১. চুইঝাল
শাশুড়ির রান্না করা গোসতের স্বাদ কাকে বলি?
চুইঝাল চিবতে চিবতে মসলার যুদ্ধ মনে পড়ে
আবার বাণিজ্যের কথাও
একদিন প্রেমকে ভেবেছি প্রার্থনা
অদৃশ্য মায়ার গল্প
তবুও নোঙড় করা জাহাজে
খাসাসির হাতে হাতে তা বাণিজ্য হয়ে গেছে
মাংস বিক্রির দৃশ্যের মতো
লাভের কড়িতে উঠেছে পড়েন-পাল্লা
তারপর
ভাঙনের পাড় ধরে হেঁটে গেছি
সুদূরের লগ্নি করা বেলায়
এখন যারা শিল্পবাণিজ্যের বিরোধী তারাও খ্যাতি চায়
কবিতার কাস্টমার বললে গাল ফুলিয়ে রাখে
এবং প্রচুর অকবিরা কবিকাবিষয়ক জ্ঞান দেয়
আমি কেবল চুইঝালের মূল্য নিয়ে ভাবি
স্বাদের ভেতর ঢুকে পড়ি
বাণিজ্য ও লাভের পলিসি মাথায় ঢোকে না
তবু আমার ব্যর্থতা বাণিজ্য হল না
তোষামদ না করতে পারার অযোগ্যতা কোথায় রাখি?
এ সবই কি আমার নিজস্ব কামাই?
এই জীবনের অর্থমূল্য কে জানে?
কার কাছে এ প্রশ্নের উত্তর পাবো?
এসব ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে যায়
আমার আজানের মতো সুরে সুরে
মধুর সুদূরে হারিয়ে যেতে মন চাই
কিন্তু দেখি কবিতা বোঝাই জাহাজ ফিরছে
রাজনীতির মাঠে হুইসেল বাজে
হলুদ বক্তব্য রাখা গোলগাল নেতারা
মোটা পাজামা খুলে দৌড়াচ্ছে
ঝিমুচ্ছে হাসপাতাল আর ধুকছে বিশ্ববিদ্যালয়
হাঁপাচ্ছে ফড়িয়া, দালাল, সাংবাদিক, ডাক্তার ও শিক্ষক
কারও অটুট দম নেই
তাদের ছায়া মাড়িয়ে ফর্সা রোদের ভেতর মিশে যাই।
২. আলোকায়ন
মানুষ আর কতটা জানে
জীবনের মানে?
মানুষের উন্নতি
অন্ধকার পাথরে আগুন
তারপর সভ্যতার গান
ইবনে সিনা থেকে আলভা এডিসন
পৃথিবীর আলোকায়নের আনজাম
কতটা হলো মানুষের উন্নতি?
সারা দুনিয়ায় আজ আলোর আঁধার
সেই শিকার, সেই গুহাঘর
মানুষ করেছে জয়, ভয়
মানুষ কী জানে
জীবনের মানে?
চারদিকে মানুষের ভয়াবহ
অকল্যাণ
কতটা এগুলো জ্ঞান
সক্রেটিসের মশাল?
অন্ধকারে দাঁড়ানো মানুষ
আলোর কথা বলে
চিরকালের নিয়তি এমন
৩. শূন্যে হাঁটা তারা
পায়ের নিচের মাটিকে অস্বীকার করা মানুষ
প্রকৃত পক্ষে আকাশে হাঁটে
সত্যের পুস্তক পাঠ করে, করে
তারা, পায়ে পায়ে তারা ঠেলে
সাহসের গান বাঁধে
জোছনার মুখে মুখে।
পায়ের নিচের মাটিকে অস্বীকার করা মানুষ
প্রকৃত পক্ষে আকাশে হাঁটে
অথচ তাদের স্তন্যপায়ী গান
পৃথিবী শোনে না, শোনে।
তবু বুকের উপর ভর করে
পিঠকে ডর দেখায় জীবন
তাদের খিলখিল হাসি
আমরা শুনতে পায় না, পাই।
সময়ের নাভি থেকে
জন্ম নেয়া নাকে
মসলার ঘ্রাণ
যেন বেত-বনে মাটি হওয়া
আমাদের নির্জন করব।
সত্যের পুস্তক পাঠ করে করে
যে সব বোকারা সাহসের গান বাঁধে
বুদ্ধিমানেরা তাকে বিনোদন
বলে ডাকে
আর শিশুরা কাঁদছে
চিড়িয়াখানা থেকে ফেরা দর্শক বলছে
পৃথিবী বিনোদনের ভাগাড়!
৩. ঘরের সন্ন্যাস
(এরশাদ সিদ্দিকীর প্রতি)
দিন শেষে সব সন্ন্যাসীরা ঘরে ফিরে যায়
যেন একটা তড়িৎপাখি।
ঘর আসলে একটা ধারণা
যেমন পাহাড় পর্বত সাগর
এসবও ঘরের মতো
যে যেখানে নিরাপদ ও শান্তি পায়
সেখানে আশ্রয় করে
সেটাই তো ঘর।
ঘর মানে প্রাণের প্রাচূর্য
আরাম আর বিশ্রামের কারখানা
হাসি আর ক্লেদের কাঁচামালও
তবু দিন যখন অন্ধকারে মিশে যায়
আলোকে গিলে ফেলে অন্ধকার
তখন শরীর ও মন
সঙ্গ ও সঙ্গীর খোঁজে অন্য প্রাণীর মতো সোক সোক করে
নাক মাটিতে ঘষতে ঘষতে
কারো ঘ্রাণ চায়
প্রত্যেক প্রাণের ভেতর সন্ন্যাস লুকিয়ে থাকে
তাকে আবিস্কার করতে পারে না অনেকে
যারা পারে তারা হয় ফকির
নয় তো রাজা
আমরা মরমের ফকিরি
আর মনের প্রজার গোলামি করি
তাই স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছি বৈরাগ্য
আমাদের প্রচুর আনন্দ-বেদনা আছে
এ ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই
৫. গদ্য কবিতার জীবন-যাপন
কবিতার মতো একটা জীবন
কেবল গদ্যে খরচ হয়ে যায়
তবু হায়
কে বা কাকে লিখে যায়?
কড়া ভাষায় চুমুর আবদার
চোখরাঙানি দুপুর
জলের মুকুট জমানো কচুপাতা
নারকেল পাতার চিকন ছায়া
স্নান শেষে কিশোরীর ছলছল গা
আমাকে পান করে রাখে
ঠাণ্ডা পানির মতো
শীতল পেটে
আর চিতল মাছের সরু পেটিতে
আটকে থাকে ধারালো বটি।
তবু রমণীর হাতে আলুথালু কাঁটারা চিৎকার করে
গদ্য কবিতার বাঁশি বাজায়
তখন আমরা পুরুষ পেঁপে গাছের মতোই
বেকামা ফুলের ভেতর লুকিয়ে থাকি
যেন সুপোরির মতো চোখেরা
পানের নেশায়
চুনের সমুদ্রে হাজিরা দিতে বলে
আর ঝিনুকের আসামি হয়ে
দাঁড়িয়ে থাকি ঠাঁই।
নিন্দুকের সকল তালা
সিন্দুকের চাবি হয়ে উঠে আসে হাতে
আর রূপকথার পুকুর থেকে
কুমারীর বিয়েতে যে রূপোর নৌকা ভেসে ওঠে
তাতে সোনার চামচ নিয়ে অপেক্ষা করে কবিতা
আহারে ডুবে যাচ্ছে কাঁসার বাটি-ঘঁটি!