সমসাময়িকের কাছে তিনি করিম ভাই, ভক্তদের কাছে করিম শাহ বা শাহ করিম অথবা বাউল করিম, লোকগবেষকদের কাছে বাউল সম্রাট আবদুল করিম হিসেবে খ্যাত। নিজের কাছে ফকির করিম। আর আমাদের কাছে তিনি করিম চাচা। যখন এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি তখন দু’চার দাঁতই ছিলো তাঁর সম্বল। চেহরায় ভাঙন শুরু হয়েছে। চামড়া কুঁচ-কুঁচ। মাথায় যে কয়টি চুল তাও পাটের মতো। সাদা পাঞ্জাবি-লুঙ্গিতে খাঁটি বাঙালি। কিছুদিন আগেও তিনি শুধু বৃহত্তর সিলেটের গ্রামের বাউল-মরমি গান শোনা মানুষের কাছে শ্রদ্ধেয় ছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি তাঁর গান নিয়ে সিলেটের প্রান্তিক অঞ্চলের সীমা ডিঙ্গিয়ে একুশে পদক নিয়ে পৌঁছে গেছেন গোটা বাংলাদেশে। শহরবাসী আধুনিক মানুষেরা এখন তাঁর মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন। সিলেটের শেকড়সন্ধানি লেখক-সাহিত্যিক মহলে তাঁর প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আগেও ছিলো, এখনও রয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে তাঁর দিকে যেভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো, আমরা তা পারিনি। রাজধানি কেন্দ্রিক পত্র-পত্রিকাগুলোর উপেক্ষা অনেকটা দৃষ্টিতে লাগার মতো। বেশিরভাগ পত্রিকাগুলো যেনো প্রতিভা নয়, ক্ষমতা আর প্রভাবের সন্ধানে, কিংবা ‘খাতিরের ছন একগল্লা কম’, আর সাধারণভাবে তারা এই প্রতিভাকে মূল্যায়ন করে থাকেন যা বিশাল সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা ডিঙিয়ে নৌ-বন্দরে এসে নোঙর ফেলেছে। আর ‘বার্ণাড শো’ তো এই জন্যই নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। নোবেল প্রত্যাখ্যানকালে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিলো— ‘আমার নৌকাতো তীরে নোঙর ফেলে দিয়েছে, আমি তোমাদের অনুদানের প্রত্যাশি নই। যে এখনো সমুদ্রের মধ্যখানে, সম্ভব হলে তার দিকে সাহিয্যের হাত এগিয়ে দাও।’ অতি-বিলম্বে হলেও শাহ আব্দুল করিম একুশের পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি এক অবহেলিত গ্রাম্য কৃষকের ছেলে, প্রথম জীবনে নিজেও রাখালি পেশায় ছিলেন, লেখাপড়াও নিজের প্রচেষ্টায় মাত্র বর্ণ অক্ষর। এতো শূন্য থেকে শুরু করে গান লিখে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার ‘একুশের পদক’ লাভ। কতটুকু প্রতিভা থাকলে সম্ভব? তা বিবেচনার দাবি রাখে। শাহ আব্দুল করিমের প্রতিভা অলৌকিক বলেই তিনি সারাজীবন মাটির কাছাকাছি থেকে মাটি ও মানুষের কথা লিখে গানের জগতে ধ্রুবতারার মতো একটা আসন করে নিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ধল গ্রামে ১৩২২ বাংলার ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার (১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি) শাহ আব্দুল করিমের জন্ম। শাহ আব্দুল করিম তাঁর জন্মের তারিখ সম্পর্কে বলেন, ‘তেরোশো বাইশ বাংলায় জন্ম আমার / মা বলেছেন ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার।’ কালনী নদী কিংবা ধল বাংলাদেশের গানপ্রিয় মানুষদের কাছে খুবই পরিচিত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মে। তাঁর সমাধিও ধল গ্রামে। বহু আগ থেকে ভাটির মানুষের কাছে ‘ধল মেলা’র জন্য এই গ্রাম খুব পরিচিত। এই মেলা কবে থেকে শুরু তা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। এই মেলা সম্পর্কে শাহ আব্দুল করিমের বক্তব্য- ‘জানি না কবে থেকে আরম্ভ হয়েছে/পূর্বে ছিল মেলা এখনো রয়েছে /পঞ্চাশ বছর পূর্বের কথা আজও মনে পড়ে/বসিত এই তীর্থমেলা কালনী নদীর তীরে।’ মেলার তারিখ সম্পর্কে শাহ আব্দুল করিম বলেন, ‘মেলা হইত ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার/চারদিক থেকে লোক আসিত হাজার হাজার।/মেলা আসিল বলে পড়ে যেত সাড়া/ঘরে ঘরে তৈয়ার হইত মুড়ি আর চিড়া।’ মেলার পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গ্রামবাসী সবাই মেলার প্রস্তুতি নিত/ একে অন্যেরে তখন সুদমুক্ত ঋণ দিত।/এই সময় ঘরে ঘরে আসিত নাইওরি/মেলা যোগে অতিথি এসে ভরে যেত বাড়ি।/আসতেন তখন বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন/মেলা যোগে হইত এক আনন্দ মিলন।’
সেই সময়ে ধলের অর্থনৈতিক অবস্থা শাহ আবদুল করিমের এই গানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে; ‘চিড়া-মুড়ি দধি-দুগ্ধে নাস্তা সবাই দিত/তারপরে কী খাওয়াবে সেই ব্যবস্থা নিত।/দই দুগ্ধের অভাব ছিল না গ্রামবাসীদের/দুগ্ধ তখন বিকাইত দুইআনা সের।/শাক-সবজি ও মাছের তখন অভাব ছিল না/সাধ্যমত সবাই সেদিন খাইত ভালো খানা।’
ধল বা দিরাইয়ের সাথে আমাদের তিন পুরুষের আত্মিক সম্পর্ক। আমার মায়ের দাদা সিলেটী নাগরি বর্ণের মহাকবি পির মজির উদ্দিনের প্রচুর শিষ্য-ভক্ত সেখানে ছিলেন। শাহ আবদুল করিম বেঁচে থাকতে আমার দিরাই বা ধল যাওয়া হয়নি। আমি প্রথম দিরাই যাই ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর। সেদিন সম্ভবত ছিলো কোরবানি ঈদের পরেরদিন। দাওয়াত করেছিলো আলমগির। আলমগির হলো ধলের আব্দুল আলীর ছেলে। আলমগিরের মা-বাবা আমার নানা মরমী কবি পির মনফর উদ্দিনের শিষ্য। এরপর বারবার যাওয়া হয়েছে। করিম চাচার ছেলে নুর জালাল ওরফে বাবুল ভাই বাড়ি থাকলে এবং আমি সময় পেলে তাদের বাড়িও যাই। বাবুল ভাইয়ের বউ আমাকে ভাই ডাকেন। আমার ছেলে মুজাদ্দিদের সাথে তাদের খুব ভালো সম্পর্ক। তারা মাঝেমধ্যে আমাদের বাসায় আসেন।
দিরাই থেকে ধলে যেতে পথে বিশাল হাওর, যা অতিক্রম করতে হয় বর্ষায় নৌকায় এবং হেমন্তে গাড়িতে। ধলের মানুষের প্রধান জিবিকা কৃষি। ধল বা দিরাই-এর কৃষকদের কষ্টের কথা শাহ আব্দুল করিমের বিভিন্ন গানে উল্লেখ রয়েছে। যেমন তিনি এক গানে বলেন—
‘হাড়ভাঙ্গা খাটনির বলে জমিতে যে ফসল ফলে / হয়তো নেয় বন্যার জলে নইলে নেয় খরায়।/মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বছরে এক ফসল মিলে/সে ফসল নষ্ট হইলে প্রাণে বাঁচা দায়।/আসে যখন বর্ষার পানি ঢেউ করে হানাহানি/গরিবের যায় দিন রজনী দুর্ভাবনায়।/ঘরে বসে ভাবাগোনা নৌকা বিনা চলা যায় না/বর্ষায় মজুরি পায় না গরিব নিরুপায়।’
