কবিতা

বড়ুয়ার মেয়ে এবং অন্যান্য

বড়ুয়ার মেয়ে

বড়ুয়ার মেয়ে!
ফুলের প্রতিবেশি
গানস্কুলে যাও
লাল লাল কুকুর
ঘরে ঘরে পুষো
বংশপরম্পরায়
কিয়াঙের মজমায়
সুর তুলো ত্রিপিটকে
সুন্দর সুশীতল
বাতাসের বনে।

সম্পর্কিত

খুব ভোরে জাগো
ধর্ম মানো
থালাভরা ভাত
আমীষের ঝোল
পুরানা কিয়াঙের পাশে
লাইন ধরে থাকো।

আমাদের কাছেই
তোমাদের পাড়া
তোমাদের পাশেই
আমাদের পাড়া
আমারে দেখো তুমি
নাকি আমি তোমারে?

বড়ুয়ার মেয়ে!
পাখিদের বন্ধু
বাশ ভাঙ্গা সাকো
পার করো ভয়ে
ক্ষেতে যাও বৈকালে
ধরতে গিয়ে কিছু
ধরো ধরো নিজেরে।

বড়ুয়ার মেয়ে!
ছয়টা আঙুল
দুই পা মিলে
বারোটা আঙুল
বড়ুয়ার মেয়ে
স্ফীত সুরে
স্বপ্ন দেখি ঘুমে
করছো কবুল।

বড়ুয়ার মেয়ে।
ভাবি, মীথ নিয়ে
অস্ত্র পাচার করি
সেকেলের গায়ে
আন্ধার রাত্রি
কবিরাজ লগে
ডুবে যাই পাতালে;
স্বপ্নের বয়ান মতে
মানলাম না-হয় সব
দিলাম মসজিদ
কেয়াং মন্দির
খাওয়ালাম মিসকিন!
তুলে আনবো
সোনার হরিন
সোনার কলসি
মগের নিশ্বাস
মগের খজিনা
স্বর্ণের দোতারা।

বড়ুয়ার মেয়ে!
মগের ঝি
এই পর্বতঘেরা
সবুজ মাটি
থাকি চট্টগ্রাম
কার হাতে ভাবি
মুসলিম হলাম!

সদ্ধর্মী যুবতি!
বলো দেখি,
পরদাদা ভান্তে
নামটা শুনি
দুই দাদা পর
জানি না কিছুই
ছিলো কি ‘যবন’
নাকি ‘ভান্তে’ সুজন?
তোমারে জিগাই
তোমারে চাইবো
পাখিরা ডাকলে
তোমাকে বুলাই
মনে মনে কত
ডেকেছি সবুজে
ম্যালা প্রাগইতিহাস
তোমারে শুনাবো।

বড়ুয়ার মেয়ে:
সবুজ কেন্দ্রিক
বড়ুয়ার মেয়ে:
হলুদিয় জামা
বড়ুয়ার মেয়ে:
শরমিন্দাগাছ
বড়ুয়ার মেয়ে:
টমেটোর লাল
বড়ুয়ার মেয়ে:
অমৃতগাছ
বড়ুয়ার মেয়ে:
বিশাল পাহাড়
বড়ুয়ার মেয়ে:
আলুর লতা
বড়ুয়ার মেয়ে:
ঘ্রাণ ধনিয়ার
বড়ুয়ার মেয়ে:
ডাক্তারিগাছ

বড়ুয়ার মেয়ে!
তন্ত্র-মন্ত্র মগা-বান
তোমাদের গোত্রিয়
সবাই আরকান?
অভিবাসী কেউ
ইতালি জার্মান?

বড়ুয়ার মেয়ে!
আপনি সুন্দর
বেতফলের ঘ্রাণ
ওগো আপনার
বড়ুয়ার মেয়ে
ফানুশের রাতে
আকাশের দিকে
লিখে দিও তাতে
বহুকাল আগে
ভিক্ষুর পাতে
ছিলো লোকমা
যবনেরও তাতে।

বড়ুয়ার মেয়ে!
মাঘীপূর্ণিমায়
ভাবো…
ভাবো…
ভাবো তো
আমি তুমি মিলে
চলে গেছি দূরে
আমি হবো যবন
তুমি হবে মাটির রোদন


নতুন ব্রিজের হাওয়া

জ্বর নিয়ে পার করি ব্রিজ। সর্দি মুছতে মুছতে একটা টঙের টেবিলে বসে পড়ি। চা খাই।
ব্রিজ পার করতে করতে আম্মুর ভাষাটারে চেঞ্জ করে ফেলি।
আর উঠে পড়বো উত্তরের কোনো লোকালবাসে।
আমার তো শেল্টার বলতে কিছু নাই। শুধু এক লোনলিনেস থেকে অন্য লোনলিনেসের দিকে যাই।
আমি জীবনভর তোমাকে ইয়াদে রাখবো।নাম বলবো না তোমার কোথাও। যতদিন না কোনো নারির প্রেমে হাটছি।
সেফটির ভিতরেই আমার জ্বর হয়। এই যে নাক কান দিয়ে শু শু করে বাতাস ঢুকছে। নতুন ব্রীজের হাওয়া। আমি আস্তে আস্তে আস্তে আরোগ্যতার দিকে যাচ্ছি।


রাংগামাটি

চত্রিশ কিলোমিটার দূর থেকে পাহাড়ের ফ্লেভার শুকতে শুকতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ঘিয়ে ভাজা ম্যাগি নুডলসের মতো রাস্তার সুরৎ যেনবা , চাইনিজ সসে মাখানো। আমরা নতুন পর্যটক। বাস থামলে ভেবে নিবো এ–ই আমাদের গন্তব্য। এত্ত সবুজ আমি কোথাও দেখি নাই। আমিও হয়তো জুলেখার
সেবিকাদের মতো বিস্ময়ে কাটতে পারবো হাত। যেদিকে তাকাই মনে হয় ইউসুফের দেহকোষ।

সত্যিই কি লেকের পানি নীল হয়,নাকি আকাশ ফুটে থাকে নীল হয়ে! পানির ভিতর ঘুমিয়ে থাকে গাছ। অথচ,পানির ভিতর মাছ!

আমরা ঘুরেফিরে ঘুরছি সবুজ সার্কেলের ভেতর। কিছু কিছু সবুজ জমা করে রাখছি ফোনে। আরো কিছু নীল। এখানে প্রায়ই অধিবাসীদের দিকে তাকাচ্ছি মুরাকামি ভেবে।

পাহাড়ি মেয়েদের দোকানে থামছি সুন্দর গিলতে।
আমার বাদামি গাত্রবর্ণ বারবার ডুবে যাচ্ছে ‘বিবর্ণ’ শব্দের ভেতর। আজ এখানে কোনো জামা কিনবই না। হবো সুন্দর গিলে গিলে সুন্দর পুরুষ।

আপনার মতামত জানান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।