কবিতা

মেয়েভালো হাওয়া এবং আরও কয়েকটি কবিতা

মেয়েভালো হাওয়া

তুমি কি মেয়ে-ভালো হাওয়া—!
চোখের দূর থেকে ভোরে
কে যেন ছিঁড়ে নেয় স্মৃতি
তর্জমার মতো করে—

সম্পর্কিত

এখানে অসুখের দিন—!
ভেড়ারা ধুন্দলমাঠে
হারানো তাকিয়ায় শুয়ে
কী যেন ভেবে দিন কাটে

টুপছে দুপুরের রোদ
বাতাসে ওড়ে সুরা ফিল
স মিলে নীরবতা ভেঙে
হঠাৎ নামে আবাবিল

তুমি কি মেয়ে-ভালো হাওয়া—!
খনার বচনের শ্লোক
ফসল নুয়ে পড়া চকে
বিবাহ আমাদের হোক—


ভালোবাসি তাকে

যে গেছে কোথাও চলে একদিন দূরে
আমি তাকে খুঁজি শিশিরে পাতার মতো
মৌসুমী বায়ু অতিরেকে বয়ে যায়
তার প্রেম জানি অনাদি ও শাশ্বত—
গমের হলুদ সিঁথানে এসেছে হাওয়া
যেন সমুদ্র ফুলে ওঠে অবশেষে
পানিতে জিকির করছে খোয়াজ খিজির
আমি দূরে আছি বহুদিন তারই দেশে—
শরমে আনত ট্যাঞ্জারিনের পাতা
কবুল বলার মতো বইতেছে হাওয়া
কাবিনের গায়ে কার সাক্ষর দোলে
মনে পড়ে তার দিগন্তে চলে যাওয়া—
সে কি আসবে না ঝরাপাতা পায়ে দলে
সে কি আসবে না নয়নাভিরাম রোদে
অবেলার যত কল্পিত মেঘছায়া
নেমে এসেছিল সহসাই প্রতিবোধে—
যেন হেমন্ত-বনের ভিতরে ট্রেন
চলে গেল একা হইসেল দিয়ে মেঘে
আমি শুনি নাই বনে ঝরে যাওয়া পাতা
মর্মর করে শব্দের অতিরেকে—

সে এসে যেদিন বসেছিল পাশে পাশে
যেন আরবির জজম-সাকিন-জের
এত সুন্দর হয়েছিল ভালোবাসা
তা কি প্রকাশ্য অহেতুক শব্দের?
আমি তার হাত ধরে হেঁটে গেছি পথে
ফুলার রোডের শিরিষ-ক্লান্ত রাতে
সে গেছে আজিমপুরের অন্ধকারে
ভালোবাসা ছিল অধীর-অকস্মাতে—
আমাদের ছিল কাটাবনভেজা গান
আমাদের ছিল ক্যালেন্ডারেই শীত
বাঙ্ময় এক প্রতিবেশ ঘিরে চাওয়া
গমের পাতায় বাতাসের সঙ্গীত—
সে ছিল তখন মহুয়া ফুলের স্বেদ
সংকেতকবলিত এক ছায়াদেশ
সম্মতিতেই আমি ছুঁই তার ঠোঁট
পরা-অপরার মায়াবীনি সন্দেশ—
সে ছিল ধানের মুকুলের মতো লীন
হাতে হাত রেখে হেঁটে যেত সন্ধ্যায়
আমি তার দিকে তাকিয়ে থেকেছি কত
এইভাবে কিছু অনিমিখ দিন যায়—
শস্যের বনে হাওয়া এসে দেয় ঢেউ
কোথাও একাকী পথ গেছে বহু দূরে
সে এসে একলা বসলেই তারাগুলো
একসাথে কেঁপে উঠবেই সুরে সুরে—
আমি তাকে ভালোবেসেছি, বাসি না আর?
সে গেছে চলে বিত্রস্ত এক মনে
যদি সে-ই আসে আবার কখনো ফিরে
ভালোবাসি তাকে বলব সম্মিলনে—


এমন ওশ ভরা সন্ধ্যা

কিন্তু কোথায়—এমন কণ্ঠিঝাড়
পলের ঠান্ডা ওশে
ঝরে পড়ে দিনের নিধুয়াগুলি

কেউ আসবে না—
কামারজানির ঘাটে সন্ধ্যায় গোসল ফুরালে
ভেজা কবরখানায়
নগ্ন ঠিলা উবুত হয়ে পড়ে থাকবে ম্রিয়মাণ

তারপর, শান্ত দিনের শীত
ট্রাকের পেছনে পেছনে উড়বে না ধুলা
কাঁচলে শিশুর দল
একা একা কথা বলবার ভারে
নুইয়ে পড়বে না রাস্তায়—

বিদ্যুতের তারে
কাদের হারানো কবুতর
একদিকে উড়ে গিয়ে
পাবে না আর নিমগাছটার কথা—

বাতাসে পাতা ঝরার গন্ধ
টের পাবো
মাটির লাল দেয়ালের চারপাশে
আতনার বাগানে যারা চলে গেছে একাই
তাদের হাতভর্তি পাখির ওম
ঘষে ফেলবো পিতরাজ গাছের ছালে
বার বার মুছে—

কিন্তু কোথাও
এমন ওশ ভরা সন্ধ্যা ফিরে আসবে না
কামারজানির ছায়ায়—

আপনার মতামত জানান

হাসান রোবায়েত

হাসান রোবায়েত; কবি। ১৯৮৯ সালে বগুড়ায় জন্ম। পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে, এমন ঘনোঘর ফ্যাসিবাদে, মাধুডাঙাতীরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।