শাহ আবদুল করিমের পিতা ইবরাহিম আলি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক ছিলেন। তাই আবদুল করিম যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে জীবিকার তাগিদে শুরু হয় তাঁর রাখাল জীবন। তিনি নিজেই লিখেছেন— ‘গরীবকুলে জন্ম আমার আজও মনে পড়ে/ছোটবেলা বাস করিতাম ছোট্ট এক কুড়ে ঘরে।’ এই যে কুড়ে ঘরের কথা শাহ আব্দুল করিম তাঁর গানে বলেছেন, এর অবস্থা এতোই করুন ছিলো যে, বৃষ্টির দিনে মাঝেমধ্যে ঘরের ভেতর ছাতা ব্যাবহার করতে হতো। শাহ করিম তাঁর রাখাল জীবনের কথা প্রায়-ই বলেন; গানে এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়। গানের ভাষায় আমরা তাঁর কাছ থেকে শোনতে পারি এই কথাটা। তিনি ‘ভাটির চিঠি’ গানে লিখেছেন— ‘ছেলেরা মাঠে চড়াইতো গরুর পাল।/আজও আমার মনে পড়ে সে জমানার হাল।।/রাখাল বাজাইতো বাঁশি আনন্দে তখন।/সে রাখালদের মধ্যে ছিলাম আমিও একজন।’
তখন ছিলো বৃটিশ শাসন। বৃটিশদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে নাইট স্কুল গড়ে উঠলো, আবদুল করিম তাতে ভর্তি হলেন। বর্ণ অক্ষর শিখলেন, যুক্ত অক্ষর লেখাপড়া শিখলেন। এর মধ্যে ছাত্রের অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলো। আবদুল করিমের একাডেমিক লেখাপড়া এখানেই ইতি। এরপর গানের জগতে পদযাত্রা। বৃটিশ ভারতে জন্ম নিয়ে শাহ আবদুল করিম গানের জগতে হাটতে হাটতে পাকিস্তান হয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশকে পেয়ে যান। না, তিনি ক্লান্ত হয়ে বসে থাকেননি, বাংলাদেশেও হাটতে থাকেন দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে করে নিজের কক্ষপথে। তবে দারিদ্রতার অজুহাতে শাহ করিম বিবেকের সাথে প্রতারণা করে আপোষ করেননি কোনো ক্ষমতাবান কিংবা বিত্তশালীর সাথে। তাঁর ভেতরে অহম ছিলো, প্রখর আত্ম-মর্যদাবোধ ছিলো। তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন দারিদ্রতার সাথে কিন্তু কারো করুনার লোভে কিংবা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির আশায় কাতরস্পর্শী হননি। তাঁর আত্ম-বিশ্বাস ছিলো নিজের প্রতিভা ও প্রভুর প্রতি। তিনি নিজেই লিখেছেন— ‘রহমান-রহিম তুমি বন্ধুরে, ও বন্ধু, গফুর ও রহিম।/ তোমার কাছে পানাহ চায়, বাউল করিম-দ্বীনবন্ধুরে।’
প্রতিভার স্বক্ষর আমরা দেখতে পাই তাঁর জারি, সারি, মারফতি, মুর্শিদি, মরমি, গণসঙ্গিত, ভক্তিমূলক গানসমূহে। তাঁর গান কালনী তীরের ধল পেরিয়ে পৌঁছে গেছে দুই বাংলার মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে। কালনীর ঢেউ, কালনীর কূল, আফতাব সঙ্গীত, গণসঙ্গীত, ভাটির চিঠি, ধলমেলা ইত্যাদি নামে তাঁর বেশ কিছু গানের বই বাজারে রয়েছে। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের যে গানের হিসাব ইতোমধ্যে পাওয়া গিয়েছে তা সংখ্যায় প্রায় দুই হাজার। শাহ করিম শুধু সংখ্যায় নয়, বিষয়, বর্ণনা, শৈল্পিকতা, স্বচ্ছতা এবং স্বাতন্ত্রতায় সত্যই আমাদের স্বদেশী সুরের গানের জগতে এক ক্ষণজন্মা সম্রাট। তাঁর গানে দেশ, জাতি, সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস, মানুষের সুখ-দুঃখ, দেশ-বিদেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সরল-সহজ এবং শৈল্পিকভাবে প্রস্ফূটিত হয়ে আছে। তিনি আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন বলেই লিখেছেন— ‘আশিকের রাস্তা সোজা/ আশিক থাকে মাশুক ধ্যানে/ এই তার নামাজ এই তার রোজা।’ তবে তিনি সমাজ, রাজনীতি, পরিবার বিমূখ ‘ফানাফিল্লাহ’ নয়, তিনি ছিলেন উর্দু সাহিত্যের কবি সম্রাট ইকবালের মতো ‘বাকিবিল্লাহ’। তাই আমরা তাঁর গানে প্রচন্ড রকমের সমাজ ও রাজনীতির সমসাময়িক বিষয়গুলো স্পষ্ট দেখতে পাই। তিনি মাওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে এবং সুনামগন্জে শহিদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মঞ্চে সমসাময়িক বিষয়ে স্বরচিত গান গেয়ে সকলের প্রশংসা অর্জন করেছেন। তবে শাহ আব্দুল করিম কোনো প্রকার দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি আজীবন মজলুম মানুষের মুক্তির স্বপ্নে নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে গান লিখেছেন, গান গেয়েছেন।
স্বাধিনতার স্বপ্নে, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কাকুতি নিয়ে শাহ আব্দুল করিম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মঞ্চে গিয়ে গান গাইলেও তিনি শেষ পর্যন্ত নেতাদেরÑরাষ্ট্রীয় কর্তাদের লুটপাট, চুরি, বাটপাড়িতে হতাশ হয়ে লিখেছেন— ‘করি ভাবনা সেদিন কি পাব না/ছিল বাসনা সুখী হইতাম/দিন হতে দিন আসে যে কঠিন-/করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম।’ আরেক গানে তিনি বলেছেন— ‘মজুতদার কালোবাজারী কেউ করে ইজারাদারী কেউ করে /রিলিফ চুরি আমলাতন্ত্রের আশ্রয় ধরে/এই যুগে আর বাঁচবেনা মান করিম বলে গাটুরী বাঁন্দ/আসিবে আজলী তুফান দোহাই দিলে মানবেনারে।’ মোটকথা শাহ আব্দুল করিমের গানে সকল শ্রেণির মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশা, প্রতিবাদ-সংগ্রামের কথা ফুটে ওঠেছে। তার গানে যেমন ছিলো মানুষের সংগ্রামের কথা, আধ্যাত্বিকতা একইভাবে ছিলো দেহতত্ত্বের বয়ান। তিনি বলছেন— ‘কোন মেস্তরী নাও বানাইলো কেমন দেখা যায়/ ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ূরপঙ্খি নায়/ চন্দ্র-সূর্য বান্ধা আছে নায়েরই আগায়/দূর্বিণে দেখিয়া পথ মাঝি মাল্লায় বায়/রঙে বে-রঙের কত নৌকা ভবের থলায় আয়/ হারা জিতা ছুবের মাঝে কার পানে কে চায়/মদন মাঝি ভারি পাজি কত নাও ডুবায়/বাউল আব্দুল করিম কয় বুঝা ভীষম দায়/কোথা থাইক্যা আইসা নাও কোথা চইলা যায়/ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ূরপঙ্খি নায়।’
শাহ করিম প্রায়ই আসতেন আমাদের বাসায়। আমার বড়চাচা সৈয়দ আব্দুর রহমানের সাথে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিলো। এই সূত্রে আমি ছোটবেলা থেকে তাঁকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের বাসায় রহমান চাচা ছাড়া শাহ আব্দুল করিমের মূল্য আর কারো কাছে তেমন ছিলো না। রহমান চাচার মতে ‘শাহ আব্দুল করিম সাক্ষাৎ আল্লাহর খাস লোক, যাকে আমরা আল্লার ওলি বলে থাকি।’ তাঁর যুক্তি হলো— ‘আল্লাহর সাথে খাস সম্পর্ক না থাকলে করিম শাহ এতো উচুঁ মার্গের আধ্যাত্মিক গান রচনা করতে পারতেন না। তা ছাড়া শাহ আব্দুল করিমের সম্পদের লোভ, খ্যাতির মোহ এবং হিংসা-বিদ্ধেষ নেই।’ বেশ আগে সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘খোয়াব’ লিটলম্যাগে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়, যা পাঠকদের একটি গ্রুপের মনে কিছুটা প্রশ্ন জাগ্রত করে। কোনো কোনো ভক্ত মনক্ষুণ্ন হলেন। ‘খোয়াব’ লিটল ম্যাগের নামই আমার জানা ছিলো না। সিলেটের লেখক-সাহিত্যিকদের একটি গ্রুপ ১৪০৭ বাংলার পহেলা বৈশাখ নববর্ষ উদযাপনে শহর থেকে দূরে-ঐতিহ্যবাহী সৈয়দপুর গ্রামে যাবে। উৎসব হবে মরমী কবি পির মজির উদ্দিনের বাড়িতে। তাই অনেকের প্রস্তাব একজন বাউল বা মরমী গায়ক সাথে নিলে ভালো হয়। আমি শাহ আব্দুল করিমের নাম প্রস্তাব করলাম। সবাই একবাক্যে আনন্দ প্রকাশ করলেও কেউ কেউ ‘খোয়াব’ এর সাক্ষাৎকারের কথা উপস্থাপন করেন। আমি কিছুটা সত্য-মিথ্যা নিয়ে বিভ্রান্ত হলাম। স্মরণ হলো আল্লামা ইকবালের কথা। ইকবাল শেকওয়া লিখলে ভারতবর্ষের একদল আলেম তাকে কাফের ফতোয়া দিলেন। কিন্তু দারুল উলূম দেওবন্দের তৎকালিন শায়খুল হাদিস মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি এই ফতোয়ায় স্বাক্ষর না দিয়ে সোজা লাহোরে এসে ইকবালের বাড়িতে মেহমান হলেন। ইকবালের সাথে শেকওয়া নিয়ে আলোচনা করলেন। স্বয়ং ইকবাল নিজে জোয়াবে শেকওয়া লিখলেন। কাদিয়ানীদের প্রতি ইকবালের কিছুটা দুর্বলতা ছিলো। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি সংস্পর্শে ইকবাল সঠিকভাবে কাদিয়ানীদের স্বরূপ উন্মোচন করতে সক্ষম হলেন। ইকবাল মুসলিম সমাজে আবার মধ্যমণি হয়ে উঠলেন। ইকবাল ছিলেন কবি সম্রাট-বিশ্বকবি। শাহ আব্দুল করিম লেখাপড়া না জেনেও বাউল সম্রাট-স্বভাব কবি। তাই ভাবলাম শাহ আব্দুল করিমের সাথে তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। বৃষ্টিঝড়া এক সকালের কথা। বাতাসে হালকা শীত। আমাদের বাসায় শাহ আব্দুল করিম বসে আছেন। চা-নাস্তা পর্ব আগেই শেষ। আমি গিয়ে বসি পাশাপাশি।
জানতে চাই— চাচা কেমন আছেন?
শাহ আবদুল করিম : আল্লাহর মনশা।
সৈয়দ মবনু : আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই?
শাহ আবদুল করিম : বলুন।
সৈয়দ মবনু : কিছুদিন আগে ‘খোয়াব’ লিটলম্যাগওয়ালারা আপনার সাক্ষাৎকার নিয়ে তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশ করেছে। আমার কথাগুলো সেই সাক্ষাৎকারের গর্ভ থেকেই জন্ম। আপনি স্বীকার করেছেন রাখাল থেকে গায়ক হওয়ার কথা। গানের পথে আসতে গিয়ে কিভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
শাহ আবদুল করিম : আমার এক দাদা ছিলেন। নাম তাঁর নসিবুল্লাহ। জীবনে শাদী করেননি। আমার একটা গান আছে—
‘জন্ম নিয়ে একজনের সান্নিধ্য পাইলাম
পিতামহের ছোট ভাই নসিবুল্লাহ নাম
ফকির ছিলেন, করতেন সদা আল্লাহর জিকির
ফকিরী বিনে ছিলো না অন্য ফিকির
আসতনে কাছে ফকির সাধু হিন্দু-মুসলমান
লাউ বাজাইয়া গাইতেন তখন ভক্তিমূলক গান
গানের একটি কলি আমার আজো মনে পরে
‘ভাবিয়া দেখ মাটির সারিন্দারে বাজায় কোন জনে’।
এই কলিটাই আমার জীবনের প্রথম মনে চিত্র অঙ্কন করে। দাদা মারা গেলেন। তারপর এই কলি থেকে আমার উৎপত্তি। আরেকজন ছিলেন করম উদ্দিন। সম্পর্কে নানা। আমার মায়ের মামা। তিনি দুতারা বাজিয়ে গান গাইতেন। তাঁর পাশে বসে আমিও গাইতাম। এই থেকেই আমার আরম্ভ। তারপর আমি গান শিখতে নেত্রকোনায় রশিদ উদ্দিন সাধকের কাছে যাই। কিছু সামনে গান গাওয়া। এভাবেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।
সৈয়দ মবনু : প্রত্যেক শিল্পীর প্রেরণার কিছু কিংবা একটি উৎস থাকে। আপনার সেই উৎস কি?
