কবিতা

‘মিস করি’ সিনট্যাক্সের বাইরে তোমাকে

২৯.

যেকোনো ওছিলায় আমরা কোথাও যেতে পারি। সারাদিন এই ঘরের মধ্যে ঘুম ঘুম আলো। একদিন যেতে পারি ওই ধলেশ্বরীর পাড়ে। যার ওইপাশে মুন্সিগঞ্জ। কারো বিয়ে ভাঙার শব্দ ভেসে আসছে অথচ ভিজে যাওয়া থেকে আমরা পা সরাতে পারছি না।

সম্পর্কিত

অনেক নদীর নাম জেনেছি বই থেকে—অনেক ট্রেনের হুইসেল। নিজেকেই চমকে দেব ভেবে ম্যাপ থেকে চিনে রেখেছি ট্যাঞ্জারিনের জন্মস্থান!

একদিন আজিমপুরের সন্ধ্যায় হেঁটে যেতে পারি। যে দুপুরগুলো আমাদের ভালো লেগেছিল সেগুলো নিয়ে আবার বসতে পারি পরীবিবির কবরের পাশে—যেখানে বৃষ্টিও মোঘল কায়দায় ঝরে। ছাদের ঘরটায় আজ কারা ঘুমায় এমন সামান্য কৌতুহল মাঝে মাঝে আপন মনে হয়।

কোথাও যাব না জানি তবু নাম ধরে ডাকলে ভালো লাগে। অধিকারে যে ফুল ফোটে তার ঘ্রাণ তোমাকে দেখাবো আজ—


৩১.

আমার যা কিছু ভালো—নাকফুল, সমুদ্রসাঁতার তোমাকে বাসতে বাসতে কেটে যাচ্ছে!

খুব মেঘ দেখার দৃশ্য হয়ে আছি আজ। পুরানা গলি ধরে হাঁটলে দেখা যাবে মেসবাড়িটায় আজ ছুটির দিন, বারান্দাজুড়ে ধোয়া কাপড়, কমলা চাদরে শীতের রোদ নরম হয়ে আছে। এমন দিনগুলোতে আমরা মোঘল সাম্রাজ্য ঘেরা রাস্তায় হেঁটে যেতে পারি। বসতে পারি নাম না জানা কোনো অপ্রতিম গাছের নীচে।

একদিন যেতে পারি দূর্গাদহ ব্রিজ পার হয়ে, আরো দূরে। সকালকে যারা সকালের চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারে না তাদের পিরালীর ঢালে কী উজ্জ্বল হয়ে ফুটে থাকে নয়নতারা ফুল! যেতে পারি ভুলোলাগা বাঁশবনীর ধারে, যেখানে ঢালু সন্ধ্যা নেমে যাচ্ছে! তোমাকে বলতে পারি এইতো রাত—স্বপ্নে নিজের লাশ কাঁধে আমিও দৌড়াই প্রায়ই! তোমার বেদনা আমি বুঝি—পাখি!

কোনো উপলক্ষ্য নাই—
তোমাকে বাসতে বাসতে আমার ভালো, মন্দ জীবন কেটে যাচ্ছে!


৩২.

তোমাকে ছোবো ভেবে আঙুলের ডগায় বসে হৃদয় কাঁপতেছে—


৩৩.

সাঁতার জানি না। তোমার ভেতর তড়পাতে গিয়ে বুঝি কিভাবে নদীর নাম জাদুকাটা হলো।

তবু জটিল কথা আমি বলতে চাই না কিছু। আমার জীবন এখনো পালং শাকের মতো সহজ। সবুজ।

তোমাকে বুঝতে পারি নোনতা স্বাদের চেয়ে দ্রুত।

কি এমন ঘটে প্রতিদিন, তোমার জন্য লিখে যেতে পারি। ভাতের মাড় গালতে পারি সহজেই। অনেক শব্দের মাঝেও তোমার ফিরে আসা স্পষ্ট বোঝা যায়। তোমাকে দেখাতে পারি সাধ। টিনের ঘর, শীতের চুলার পাশে খয়েরি উশুম।

আমি অনেকটা জীবন হতে চেয়েছি মুদি দোকানদার। যেন গোপন দুপুরে উত্তরের বাতাস আসবে, ছোট্ট মেয়েটার হাতে তুলে দেব সল্টেস বিস্কুট আর চার আনার বলাকা চকলেট। রাজমিস্ত্রির হাতে দেখেছি কি সুন্দর তালি লেগে যাচ্ছে যোগাযোগ।

তোমাকে ছুঁতে চাই বিয়ে-ভাঙা বিরহের থেকে বেশি

গান না পারলেও চুপচাপ ঘুম এসে যাবে
সমুদ্রে যাব না—তবু আমরা পাশাপাশি হাঁটলে কেউ কেউ ঢেউয়ের গর্জন শুনতে পাবে।


৩৪.

ভোর হলে হেঁটে হেঁটে চলে যাবো পূবপাড়ায়। শীত এখনো খুব গাঢ় হয় নি। ধোঁয়া ওঠা পুকুরের পাশ দিয়ে, বড় মসজিদ ধরে আমরা নেমে যাবো ধান কাটা মাঠে।

সরিষা আর আলুখেতের আইলে বসে মনে হবে, বয়স বেড়ে যাচ্ছে—এইটুকু ইঙ্গিত তোমাকে দিতে পারি।

তারপর, প্রতিটা সফর শেষে তোমার উজ্জ্বলতা চোখে পড়ে। যেভাবে ডেকে ওঠো, মনে হয় একটা শিশিরের ফোটা সরিষার ফুলে ভেঙে যাচ্ছে আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে হলুদ ঘ্রাণ!

কোনো রাতই আকাক্সক্ষার সমান দীর্ঘ হয় না। তবু আমরা খুঁট খুঁটে ভুলে যাওয়া গানগুলো আলাদা করি। তোমাকে বলি, কাঁথাফোঁড়ের মতো সহজ, ঘন হও। বয়স বেড়ে যাচ্ছে।

আমাদের একেকটা রাত খুব আলাদা ভঙ্গিতে ভোর হয়েছে। আর প্রতি ওয়াক্তে মখমল হয়েছে তোমার প্রভাব—
শীতের রোদে চেয়ে থাকা ফাটা ঠোঁটের মতোন

আপনার মতামত জানান

রুম্মানা জান্নাত

রুম্মানা জান্নাত; কবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।