অনুবাদ

নূর হিন্দির কবিতা

ভাষান্তর : কায়েস সৈয়দ

নূর হিন্দি একজন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক। তার কবিতা পোয়েট্রি ম্যগাজিন, হোবার্ট ও জুবিলাতে প্রকাশিত হয়ে আসছে। আমেরিকান পোয়েট্রি রিভিউ, লিটারেরি হাবঅ্যাড্রয়েট জার্নালে প্রকাশিত হয়ে আসছে তার প্রবন্ধ। ২০২১ সালে নূর পোয়েট্রি ফাউন্ডেশন থেকে রুথ লিলি ও ডরোথি সার্জেন্ট রোজেনবার্গ পোয়েট্রি ফেলোশিপ পান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও এর একরন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবিতার ওপর বিএ ও এমএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন। হেইমার্কেট বুকস থেকে ২০২২ সালের মে মাসে আত্মপ্রকাশ পেলো তার প্রথম কবিতার বই প্রিয় ঈশ্বর প্রিয় হাড়গোড় প্রিয় হলুদরঙ। বর্তমানে তিনি আরেক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি জর্জ আব্রাহামের সাথে ফিলিস্তিনি কবিতার একটি ইংরেজি সঙ্কলনের সম্পাদনার কাজ করছেন।

রাজনৈতিক কবিতা আর ভাষাগত সক্রিয়তা আসলে কি? লেখার মাধ্যমে তা সাক্ষ্য দেওয়ার মানে কি? ভাষা যখন অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয় তখন আমরা কিভাবে সামনের পথ খুঁজে বের করে স্পষ্ট করবো? এসব প্রশ্নের দ্বারপ্রান্তে এক সমৃদ্ধ আন্তঃপাঠ্যতা আর অবিচল চোখ দিয়ে নূর হিন্দি উপনিবেশিকতা, ধর্ম, পিতৃতন্ত্র আর তার পরিচয়ের জটিল ছেদগুলো অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার বহুল প্রচারিত কবিতা ‘ফাক ইওর লেকচার অন ক্রাফট, মাই পিপল আর ডায়িং’ (আপনাদের শৈল্পিক বক্তৃতাকে আমি চুদি, আমার লোকেরা মরে যাচ্ছে) সহ অন্যান্য কবিতাগুলো একজন শক্তিশালী ও অপতিরোধ্য কবির ক্রোধ আর স্পষ্টতার অতুলনীয় প্রকাশ।

সম্পর্কিত

নূর হিন্দির কবিতাগুলো ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন কায়েস সৈয়দ

 

একটি ঘর

ফিলিস্তিনের সাথে, বাসার সাথে, জর্দানের সাথে আমার পরিবারের সংযোগস্থল হলো সকালের নাস্তার টেবিল। খাওয়া পুণ্যের কাজ— জলপাই তেলে তন্দুর রুটি চুবিয়ে দেয়া আনন্দময় কাজ।

 

শনিবার সকালে চুলার উপরে তুমি তন্দুর রুটি দেখতে পাবে। আগুনের উপর প্রতিটি রুটি উল্টিয়ে দেয় আমার মায়ের হাত। তার উষ্ণতা আমাদের ভরিয়ে দেয়।

 

আমাদের জন্মভূমি আঘাতপ্রাপ্ত আমাদের দাঁতে। ভরিয়ে দেয় দাঁতের শূন্যস্থান। বিশ্রাম নেয় আমাদের জিহ্বায়। হায় খোদা! তার জলপাই গাছের জন্য আমরা কতোটা আকুল! কতোটা তাড়া করে যায় তা আমাদের স্বপ্নকে! কতোটা…


 

বন্ধুত্বের গান

………………এজওয়াটার বিচ, ২০১৯

………………কেভিনের প্রতি

 

এই উষ্ণ রাতে

আমিসহ যেকোনো কিছুর সাথে

পড়ে যেতে পারি প্রেমে

ভালোবাসা আমার

তুমিই একমাত্র লোক

যার প্রতি সমর্পণ করি সমস্ত কোমলতা

এতো নীল চাঁদ!

আর হ্যাঁ

কোন সোনা আসলে সোনা

সত্য হলো আমরা থাকা সত্ত্বেও একটি দেশ এতো শোকাহত

এতো জাগরণ

এতো মৃত্যু

কার্তুজের মতো জোড়ালো আমাদের বিষন্নতা

 

শোনো

এমন কি সাগরও মিনতি করে

বালিতে হাত রাখো বন্ধু

নিজেরাই নিজেদের কবর দেয়া ভালো

কি ভারী………………………………….কী ভারী?

হালকা হয়ে যায়


 

যে কবিতায় মা আমাকে প্যাপ স্মিয়ার করতে নিষেধ করেন কেননা তাতে আমার অস্তিত্বহীন সতীত্বের ঝিল্লি ছিঁড়ে যেতে পারে

 

আর আমি যেনো… ক্যান্সারের কি অবস্থা…?