শাহ আবদুল করিম : আমারও উৎস আছে। আমি তো গানে আমার নিজের কথা বলি। তাই আমার মতো মানুষ যারা ওদের কথা আমার গানে এসে যায়। আমি শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলি। আমরা এই সমাজের শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতীত মানুষ। আমরা দুঃখ-কষ্টে আছি। আমার কথা বলতে গিয়েই এই শ্রেণীর সবার কথা এসে যায়। এটা-ই আমার গানের উৎস।
সৈয়দ মবনু : ‘খোয়াব’ লিটল ম্যাগের তৃতীয় সংখ্যায় এক প্রশ্নের উত্তরে আপনি নিজ স্ত্রী আপ্তাবুন্নেসাকে মুর্শিদ বলে সম্বোধন করেছেন, কারণ ব্যাখ্যা করবেন কি?
শাহ আবদুল করিম : উনি এমন এক লোক যাকে আমার সঙ্গীনী না পেলে আমি করিম হতে পারতাম না। তিনি যে ধৈর্য্যসহকারে আমার সেবা যতœ করেছেন তা বলার মতো নয়। আমি বছরে এগারো মাসই বাড়িতে থাকতাম না। এই সময় তিনি অর্ধাহার-অনাহারে থেকেও জীবনে কোনদিন বিরক্তি প্রকাশ করেনি। তাই তাকে মুর্শিদ সম্বোধন করেছি এবং আমার আপ্তাব সঙ্গীত গ্রন্থটি তারই নামানুসারে নামকরণ করেছি।
সৈয়দ মবনু : আপনাদের বিয়ে কি প্রেম ঘটিত?
শাহ আবদুল করিম : না, না। প্রেম ঘটিত নয়। আমাদের বিয়ে পারিবারিক।
সৈয়দ মবনু : ‘খোয়াব’ এর অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলেছেন, ‘আসমানী খোদা কে মানি না’ তাহলে আপনি কি নাস্তিক?
শাহ আবদুল করিম : না, আমি নাস্তিক নই। আমি বলেছি আকাশে নয়, পাতালে নয়, খোদা মানুষের অন্তরে। রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘কুলুবুল মু’মিনিনা আসিল্লাহী তা’য়ালা।’
আল্লাহও যে বলেছেন, নাহনু আকরাবু ইলাইহী মিন হাবলিল ওয়ারিদ।
তাই আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ আমার শাহ রগ থেকে আরো কাছে। আকাশে খোদা এতো দূর আমি মনে করি না। আমি খোদাকে কাছে বিশ্বাস করি। আমি বলেছিলাম আকাশে খোদা মানি না। ওরা অর্থ উঠিয়েছে আকাশের খোদা মানি না।
সৈয়দ মবনু : আরেক প্রশ্নের উত্তরে দেখলাম আপনি বেহেস্ত, দোজখ, দু’কান্ধের ফেরেস্তা অস্বীকার করছেন। অথচ পবিত্র কুরআন-হাদিসের দ্বারা এগুলো সত্য বলে প্রমাণিত। আপনি কি কোরআন-হাদিস মানেন না?
