কোনো প্রতিমানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছাড়া, কোনো কাব্যিক কর্তৃত্বকে সম্মান প্রদর্শন করা ছাড়া পশতু ভাষার মৌখিক সাহিত্যের লেখকরা বইয়ের কাছ থেকে অনেক দূরে থেকেই তাদের রচনা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। তারা সাধারণত বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থন থেকে বঞ্চিত। তারা তাদের রচনাগুলোকে বাইরের প্রভাব থেকে রক্ষা করেন। তারা স¦তঃস্ফূর্তভাবে তাদের কাজকে চারিত্রিক প্রতিধ্বনির শক্তি প্রদান করেন যার মাধ্যমে শোনা যায় সমগ্র মানুষের কথা।
তবুও এই জনপ্রিয় আশুরচনাগুলো বিশাল বৈচিত্র্যের কাঠামোগুলোকে কবিতা লেখার নির্দিষ্ট নিয়মের সাথে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। গান থেকে অবিচ্ছেদ্য এ ধরণের কবিতা মূলত আবৃত্তি করার জন্য নয়। অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে সুরেলা কদর রয়েছে এর ছড়া ও ছন্দের।
বিষয়বস্তুতে এ রচনা ফার্সি দারি কবিতা থেকে স্পষ্টতই আলাদা। এটা অতীন্দ্রিয় প্রেমকে মহিমান্বিত করে না। এখানে নেই অজানা, অতলস্পর্শ ও অচেনা স¦র্গের আকাক্সক্ষা, নেই প্রভুর গুণকীর্তন। এতে পরম প্রভুর কোনো চিত্র দেখা যায় না যিনি তার হাতে রাখেন তার প্রজাদের জীবন ও মৃত্যু। এতে সুন্দর যুবকের প্রতিকৃতি, সমকামী আকাক্সক্ষার বিষয় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। বুদ্ধিদীপ্ত তর্কাদি, অনুভূতির সৌন্দর্য, রূপক মূল্যবোধ ও অলঙ্কারপূর্ণ অনুশীলন যা ফার্সি সাহিত্যকে কখনো কখনো অযৌক্তিক সীমার দিকে ঠেলে দেয়- এগুলোর একটিও প্রকাশ পায় না।
এখানে সর্বদা নিশ্চিত করা হয় খুব সহজ ও মৌলিক কিছু। একটি গান যা একজন জাগতিক মানুষের উদ্বেগ, চিন্তা, আনন্দ ও সুখকে প্রকাশ করে। একটি গান যা প্রকৃতি- বন, নদী, পাহাড়, ভোর ও সন্ধ্যা আর রাতের মহাকাশকে প্রকাশ করে। একটি গান যা যুদ্ধ ও সম্মান, লজ্জা ও প্রেম আর সৌন্দর্য ও মৃত্যুর রসদ যোগায়।
এই জনপ্রিয় কবিতার গুরুত্বপূর্ণ মৌলিকতা হলো এতে নারীর সক্রিয় উপস্থিতি। অন্য সব জায়গার মতো যদি তিনি পুরুষ কবিদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকেন, এখানে তিনি নিজেকে সৃষ্টিকারী হিসেবে, নিজেকে অগণিত গানের রচয়িতা ও বিষয়বস্তু হিসেবে আরোপ করেন। এভাবে তার অংশগ্রহণের জন্য একটি কাঠামো সবসময় প্রয়োজন আর সেটাই হলো লান্দাই, যার সোজাসোজি অর্থ ‘ছোট্ট প্রকাশ।’ প্রকৃতপক্ষে এটি একটি সংক্ষিপ্ত কবিতা যা যথাক্রমে নয়টি ও তেরোটি সিলেবলের দুটি পদ্যের লাইন, অন্তমিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও থাকবে অটুট অভ্যন্তরীণ ছন্দোবিশ্লেষণ। অঞ্চলের উপর নির্ভর করে এটি বিভিন্ন উপায়ে উচ্চারিত হয় আর প্রায়শই কথোপকথনে বিরামচিহ্ন দেয় যেখানে এটি একটি উদ্ধৃতি বা উক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সমর্থন করে একটি অনুভূতি বা চিন্তা।
হৃদয় থেকে বের হয়ে আসা কান্নার মতো, আলোর ঝলকানির মতো, একটি অগ্নিশিখার মতো লান্দাই তার সংক্ষিপ্ততা ও ছন্দ দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই বেনামী কবিতাগুলো টিকে থাকে তার কালজয়ী অনুকরণের জন্য। প্রতিদিন বিকেলবেলা যখন গ্রামের মেয়েরা ঝর্ণা থেকে জল আনতে যায় অথবা যখন তারা কোনো উৎসবে বা বিয়েতে নাচে ও গায় তখনই নতুন নতুন লান্দাই প্রত্যুৎপন্নভাবে গাওয়া হয় আর সেরাগুলো তখনই সম্মিলিত স্মৃতিতে নোঙর করে নেয়।
১
গোপনে পুড়ি— গোপনে কাঁদি
আমি সেই পশতু নারী যে প্রকাশ না করতে পারে তার প্রেমখানি
২
তুমি লুকিয়ে ছিলে দরজার আড়ালে
আমি হাত বুলাচ্ছিলাম আমার নগ্নস্তনে আর তুমি নীরবে তা দেখছিলে
৩
আমি তোমাকে আমার মুখ দেবো সানন্দে
কেনো তবে কলসি নাড়াও? আমিই তো এখন এখানে— সবকিছু সিক্ত জলে
৪
ডালিম গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে— ও বসন্ত!