আর তিনি যেনো… কিন্তু তোমার সতীত্ব…?

আর আমি বলি… তবে মৃত্যুর কি হবে…??

আর তিনি বলেন… কিন্তু পিতৃতন্ত্র…?!

আর আমি যেনো… হ্যাঁ হ্যাঁ— পিতৃতন্ত্র!

আর তিনি যেনো… হ্যাঁ হ্যাঁ— মৃত্যু!

 

টিকা : জরায়ুর ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে এমন  অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা করার জন্য জরায়ুমুখ থেকে কোষের নমুনার উপর পরীক্ষা করা হয় যা প্যাপ স্মিয়ার নামে পরিচিত।


ব্রেকিং [নিউজ]

 

আমরা জেগে উঠবো

রবিবার সকালে

পড়বো সংবাদপত্র

পড়বো একে অন্যকে

হয়ে ওঠো ভোক্তা একে অপরের গল্পের

একটি উন্মত্ত প্রসারণ

অন্যের শরীরের উষ্ণতার জন্য

তার শব্দগুলো আমাদের ভাসিয়ে রাখে একটি জগতে

আমরা আমাদের পিঠে বহন করি কবরস্থান

এক হাতে বন্দী করে নিয়েছি জোনাকি

মুঠোর উষ্ণতায় ম্লান হয়ে যায় তার আলো

আর অন্য হাতে কলম নথিভুক্ত করে তার মৃত্যু

আরও একবার মুঠো বন্ধ করে তোমাকে জিজ্ঞাসা করবো

এটা কি ভয়ঙ্কর নয়?

সাক্ষাৎকারে আমার প্রসঙ্গের গল্পগুলো বানাই কাচের মধ্য দিয়ে

যেনো সেগুলো হজমযোগ্য হয় ভোক্তাদের কাছে

আমি হয়ে যাই যন্ত্র

তথ্যের স্থানান্তর

তারা হয়ে যায় সহানুভূতির অনুনয়

অনুভূতির অতিরিক্ত সম্পৃক্ততা আমরা কর্মে রূপান্তরিত করতে ব্যর্থ হবো

যা হারিয়েছে তা অমূল্য

গ্রীষ্মের শেষে সুইমিং পুলগুলো পানিতে ভেসে যাবে

আর সাঁতার কাটা হবে অসম্ভব


শোকের সিম্ফনি

ইসরা ঘ্রায়েবের প্রতি

 

প্রিয় জলপাই-গাছ // কতোটা রক্তবর্ণ

দেখেছো তুমি? // তুমি কি ইসরারটাও

ধারণ করতে পারবে? // সেই সব মুষ্টিবদ্ধ পুরুষদের

মনে রেখো // বাতাসে // তারপর ঘুসি

থেঁতলানো চামড়া // আঘাতের দাগ

হলুদাভ না? // আমি তোমার ডালে

ঝুলিয়ে দিয়েছি চেরি // আমার দাঁতে

গর্ত // চেরিকে টুকরো করে মেলে ধরলে

দেখতে পাবে হৃদয়, স্পন্দনরত // আর সুমিষ্ট

 

টিকা : একজন পুরুষের সঙ্গে তোলা ছবি ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করায় ফিলিস্তিনি তরুণী ইসরা ঘ্রায়েবের পরিবার রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ইসরাকে শাস্তি দিতে তার ভাইকে নির্দেশ দেয় ইসরার পরিবার। এরপরই তার ভাই ইসরাকে শাস্তিস্বরূপ মারধর করে। ভাইয়ের মার থেকে বাঁচতে গিয়ে তিনতলার ব্যালকনি থেকে নিচে পড়ে মেরেুদ- ভেঙে যায় তার। হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ও ইসরা বেশ কয়েকটি পোস্ট দেয়। এক পোস্টে সে লিখে ‘আমাকে শক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে মেসেজ পাঠাবেন না। আমি শক্ত আছি। আমাকে যারা মেরেছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে।’ এসব পোস্ট দেখে ইসরার ভাই কয়েকজন পুরুষ-আত্মীয় নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে ইসরাকে আবার মারধর করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একুশ বছর বয়সী ইসরা মৃত্যুবরণ (২২.০৮.২০১৯) করে।

আপনার মতামত জানান

কায়েস সৈয়দ

কায়েস সৈয়দ; কবি ও অনুবাদক। জন্ম ১৭ মে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে। বেড়ে ওঠা বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। প্রকাশিত বই- ‘পাবলো পিকাসোর কবিতা’ (অনুবাদ কবিতা), রৈখিক রক্তে হিজলফুল (কবিতা), যুদ্ধ বিদ্যালয় (অনুবাদ কবিতা) ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।