শাহ আবদুল করিম : দেখো কোরআন আল্লাহর বাণি তা আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু তার অপব্যাখ্যা কিংবা সুবিধাবাদী ব্যাখ্যা আমি মানি না। বেহেস্ত-দোজখতো দুনিয়াতেই আছে। যারা দুঃখী তারা কষ্ট পাচ্ছে। আর যারা সুখী তারা বেহেস্তের মতো আছে। পরকালেও বেহেস্ত-দোজখ আছে তা আমি বিশ্বাস করি। যারা আল্লাহ-রাসুলের প্রতি বিশ্বাস রেখে সুকাজ করে তারা পরকালে বেহেস্তে যাবে। এবং যারা মন্দকাজ করে তারা দোজখে যাবে। এটাই আমার বিশ্বাস।
সৈয়দ মবনু : আপনাকে অনেকে বাম, নাস্তিক বা কমিউনিস্ট করতে চায়। এ সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
শাহ আবদুল করিম : তারা যাই বলেন, আমি কিন্তু নাস্তিক নই। আমি আল্লাহ্র বিশ্বাসী এবং সর্বদা প্রার্থনা করি আমার শেষ নিঃশ্বাস যেনো ত্যাগ হয় আল্লাহ আল্লাহ বলে। এটাই আমার শেষ কথা। তারা আমায় নাস্তিক কিংবা যাই বলুক। আমি যে শোষণের বিরুদ্ধে বলি তাই অনেকে ভাবে কমিউনিস্ট। আমি কমিউনিস্ট বা নাস্তিক নয়। আমি আমার প্রভুর বিশ্বাসী। যারা আমাদের উপর অন্যায় কর আমি তাদের বিরুদ্ধে বলি। এটা আমার চরিত্র। এটা ইসলামের বৈশিষ্ট্য।
সৈয়দ মবনু : আপনি ‘খোয়াব’ এর অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন-‘আমার দীর্ঘ জীবনে রকীব শাহ নামের কোনো ফকিরের গান তো দূরের কথা নাম পর্যন্ত কানে আসেনি। হঠাৎ রেডিও টেলিভিশনে তার গান শোনে বিস্মিত হই।’ আমাদের প্রশ্ন আজ যেসব গান রকিব শাহ-এর বলে প্রচারিত তা কি অন্যকারো?
শাহ আবদুল করিম : হতে পারে এগুলো রকীব শাহ এর। কিন্তু আমার জীবনে সৈয়দ শাহনূর, শিতালং শাহ, আরকুম শাহ, জালাল উদ্দিন, লালন শাহ, রাধারমন, হাসন রাজা প্রমুখের গান ছোট বেলা থেকেই গেয়ে এবং শোনে আসলেও রকীব শাহ-এর কোন গান পাইনি, শোনিনি, গাইনি। রকীব শাহ হতে পারেন মহাজন, ফকীর কিংবা পীর কিন্তু আমি আমার দীর্ঘ জীবনে তাঁর কোনো গান পাইনি-গাইনি এবং কাউকে গাইতেও শোনিনি। এই কিছু দিন থেকে শোনা যাচ্ছে রকীব শাহ নামক একজন লেখক ছিলেন, তাঁর প্রচুর গান রয়েছে এবং সেগুলো তার বিত্তশালী ছেলে প্রচার করতেছেন। আমি কিন্তু তাকে অমান্য করছি না। তবে আমরা পাইনি তাঁর গান।
সৈয়দ মবনু : সৈয়দপুরের মরমী কবি পীর মজীর উদ্দিন সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা আছে কি?
শাহ আবদুল করিম : উনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাঁর কথাবার্তা শোনেছি। তাঁর প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। আমার দিরাইয়েও তাঁর প্রচুর শিষ্যভক্ত রয়েছেন। দিরাই হয়ে তিনি ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেতেন। দিরাইয়ে আমার এক শিষ্য ছিল ‘তখবুল’ তার নাম। তখবুলের বাপ-দাদা সবাই পীর মজীর উদ্দিনের শিষ্য ছিলেন। তখবুলরা খুব গরীব লোক হলেও তাদেরকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। সেই বাড়িতে আমি তাঁকে দেখেছি। তিনি আমায় খুব স্নেহ করতেন। প্রতি বর্ষাকালে তিনি দিরাই হয়ে ময়মনসিংহ যেতেন। দিরাইতে তাঁর সাথে প্রায়ই দেখা হতো।
সৈয়দ মবনু : সিলেটে আপনার প্রিয় বাউল বা মরমী কবি কারা?
শাহ আবদুল করিম : অনেক আছেন। যেমন মনে করেন মরমী কবিদের মধ্যে আরকুম শাহ, সৈয়দ শাহনুর, শিতালং শাহ। আর বাউলদের মধ্যে হাসন রাজা, কালাশাহ, সৈয়দ ইসাক শাহ প্রমুখ। ওদের গান পেয়েছি এবং গেয়েছি। রকীব শাহ-এর পাইনি এবং গাইনি।
সৈয়দ মবনু : বাউল-মরমী-মালজুরার মধ্যে ব্যবধান কি?
