কবিতা

বেপথু এই পথে এবং আরও চারটি কবিতা

বেপথু এই পথে

উঁহু, আমি গাছ নই;
যেহেতু বাতাসের সাথে গূঢ় সম্বন্ধ হেতু
………………….গাছেরা স্থানান্তর জানে।

সম্পর্কিত

বলতে পারো আমি অনেক বৃষ্টিতে ভিজে,
অতঃপর প্রখর রোদে পুনরপি শুকিয়ে
………………….খরখরে কাঠ।

আমাকে ইচ্ছে হলেই তুমি আহ্লাদ করে
ঘরের আলনা বানাতে পারো,
কিংবা বানাতে পারো বসার চেয়ার।

ভালো রং, বার্নিশ হলে
তোমার বন্ধুদের হাততালি পেতে পারো।

তারপর অনেক ব্যবহারে জীর্ণ হলে একদিন
ভেঙে টুকরো টুকরো করে
ফেলে আসতে পারো
ময়লার ভাঁড়ারে।


রৌদ্রস্নানের বদৌলতে

আকাশে রোদ চড়ে উঠেছে।

সমুদ্রের ধারে রৌদ্রস্নানের আশায় তুমি খুলে ফেলেছো
আলোর শরীর থেকে উপকথার সেই মনোরম হলুদ বিকিনি।
আর এই দৃশ্যে চরিত্রহীন সমুদ্র ফুঁসে উঠে ঢেউয়ের এক ছোবলে
কেড়ে নিল আমাদের সমস্ত পরিধেয় জামাকাপড়।

মুহূর্তে আমার সামনে উন্মোচিত হলো আরেকটি সমুদ্র; ফেনিল

জামাকাপড় হারানোর সুখে আমি সমুদ্রে নামছি,
ঝড় প্রখর হলে তুমি হাত শক্ত করে ধোরো


একই আকাশের নিচে

কতদিন গেল, বিচিত্রা, তোমাকে দেখি না আমি
আমাকেও দেখো না আর তুমি।

তাই বলে এই নক্ষত্রপুঞ্জ থেমে নেই;

ফুল থেমে নেই, বৃষ্টি থেমে নেই, পাখিরা থেমে নেই;
জেলে ও মাছের চতুরতা থেমে নেই,
জল ও নৌকোর খুনসুটি থেমে নেই,
অবিরত যুদ্ধ ও পরস্পর শান্তিচুক্তি থেমে নেই,
থেমে নেই কোনো কিছুই,
এমনকি তুমিও থেমে নেই।

সব কিছু চলছে ঠিকঠাক;

দূরে-বহুদূরে গভীর সঙ্গোপনে সবুজের বন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে,
দগ্ধ পাতারা ধোঁয়া হয়ে আকাশে জটলা পাকাচ্ছে;

পত্রিকা বলছে-এবার কুয়াশা বেশ পুরু


অনাহূত

আমার জুতাগুলো ছিঁড়ে গেছে বহুদিন হলো;
অগ্রজ শেষবার খুব আদর করে চুল কাটিয়ে দিয়েছিলেন,
তারপর আর নরসুন্দরের ঘরমুখো হইনি;
যে কয়টি শার্ট ছিল সেগুলোও জীর্ণ হয়ে উঠেছে
বয়স্ক উটপাখির মতন।

কোথাও গেলে আজকাল আর আমাকে কষ্ট করে
কথা বলতে হয় না;
ছেঁড়া জুতো, বহুদিনের চুল আর জীর্ণ শার্ট
আমার হয়ে কথা বলতে শুরু করে।

কী কথা হয় দু’পক্ষের মাঝে আমি খুব বুঝে উঠি না;

মাঝে মাঝে শুধু তৃতীয় পক্ষ আমার বন্ধু পলকে বিমর্ষ দেখি—
যখন বারবার বোঝানোর পরও ওর কুকুরটি
আমাকে ওদের বাড়িতে ঢোকার ছাড়পত্র দিতে অসম্মতি জানায়।

এই হিমে, ঘ্রাণে

তোমার ওখানে খুব গরম পড়েছে বুঝি।

বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখছি—
তুমি শরীরে পাউডার মাখছো।

পাউডাড়ের স্পর্শে তোমার লোমকূপ হতে
ফুটে উঠছে হরেক ফুলের পাপড়ি।

তোমাকে ঘিরে উল্লাস করছে হাজারো প্রজাপতি—
ছড়িয়ে পড়ছে নাম না-জানা সব ফুলের ঘ্রাণ।

ওই ঘ্রাণ টেলিভিশনের পর্দা দিয়ে
আলোক তরঙ্গাকারে প্রবাহিত হচ্ছে আমার ঘরময়।

আরেক মহাদেশে বসে এই তুষারপাতের দিনে
তোমার শরীরের ঘ্রাণে আমি ঘেমে উঠছি।

ঘন আমাজন বনে
ফুঁসে চলেছে একটি প্রাগৈতিহাসিক পাইথন।

আপনার মতামত জানান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।