বাবা
আমাদের ক্ষুধার সমান ওজনের ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন বাবা। গলির ভিতরে সিগারেট খাচ্ছিলাম।
ব্যাগটি নিজের হাতে নিয়ে একসাথে যেতে পারতাম! যেহেতু বাবার গরীব সঙ্গতা আমার ভালো লাগে না,
দ্বিতীয়তঃ সিগারেটটা দামী, অন্তত বাবার দরিদ্র হাঁটা থেকে!
দাম যত বেশি মায়াও ততোটাই।
তাই আমি লুকিয়ে পড়ি।
কার থেকে লুকিয়েছিলাম জানি না!
বাবার মৃত্যুতে আমার কান্না আসবে না ধারণা করি,
তখন আমি কোথায় লুকাব নিজেকে?
আমি ঢুকে পড়ি গলির আরও অন্ধকারে।
আমার ঐ ভয়ের সমান ওজনের ব্যাগ নিয়ে বাবা বাড়ি ফিরছেন,
চামড়ার ভাঁজ ঠেলে শিরা-উপশিরা গজিয়ে উঠছে।
মায়ের মুখ যেনো মহাজাগতিক অন্ধকার,
আলোতে মায়ের মুখের দিকে তাকানো যায় না। চোখগুলো মরা মাছের চোখের মত,
চোখে লাগে!
আমার মা আরও সুন্দরী হতেন যদি!
-এমন আফসোসের ভার বাবার ব্যাগের ওজনের চাইতে বেশি সিগারেটের চেয়ে কম।
বাবা যে-সকল সিগারেট খান সেগুলো উদ্ভট গন্ধের, একবার বালিশের নিচ থেকে মেরেছিলাম এক শলা! বাবার রুচি জঘন্য!
একদিন যদি এক প্যাকেট বেনসন অ্যান্ড হেজেস কিনে দিতে পারতাম লোকটাকে!
মেটাফিজিক্স
গতকাল যে মারা গেল, আমি যেতে পারিনি!
আজ তার সাথে দেখা!
হাতে একব্যাগ আপেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, জানতে চাইলাম- মৃত্যুর স্বাদ কেমন?
আমার হাতে একটি আপেল ধরিয়ে দিতে-দিতে বলল- তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম, দুঃখিত, মৃত্যুর খবর দিতে পারিনি বলে রাগ করো না প্লিজ ।
গন্তব্য
ন্যাপথালিনে জিইয়ে রেখেছি বাবার চাদর,
খয়েরি রঙ,
কাশ্মীরি বলে চালিয়ে দিয়েছিল মফস্বলের দোকানি।
মাইনাস টু ফাইভ চশমাটা সবচেয়ে ভালো দেখে অতীত, আমার তো চোখ নেই, স্মৃতি আছে। স্মৃতির সিনেমায় বাবা হেঁটে যাচ্ছেন, তার আঙুল থেকে চুইয়ে পড়ছে আয়ু।
আমি আয়ু ধরে বেহেশতের ঘ্রাণের দিকে যাই।
একসময় পিছন ফিরে দেখি সেই কবে বাবাকে পিছনে ফেলে চলে এসেছি একা!
আত্মহত্যা ও নরওয়েজিয়ান উড
আত্মহত্যা একটা চমৎকার বিষয়!
ভীষণ নাথিংনেসের ভিতরে বসবাস করার দারুণ অভিজ্ঞতা।
এই যে উড়িয়ে দেবার মতো যেকোনো আবেদন,
যেকোনো ক্ষতে নির্ভাবনা,
হাতের তালুতে মহাজগৎকে বিগ ক্রাঞ্চের নিরর্থক বিন্দু করে দেবার অভূতপূর্ব আনন্দ-
আমি তাকে বলি প্রতিভামুখর মৃত্যু।
যারা প্রতিভাবঞ্চিত,
ভীতু ও লোভী।
যারা মারা যাবে জেনেও অমরত্ববোধ নিয়ে বয়স গুনছে; তারা তো প্রপঞ্চপূর্ণ নিরর্থক ভ্রমে ঠাসা কঙ্গাল।
সাইকোডেলিক বাজতে থাকবে,
তারপর কোহেন;
তারপর রজেস বাজাবে সাইলেন্স অব হেভেন
আর তারপর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দিকে কৌতুকপূর্ণ তাচ্ছিল্য রেখে স্মিত হাসতে-হাসতে ঢলা পড়া মৃত্যুতে !
যারা বেঁচে থাকার ভিতরে হারিয়ে গিয়েছে;
তারা নরওয়েজিয়ান উড।
তারা জানেনা করতালির ভিতর দিয়ে কীভাবে চেস্টার বেনিংটন আত্মহত্যার সাথে হ্যান্ডসেক করে।
আমি তাহাদের ভালোবাসি।
আমি তাদের ঈর্ষা করি।
যারা জীবন বুঝার পর মৃত্যুকেও বুঝার সময় করে উঠে।
কোয়ান্টা
আয়ু মূলত স্মৃতি!
কচ্ছপের ক্যালেন্ডার নেই, তারা তো জানেনা দুইশত বছর ঠিক কতটা সময়! ম্যাকানিজমে আটকে আছে জীবনের ঘুরপাক।
ডাঙা থেকে জল;
ফুল ফোটে, মানুষ ফোটে,
মোমেন্ট থেকে মোমেন্ট!
রিকনস্ট্রাকশন,
বেশির ভাগ ভুলে যাওয়া, খানিক স্মৃতি
-যার নাম জীবন।
রেডিয়ো কার্বনে বয়স জানলে অতীত দেখা যায়।
তবে স্মৃতির বাইরে যেটুকু বেঁচে থাকা-
প্রকৃত ভাবনায় মৃত্যু এমনই বিষয়,
যেহেতু যা অভিজ্ঞতায় নেই।
আর যা নেই স্মৃতিতে,
দুটো ব্যাপার প্রায় একই।
তাই আয়ু হলো স্মৃতির কোয়ান্টা
আর বেঁচে থাকা হলো মুহূর্তের প্যাকেট।