শাহ আবদুল করিম : বাউল হলো এই যে আমরা রাই-শ্যাম ইত্যাদি নিয়ে গেয়ে থাকি। মরমী হলো ভক্তিমূলক ভাবে মনের কথা গানের ভাষায় প্রকাশ। আর মালজুরা হলো একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে গান গাওয়া।
সৈয়দ মবনু : আপনার জীবনে সবচাইতে আশ্চর্যজনক ঘটনা কি?
শাহ আবদুল করিম : জীবনের একেক অবস্থায় একেকটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনাই আশ্চর্যজনক। রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ নীতি সব ব্যাপারেই আশ্চর্য হতে হয়।
সৈয়দ মবনু : তা হলে বলুন সব চাইতে আনন্দদায়ক ঘটনা?
শাহ আবদুল করিম : (একটু হাসলেন) আমরা আনন্দ গান গেয়েই পেয়ে থাকি। তাছাড়া যারা মানুষের সেবা করে তাদেরকে দেখলে আমি আনন্দ পাই।
সৈয়দ মবনু : দুঃখজনক ঘটনা?
শাহ আবদুল করিম : মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা হচ্ছে না। মানুষ তার প্রকৃত মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানুষের আজ এই সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। এগুলো দেখলেই দুঃখ পাই।
সৈয়দ মবনু : আধুনিক গান ও কবিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
শাহ আবদুল করিম : আধুনিকতা আমি তেমন বুঝি না। দেখুন রবীন্দ্রনাথ যদি বিশ্বকবিও হয়ে যান কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষ তার গান বুঝে না। কিন্তু লালন-হাসন রাজার গানে আমরা খুব আনন্দ পাই। আমি মনে করি রবীন্দ্রনাথের গান যদি খুব ভালোও হয় তবু আমাদের সাধারণ মানুষের মন স্পর্শ করে না। হতে পারে তা আমাদের না বুঝার কারণে। তবে যা বুঝি না বা মন স্পর্শ করে না, তা নিয়ে আমাদের সুখ-দুঃখের কি আছে? কবিতার ক্ষেত্রেও একই কথা।
সৈয়দ মবনু : আপনি কোনো আধুনিক গান পড়েছেন বা গেয়েছেন?
শাহ আবদুল করিম : আমি তো লেখা পড়া করিনি। বৃটিশ সময়ে আমাদের অঞ্চলে নাইট স্কুল হয়েছিলো। আমি তখন গরু-রাখালী করতাম। একজন আমায় সেই স্কুলের কথা বললে আমি ভর্তি হই। কিন্তু লোকের ধারণা যখন জন্ম নিলো নাইট স্কুলে পড়লে বৃটিশ সৈন্যদের সাথে গিয়ে জার্মানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে তখন ছাত্ররা পালাতে লাগলো। ফলে নাইট স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামান্য লেখাপড়া শিখেছি। তাই আধুনিক কবিতা বা গান আমার হৃদয় স্পর্শ করে না। তা ছাড়া আধুনিকতার লালনকারীরা মানুষকে মানুষের মতো করে দেখতে পারে না। ওরা সব কিছুকে বস্তুর মতো দেখে। কিছু দিন আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার একটি গান দিয়েছে। একজন লোকের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ আমাকে নিয়েছিলেন। আমার গান রেকর্ড হলো। অথচ হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দেখা দিলেন না। তিনি আমায় মানুষ হিসেবেই গণ্য করলেন না। আমাকে সামান্য টাকা দিয়ে একজন লোক বললো স্যার এখন দেখা করতে পারবে না। আমি কি তার কাছে টাকার জন্য গিয়েছিলাম। আব্দুল করিম টাকার জন্য গান গায় না। আব্দুল করিম টেলিভিশনে গান গাওয়ার জন্যও প্রত্যাশী নয়। আব্দুল করিম গরীব হতে পারে কিন্তু আত্মমর্যাদাহীন নয়। ছিঃ ছিঃ আধুনিকতা। যেখানে মানুষের কোন মূল্য নেই সেখানে আব্দুল করিম ও নেই।
সৈয়দ মবনু : ধন্যবাদ আপনি আমায় কিছু সময় দেয়ার জন্য।
শাহ আবদুল করিম : তোমাকেও ধন্যবাদ।