আমি আমার বাগানের বুকের ডালিম রাখবো শুধু দূর-প্রেমিকের জন্য
৫
রাতে বারান্দা অন্ধকার— প্রগাঢ় বিছানাও
আমার চুরির শব্দ তোমাকে বলে দেবে কোথায় যেতে হবে প্রিয়
৬
প্রথমে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে নাও তোমার বাহুতে
তবেই তুমি আমার কোমল জিনিসের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে
৭
আমাকে চুমু দাও চাঁদের স্নিগ্ধ আভায়
আমাদের ঐতিহ্য— উজ্জ্বল আলোতে একে অন্যকে গভীর চুমু খাওয়ায়
৮
এসো ফুল হও আমার বুকে
যেনো রোজ সকালে তোমাকে সতেজ করতে পারি হাসির বিস্ফোরণে
৯
যা যা চেয়েছো আমার সাথে তুমি করেছো তা-ই
এখান থেকে একটা ঘোমটা দাও আমার মুখে— আমি ঘুমোতে চাই
১০
সাবধান- ধরে রাখো- নিরুৎসাহিত হয়ো না! তোমার মাথার কাছে
ফুলের ডালের মতো নত— এখানে আছি আমি— তোমার কাছাকাছি
১১
ভ্রমণের সকল আনন্দ থেকে ঈশ্বর তোমাকে বঞ্চিত করুক— এই আশা দিলাম
তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো- আমি এখনও অতৃপ্ত— ঘুমোচ্ছিলাম
১২
পাহাড়ের ওপারে থাকা ও আমার প্রেম- চাঁদের দিকে তুমি তাকাবে
দেখতে পাবে ছাদে দাঁড়িয়ে— অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকা আমাকে
১৩
গত রাতে তুমি ঘুমোচ্ছিলে আমার হাতে
এখন আমার কাছ থেকে বহু দূরে— তুমি আজ রাতে বিশ্রাম পাবে কিসে?
১৪
বানিয়েছি এক শয্যা হৃদয়ে
আমার কাছে আসতে আমার ক্লান্ত প্রেমিককে যেতে হবে বহু দূরে
১৫
ভোরের শুভ্র আলো আরও দূরপ্রসারিত
আর আমি বেচারা— এখনও বিষণ্ন প্রেমিককে আনন্দ দেয়ার চেষ্টায় আছি রত
১৬
আমার প্রেমিক একটু রসিকতাও না বুঝলো
আমার লম্বা বেণী দিয়ে আলতো করে আঘাত করতেই সে রাগে ছিটকে পড়লো
১৭
আমার প্রেমিক তার মুখের ভেতর আমার জিভ রাখতে চায়
আনন্দের জন্য নয়— আমার উপর তার অবিচল অধিকার বজায় রাখার জন্য
১৮
তোমার কি শরম লাগে না তোমার সাদা দাড়িতে?
তুমি আমার চুলের যত্ন নাও আর আমি হাসি ভেতরে ভেতরে
১৯
বৃদ্ধকে কখনো প্রেমিক হিসেবে নিবো না
সে শুধু পরিকল্পনা করেই রাত নষ্ট করে আর সকালে নিজেকে বলিষ্ঠ বলে
২০
একজন ক্ষণিকের জন্য আমাকে দেখার ইচ্ছায় মরে যাচ্ছে
আরেকজন ঘুমে কাতর বলে আমাকে বিছানা থেকে ছুড়ে দিচ্ছে