কবিতা

নুর নুর বলে চমকায় পাখি

উড়ে উড়ে হাওয়া
সে কি সুন্দর ঘূর্ণনে—
এ দুপুর ছাওয়া
বনে লুকানো দর্পণে

চেয়ে থাকে শুধু
কপালের মৃদু রেখা—
বলে না কিছুই
ঘুঘু, নিরালায় একা

সম্পর্কিত

অদেখা কী সুর ও
পাতার শরীরে শোনে—
বিস্মৃত, বিমূঢ়
তার দুচোখের কোণে

কত না রুপালি
ধূলিঝরা এই ফাঁকি—
নুর নুর বলে
চমকায় এক পাখি

স্থির নয় চুলও
তুমি নাচের ধামালে—
ফুটে থাকা ফুলও
মরে সুগন্ধিরুমালে

মাখে জাদুরঙ
চারপাশ জুড়ে ছায়া—
হয়েছে বিতং
দিগন্তে অশ্বের মায়া
ডানাতে সেও কি
ভাবে উড়–ক্কু মানুষ—
দূর থেকে দুলকি
চলে যায় দিলখুশ

কখন যে হুরি
কার হাতে বাঁধে রাখী—
নুর নুর বলে
চমকায় এক পাখি

আলো খসা দিন
যার রাত্রিতেও সোনা—
সেই তাতে লীন
পাথরও হয়েছে লোনা

জলতলে চিহ্ন
আছে যেন সকলের—
মানুষেরা ভিন্ন
একেকটি কলবের

ধরি তার সঙ্গ
মৃতপ্রায় এক হাঁস—
অচেনা ভুজঙ্গ
কথার গেরোতে ফাঁস

বেয়ে রক্তনালি
এখনও জাগবে না কি—
নুর নুর বলে
চমকায় এক পাখি


তুমি যেন কই কই থাকো—
থই থই করা সারাদিন
সেকি ঢেউ তুলে ভুলে কারো
ছায়া ফেলে যায় অমলিন

ফুটে উঠা নাম তার নীলে—
একা একা ঝুলে—আসমান
কার পাখি উড়ে গিয়ে বলে
ওই ঠোঁট রাঙা—সুনসান

সেই লালে ঘুম ছিঁড়ে যদি—
দৌড়ে যায় ভাষা—একবার
তাকে বলো কেউ নও তুমি
মৃত ছায়া দূরে—পারাপার

তবু দেখি মৃদু ম্লান হেসে—
তুমি এক ভিন জাদুকরী
নুর নুর বলে ডাকি তাকে
মেঘলীন পাখি দেশান্তরী


পাতাটির ধ্যান থেকে উড়ে গিয়ে
একটি পাখির ডাক দিলে তুমি—
যেন দূর সাইরেন থেকে বেজে
উঠে তার—উত্তাপ ছড়ানো রুমি

সে কি গানের মতো ভেসে যাওয়া
বেঁচে থাকা অনেক রাতের গান—
না ফুলের পাশে এই মৃদু হাওয়া
একেকটি তারা ছুঁয়ে ভাসমান

যদি বাড়িটির কাছে গিয়ে রোজ
নিভে যায় ফুলের কথিত আহা—
সেই দেখা অদেখার নেয় খোঁজ
মন পড়ে থাকে ধীর—পিউকাহা

ওখানে তুমি কি নও উৎসমূলে
বিঁধে থাকা এমন হাজারো পাখি—
নুর নুর বলে নেয় চোখে তুলে
যারা মুগ্ধতার পাপ ও পানোখী…


ঘুমের মতো নিবিড় খুন হয়ে যাওয়া—
মানুষের একাকী পথের পাশেই পথ
যেন বাউল ফুটে ওঠা ফুলের হাওয়া
ধূলি—চঞ্চলতায় প্রখর প্রেমের মদ

সে মনোহর দৃশ্য থেকে ডেকে যায় যদি
তিনটি চোখের এক পাখি—মৃদু ফাগুনে
তবে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কাচের মেয়েটি
লুকিয়ে রাখে কৃষি—নিজ বাড়ির আগুনে

দেখি পথ জুড়ে পড়ে থাকা বিষন্ন লাল—
গৃহিণী শিশুকেই ভাবে তার মহাকাল

কে আছে এমন পাগল—সেতার বাজায়
আঙুলে রেখে পৃথিবীর সমস্ত আভা
বেসুরএকদিন ফেলে রেখে চলে যায়
বুড়ো গাছটি আর রঙিন ফলের ধাঁধা

গভীর মনে হয় এই চির অদেখাও—
বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা পরিবেশ
এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা রঙটাও
মাথার মূলে জ্বলে ওঠা নূর, দরবেশ

দেখি পথ জুড়ে পড়ে থাকা বিষন্ন লাল—
গৃহিণী শিশুকেই ভাবে তার মহাকাল

আপনার মতামত জানান

সারাজাত সৌম

সারাজাত সৌম; কবি ও প্রচ্ছদ শিল্পী। জন্ম ১৯৮৪ সালের ২৫ এপ্রিল ময়মনসিংহ-এ। প্রকাশিত বই- নুর নুর বলে চমকায় পাখি (২০২০), একাই হাঁটছি পাগল, দ্বিতীয় সংস্করণ (২০২১), আমি নাই হয়ে যাব (২০২২) । সম্পাদনা করেন ‘ঘুঘু’ (যৌথ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।