃষ্ঠায় অতিরিক্ত ট্রেন নিজেরে লিখতে আসি
মোড় নেয় যেই
মনে হয়
দৃশ্য হওয়ার যাতনা
ট্রেনের জানালাগুলিন কতটুকু বুঝে!
মেটামরফোসিস
বিছানায় পাশেশুই থাকা মেয়েটা
বসন্তকাল কবে আসবেনে সেই অপেক্ষায় থাকে।
কোন অকারণের পাগল আমারে একবার চুমা দিছিল
আমার জানলার ধারের সোনালুগাছের তলে।
আমি তাতে কবি হই যাই।
আর আমি বসন্তে মেয়েটারে চুমু দিলে
সে আরেকটা সোনালুগাছ হয়
জানালার ধারে!
দুইটা সোনালুগাছের তলে
আমি চিত্তক্ষয় করি
রাতদিন লিখি একটা কবিতার মাত্র দুলাইন!
তারা দোলায় তাদের হলুদ সোনালু ফুল আমার মাথার পরে!
চুমু তো উছিলা, দিব, কও
মানুষ হতে চাও কেন ফের সোনালুগাছ!
অপেক্ষা
গোপন যে জগৎ হইতে শব্দগুলা আসে
আমি সেইখানে ছিলাম
তোমার নাম একটা পাথরে লিখছি
তুমি হয়ত বাস্তব কোথাও করতেছ যাপন!
তোমার নাম লিখা পাথর সমুদ্রে ছুড়ছি
বারো বছর আগে
আজ বেলাভূমিতে গেছি যেই
সমুদ্র আবার ফিরায়ে দিছে সেই পাথর
আমি হাতে তুলে নিছি!
সমুদ্রও অপেক্ষাক রে
মরুভূমিও কান্দে!
শুধু তুমি…