কবিতা

বিষাদাগার এবং আরও চারটি কবিতা

বিষাদাগার

যে বেদনা তোমারে মানুষ দিতে পারে তার কাছে নত হয়ে তুমি গাছ হবার কথা ভাবো। যে আঘাত তোমারে মানুষ দিতে পারে তার কাছে নত হয়ে তুমি নদী হবার কথা ভাব। যে ক্ষত তোমারে মানুষ দিতে পারে তার কাছে বিদুর হয়ে তুমি পাখি হবার কথা ভাব। যে কপর্দকশূন্যতা মানুষ তোমারে দিতে পারে তার কাছে নীচু হয়ে তুমি অন্য জীবনের কথা ভাব।

সম্পর্কিত

আর এক জীবন পরে তুমি দেখো উদ্যানে ঝুঁকে আছে নিরাভরণ পাতাদের শুষ্ক, মর্মর দেহ। নদীর বুকে কাঁপছে অজস্র দস্যু নৌকা। তীরে জনপদের বারোয়ারি যাপন।


কোবাল্ট

ঘুরে ঘুরে কত আজ তুমি চূর্ণ তারা
মানুষের মমতার মত গেছ ক্ষয়ে

জীবাশ্মের খেরো শরীর বেয়ে ধীরে
মরা নদী চুপসানো কথার মত দোলে

এসে দেখো
বিগত স্মৃতি
সাপের ফণা হয়ে চেয়ে

মাটির উর্বরতায় লেগে আছে মানুষের ঘাম
শকুনের ডানা দিন গোনে চুপ করে

উল্কা শরীর –
দূরে আরও দূরে মেঘ মাথায় ছুটছে গরুর পাল


আত্মপ্রসঙ্গ

তোমাকে ছুঁয়েছি ব্যথার অনুদানে
বালির উত্থান ঘিরে বাতাসের নিনাদে
ভেঙে পড়া চোখের নীচে, চরাচর

আমার ঘূর্ণির ভেতর
সন্ধ্যানদী শ্বাস ধরে রাখে স্রোতে
দিয়ে নৌকা প্রতিশ্রুতি পারাপারে

সকল আত্মপ্রসঙ্গে রটে গেছো তুমি
পাশে জাগা সেসব ভোরবেলা –
আমি জানবনা, আমার অজস্র মৃত্যু তোমার নতুন জীবন
আমি জানবনা,আমার সারাদিন ঝুম বৃষ্টি তোমাকে দিয়ে যাবে রোদ ভরা দিন
আমি জানবনা, আমার অসুখে তোমার রোগমুক্তির সুখ

শুধু চলে যাব, যেতে যেতে বহুদূর, যে দরজার ওপাশ আর কথা বলেনা।


বল্কলহীন

নীলের তলায় পোড়া পোড়া খন্ড খন্ড দেহ
ঝলসে গেছে তিরস্কারে, অবমাননায়
মিথ থেকে বাস্তবতায়

যত যাই নামে ডাকো –
শেষ পর্যন্ত সকলেই বর্গি
বয়েস পার হলেই পরিষ্কার হতে থাকে আকাশ

দূরে যাই শুধু দূর
মুখ ফিরিয়ে রাখি
ভাবি –
আশ্বিনের কোনও মাঠে
তোমার হৃদয়ে কাঁশ হয়ে দুলছি।


বসন্ত বিবাদ

তোমার সাথে আমার কোনও বসন্ত নাই, কলহ আছে

আছে-
পার করেও পার করা যায়না এমন দূরত্বে
ধুরন্ধর হাওয়ায় নিরুদ্বেগ উড়া পাতার নিনাদ

আমি তো বাতাস বেয়ে গড়িয়ে পড়া ফুলের ঘ্রাণে
রাষ্ট্রবাহী শবের প্রতীক
চিৎকারে চিৎকারে গুম হয়ে যাওয়া বাকে্র বাঁকে
আমার শরীর স্রোতের খড়কুটো
মাছেরা ঠুকড়ে খায়

আমার কোনও বসন্ত নাই
পাখিরা গায়, ধুলো ওড়ে
তোমাকে করা ফোন কেটে যায়
সহজ যোগাযোগের দিনে দুর্বল হয়ে থাকা সেতুটা ভেঙে যায়

ছড়া কাটার ছলে আমাদের কেটেছিলো যে সাপ
আমি তার বিষ বয়ে বেড়াই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর

হয়তো কোনও বসন্তে
তোমার মত কেউ আসে
আমি সেই ঠোঁটে ক্ষত রাখি

আমি ভয় পাই, আমি দেখি
তারও কোনও বসন্ত নাই
আছে –
নিরুদ্বেগ হাওয়ায় উড়ে যাওয়া পাতা, ধুলোর ঝড়।

আপনার মতামত জানান

অনুভব আহমেদ

অনুভব আহমেদ; জন্ম ১৯৯৩ সালের ৫ই নভেম্বর। বেড়ে ওঠা সিলেটে। প্রকাশিত কবিতার বই 'মৃৎফুলের নকশা'।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।