কবিতা

বন্ধুর গাড়িতে চড়ে এবং অন্যান্য কবিতা

বন্ধুর গাড়িতে চড়ে

দীর্ঘদিন পাবলিক বাসে
চড়তে চড়তে
আপনার ভেতরের
প্রাইভেট মানুষটা
১ সময় বিরক্ত হতে হতে
ভাবতে পারে,
‘শালা, নিজের ১টা গাড়ি হলে মন্দ হতো না!’
এই ভাবনাটা আপনারে আরও ব্যাকুল করবে
যখন দেখবেন ব্যক্তিগত গাড়ি-সমৃদ্ধ বন্ধুরা
আপনার পদাতিক প্রতিভার প্রশংসা করে বলবে
‘দোস্ত, তুই তো দেখি গাড়ির চেয়েও দ্রুত হাঁটতে পারস!’
দেখতে ভুলবেন না,
আপনার গাড়িওয়ালা
২ বন্ধু ১ হলে
আপনার সামনে কেমনে
তাদের গাড়ির মডেল নিয়ে আলাপ-সালাপ শুরু করে!
মাঝেমধ্যে তারা তাদের গাড়িতে
আপনাকে লিফটও দিতে চাইবে।
দোনামোনা করে আপনি তো ওঠেনও তাদের গাড়িতে
আর সিট বেল্ট বাঁধতে
ভুলে গেলে
পরামর্শের ছলে বন্ধুর কণ্ঠে একটু প্রভুত্বের স্বর টের পেয়েও
আপনি হেসে তা হজম করে নেন,
আজকাল বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হলেও তো থাকতে হয়
বিচিত্রবিধ হজমের ক্ষমতা।
বন্ধুর গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছুতে পৌঁছুতে
এসির আরামে আপনি হয়তো ঘুমিয়ে পড়লেন;
মাথায় রূপকথার বিশাল গ্যারেজের স্বপ্ন সামাল
দিতে দিতে
বন্ধুর গাড়িটা তখন
আপনার কাছে কি
খুবই ছোট মনে হচ্ছে না!

সম্পর্কিত

এখানে-সেখানে

স্বপ্নের ভেতর যখনতখন
চলে যাওয়া যায়
রাজশাহী থেকে রাশিয়া।
ড্রিমের ড্রাইভার ঠিক থাকলে
কালাই রুটি কিংবা ভদকা-ভিক্ষা
কোনোটাই কোনো ব্যাপার না।
প্রশ্ন হচ্ছে স্বপ্নে
কতটা ভিখারি হওয়ার বাদশাহি
বাস্তবে আমি অর্জন করেছি!

আবারও ঈদ এসে যাচ্ছে

আম্মুর টবে ফুল ফুটলে
বারান্দাটা মহাবিশ্ব হয়ে যায়।
গরম আর মশার পাল্লা দেয়া বাহাদুরির ভেতর
এই যা কিছু মেঘবৃষ্টির বাজনা;
সেদিন শহরে বহুকাল পর
সানি জুবায়ের
আজ হয়তো গণিত উৎসব!
ঢাকা নামের মেয়ের
ঘুম ভাঙছে ধীরে
‘ওস্তাদ, বায়ে পেলাস্টিক’ বলে
খুব দ্রুত ০১টা বাস
হাতিরপুল হতে
সোজা মৎস্যভবন;
হাতি আর মাছের মচ্ছবের আগে
আর এক ওস্তাদ আলি আকবর খানের শতবর্ষ চলে যেতে থাকে
এবং আবারও ঈদ এসে গেল!
এতসব ধারাবিবরণীর আড়ালে
আব্বুর কবরটা ভিজছে নিশ্চয়ই
হোসেনপুরের বৃষ্টিতে,
আম্মু এখনও ঘুমাচ্ছে মোহাম্মদপুরে।
আরও ০১টা একলা ঈদের আগে
আম্মুর টবে ঝাঁকে ঝাঁকে
ফুল ফুটেছে;
আম্মুর ঘুমের বাগানে
লাল ফুলগুলো
মহাবিশ্ব নাকি কারও
কবর হয়ে যাচ্ছে!

পিয়া মন ভোর

ভোরে ঘুম ভাঙলে
অকালে চলে যাওয়া
মানুষের মুখ চোখে পড়ে;
বেঁচে থাকার
অতি-অন্ধকার ছেড়ে
যারা দুম করে
কবরের আলোতে মিশে গেছে।
ভোরে ঘুম ভাঙলে
চাইল্ড প্রডিজিদের গল্প
পাঠ-স্মৃতি ফুঁড়ে কলকল করে;
ব্যর্থ বার্ধক্যে পৌঁছে যারা
নিজ নিজ ডায়েরির পাতায়
একগাদা
সোনালি মেডেলের মতো
সোনাঝরা শৈশবের গল্প
টুকে রাখে।
ভোরে ঘুম ভাঙলে
আমার ভাঙচুরগুলো
একটা অক্ষত আয়নায়
দেখে ওঠা যায়।

আসন্ন সম্পন্ন সকালে
ইত্যাকার ফুরিয়ে যাওয়াদের
বলো, ঠাঁই কোথায়!

কবি

টিলা থেকে ছিটকে পড়া চোখ
ঢিঁবিকে আকাশ ভেবে
ভুলে যাওয়া স্কার্টের সিঁড়ি
মনে আসা হু হু বেয়ে
বিস্মৃতিও এতটা সুন্দর
পার্পল-প্রহেলি;
ইতস্তত গন্ধের বন থেকে
সোচ্চার সুরভি কুড়াতে চাইলে
রাঙা থালায় যা থাকে
মলিন মাধুরী;
বিবাহে মৃত প্রেম
অথবা
তোমার পুরনো শব্দের
তুমিই কি এই
সাম্প্রতিক শব?

আপনার মতামত জানান

পিয়াস মজিদ

পিয়াস মজিদ; কবি ও প্রাবন্ধিক। জন্ম ১৯৮৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম। প্রকাশিত বই- নাচপ্রতিমার লাশ (কবিতা), মারবেল ফলের মওসুম (কবিতা), ক্ষত আত্মার বিজ্ঞপ্তি (গল্প), করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ (প্রবন্ধ)। ভুবনডাঙ্গা নামে একটি কাগজ তার সম্পাদনায় বের হয়। তিনি বাংলা একাডেমীতে কর্মরত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।