বই : ভ্যানগগের হত্যাকাণ্ডে পর
লেখক : সোয়েব মাহমুদ
প্রকাশক : উৎসব প্রকাশন
ফিরে ফিরে আসবো
আত্মহত্যার পর আমার –
কোনও ঝড়ের রাতে লোডশেডিং
তোমার দেয়া রুহের মাগফেরাতে
আমি ফিরে ফিরে আসবো প্রিয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ –
তোমাকে জিজ্ঞেস করবো কতটা কৌশলে
প্রকৌশল বিদ্যা শিখলে তুমি-
জিজ্ঞেস করবো কতটা হাঁসছো তুমি বেনোজলে,
কতটা কাঁদছো শরণার্থী রোদে-
আর কিছু নয় – কিছু নয় হয়তো।
হয়তো
একেবারেই কিছু জিজ্ঞেস না করে চলে যেতে পারি,
একেবারেই স্পর্শ না করে
ক্যাকটাস আমি হেঁটে যেতে পারি, ছায়াদের মায়ায় ছায়ায়!
শুধু বুকপকেটে
মেরিলিন মনরো-সোফিয়া লোরেন-লিন্ডসে ওয়াগনার পাগলের মতো আর্তনাদ করলো,
চীতকার করে বললো চাররাস্তার পাগলটা
আত্মহত্যার পর আমি ফিরে আসতে পারি –
তোমার দেয়া রুহের মাগফেরাতে – বারবার
কোনও ঝড়ের রাতে – লোডশেডিং –
অনেকদিন পর
অনেকদিন পর তোমাদের পাশ থেকে সরে যাবার ,
অনেকদিন পর
মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যাবার অনেকদিন পর জানতে পারবে
একটা শুন্যচেয়ার ,
একটা গল্পের খোরাক,
একটা ভাঙা গ্লাস,
একটা পড়ে থাকা চায়ের কাপ,
নেই- কোথাও নেই।
তারপর- খুব ভোরের বাস
রাস্তায় দলিত মথিত লাশ
আঞ্জুমান মফিদুলের রোল নম্বর,
আর….
এই যে শুনুন….
দগদগে ক্ষত … ব্লটিংপেপার … বিস্কুট …. বাসাবো পুরাজিক মন্দির.. সিনেমা হলের গলি.. দক্ষিণ গোড়ান রোড নাম্বার ৩১.
আমার কখনওই কবিতা লিখবার কথা ছিলো না,
কোনদিনই না।
এখানকার চিত্র ভিন্ন- সকালের ট্রেন , বসে থাকা। মানুষ সরে যাবার শব্দ থাকে , চলে যাবার গন্ধ থাকে, খোজাখুজির আত্মীয় থাকে। অথচ একটা চিঠি লিখে আর পোষ্ট করা হয় না, মানুষ ; নেই।
চায়ের কাপ আধপোড়া সিগারেট গ্লিসারিন হীন কান্না ,শব্দহীন হা হা কা র । ভোরের জানাযায় সামিল একটা দুটো কাক- ছড়ানো পাউরুটি।
২০১৮- তেরোই আগস্ট
আছি’তো
আমি আছি, আমি আছি সেখানেই যেখানে রেখে
গিয়েছিলে তুমি। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টিতে পুড়ছি রোদে ভিজছি, হাতঘড়ি সাথে নেই সময় বলতে পারছি না।
আমাকে ছাড়িয়ে দীর্ঘ হয়ে যায় ক্যালেন্ডারের দিন।
আমাকে মাড়িয়ে হেঁটে যায় আমাদের ছায়া, বিগত দিনের ছায়া। আমি, আমি বুঝতে পারি না, আজও আজও বুকপকেটে.. নাহ, আমার তো শার্টের বুকপকেট থাকে না।
এ জীবনে ধরে রাখতে পারিনি কিছুই। শুধু হাত ফস্কে যায় আঙুলের ফাঁক গলে ঝ’রে পড়ে রক্তজবা ফুল।
আমি, আমি দাঁড়িয়ে, আছি – আছি ঠিক সে জায়গায়
যেখান থেকে চলে যায় একটা সন্ধ্যা – বেওয়ারিশ জীবন থেকে হেঁটে বেড়িয়ে যায় একটা রাত একটা চার শব্দের গান।
মাছগুলো মরে গিয়ে ডাঙ্গায় ভ্রমণপিপাসুদের ইতিহাস
বলে যায় অনবরত। মূখরা রমনীদের মতন তীব্র
ছোটাছুটির জিভ, বেদনার্ত মাঝরাতনীল অবয়বে কোনো কোনো কথা বলতে গিয়ে মাতাল হয়ে যায়।
আমি আছি, আমি আছি সেখানেই , যেখানে রেখে গিয়েছিলে তুমি।
নেবে কি নেবে না
আমি জানি সমুদ্র আমাকে নেবেনা,
আমাকে নেবে না বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা,
নেবে না শোকজীর্ণ রোদ,
তোমার আঙুলে জড়ানো শীত,
ঠোঁটে লেগে থাকা বর্ষা,
বুকের গন্ধে লেপ্টে থাকা হেমন্ত,
অথবা পরিপাটী শাড়ি তোমার মায়ের – কিছুই,
কোনকিছুই আমাকে নেবে না।
আমাকে নেবে না নিগুঢ় সন্ধ্যা-
কপালের ভাঁজে থাকা বিকেল।
তোমার কপালে জেগে থাকা সূর্যোদয়,
পিঠে বিন্যস্ত মধ্যরাত কিছুই আমাকে নেবে না।
আমাকে নেবে না ক্যাকটাস,
নেবে না রক্তজবা ,
নেবে না জিইসির মোড়, শিল্পকলার রাস্তা,
বিনোদপুর বাসস্ট্যান্ড,নীলফামারীর আকাশ,
প্রেসক্লাব – মনা ভাইয়ের চায়ের দোকান,
মোহম্মদপুর সেলিম কাবাব – মেডিকেল মোড়,
রাত আড়াইটায় কাঁপতে থাকা ভুরুঙ্গামারীর কুয়াশা –
অমন সাড়ে সতেরশো নারীর পদভাঁজে
থাকা আমার হৃদয়,
আমাকে নেবে না, ঘাসের ডগায় মুক্তি
অথবা আঙ্গুলে বাঁধা শেকল কিছুই নেবে না আমায়।
আর তাই আমি অভিধানের পাতায় থাকা উপেক্ষা ,
যাকে আজ অব্দী কেউ খুলে দেখেনি,
জড়িয়ে ধরেনি প্রবল মমতায় ভালোবাসায়,
হাহ আমাকে নেবে না পরম মৃত্যুও ,
আয়ুরেখায় ভেসে ওঠে তাই-
একাকীত্ব শব্দের একমাত্র প্রতিশব্দ সে তো আমি,
আমিই এক।যেনো ভেঙে যাওয়া ডিমের কুসুম।
চোখ বুজে আসা ক্লান্তিতে তাই
ব্লাউজের তিন বোতামের জীবন চিতকার করে বলে
আমি মূলত
সেই নারীকে ভালোবাসি যে আমাকে ভালোবাসে না।