উর্দু কবিতার জগতে পারভিন তার নামটি উজ্জ্বল হরফে লিখে গিয়েছেন। গোপীচাঁদ নারাঙ্গের মতে, পারভীন শাকিরের স্বাক্ষর ছাড়া নতুন কবিতার দৃশ্যপট অসম্পূর্ণ। তার কবিতা দীর্ঘশ্বাসের সাথে নির্গত প্রচলিত প্রেমের কবিতার মত স্রেফ আবেগের খোলসে মোড়ানো নয়। আবেগ ও অনুভূতির তীব্রতা এবং সহজ অথচ শৈল্পিক প্রকাশ পারভিন শাকিরের কবিতার বিশেষত্ব। আবেগের সত্যতা, দৃষ্টিভঙ্গির পরিশীলিততা এবং শব্দের সূক্ষ্মতা দিয়ে পরভিন উর্দু কবিতার অনন্য চূড়ায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।
কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক আহমেদ নাদিম কাসমি পারভিন শাকিরের কবিতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, পারভিনের কবিতা গালিবের এই পঙক্তির সম্প্রসারণ- ‘’ফুউঁকা হ্যায় কিস নে গোশ-এ-মহব্বত ম্যাঁ অ্যায় খোদা, আফসুঁ-ই-ইন্তিজার তমন্না কাহেঁ জিসে’। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন- বাসনাই অপেক্ষার মন্ত্র, হোমার থেকে গালিব পর্যন্ত সকল কালোত্তীর্ণ, ধ্রুবতর এবং প্রামাণিক কবিতা মানব হৃদয়ে স্পন্দিত হতে শিখিয়েছে। এবং পারভিন শাকির এই মন্ত্র দিয়ে নির্মেদ আবেগে সৃষ্টি করেছেন উর্দু কবিতা। স্নান করেছেন রামধনু ঝরনায়।
১৯৫২ সালের ২৪ নভেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে তাঁর জন্ম। তার পরিবারের পূর্ব বসতি ছিল বিহারে। দেশ ভাগের পর পারভিনের বাবা করাচিতে স্থায়ী হন। কিশোর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন পারভিন শাকির। তার বাবা শাকির হোসেন সাকিব কবি ছিলেন। বাবার থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে কবিতার জগতে তার যাত্রা শুরু। ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কাজ করেন পারভিন। ১৯৭৬ সালে চাচাতো ভাই নাসির আলীকে বিয়ে করেন। ভালোবেসে বিয়ে করলেও দাম্পত্য সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দাম্পত্যজীবনে তিনি এক পুত্র সন্তানের জননী। ২৫ বছর বয়সে পারভিন শাকিরের প্রথম কবিতার বই ‘খুশবু’ প্রকাশিত হয় এবং উর্দু সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই বইয়ের জন্য ১৯৭৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার দেয়।
১৮ বছরের ব্যবধানে তার ৪টি কবিতার বই প্রকাশিত হয় – ‘সদ-বার্গ’(১৯৮০), ‘খুদ কালামি’ (১৯৯০), ‘ইনকার’ (১৯৯০) ও ‘কাফ-ই-আয়না’। পারভির শাকিরের সব সৃষ্টিই পাঠকনন্দিত। ‘গোশা-ই-চাশম’ নামে তার চলমান নানা ইস্যুতে লেখা কলামের সংকলন প্রকাশ হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পদক ‘দ্য প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ লাভ করেন। তার কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হয় ‘মাহ-ই-তামাম’ নামে।
১৯৯৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
ভূমিকা ও তরজমা : নাওয়াজ মারজান
এই গলে যাওয়া সন্ধ্যা
আমাদের এই গলে যাওয়া সন্ধ্যা
যেখানে সবকিছু অন্তর্হিত হয়ে যায়
ফুলের মতো
তোমার কাপড়ের ঘ্রাণ
আমার স্বপ্নের অঙ্কুর
সবকিছু গুলিয়ে যায়
দৃষ্টি মুলতবি…
কিছুক্ষণের মধ্যেই,
আকাশে নতুন নক্ষত্র জন্ম নেবে
গভীর আবেগে
তোমার দিকে তাকাতে
তোমার হৃদয় তখন মনে করিয়ে দেবে
একটি স্মৃতির প্রতিধ্বনি
বিচ্ছেদের গল্প,
না বলা কথার
অসমাপ্ত মুহূর্ত
অপ্রস্ফুটিত স্বপ্নের
আমাদের দেখা হওয়া আবশ্যক ছিল
অন্য কোনো সময়ে
স্বপ্নের আরাধনায়
অন্য আকাশে
অন্য দুনিয়ায়
বড় আবশ্যক ছিল