কবিতা

নীল মাছি এবং আরও কয়েকটি কবিতা

নীল মাছি

একদিন যে-চোখের অবারিত দিগন্ত ও দৃশ্যপট সোনালী ফসলের মতো শোভা ও স্বাস্থ্যে ভ’রে উঠেছিলে অনন্ত কল্যানে ,
সে চোখ আজ নীল মাছি;
স্বপ্নহীন বিরামহীন অনন্ত মৃত্যুর প্লীহায় সেখানে বিরান নিস্তব্ধতা-
গভীর অন্ধকার!
যে-বুকে একদিন অমিত সম্ভবনা নিয়ে জেগে উঠেছিলে ঘাস হয়ে
আর আমি ভুলেছিলাম গোটা জীবনের সবকটা ভুল,
কদর্য ছেলেবেলার উপোস বিকেল,
ভুলেছিলাম বাবার মদ-চোখ শাসনে কেঁপে ওঠা হৃদয়ের গোলযোগ!
যে বুকে একদিন পালকের মতো ভেসে-ভেসে নেমে এসেছিলে অন্যলোক হতে,
সে-বুকের এধার থেকে ওধারে
ভিতর থেকে বাহিরে
এখন বিহ্বল হরিণেরা দাপিয়ে বেড়ায়!
কতটা অসহায় হলে আত্মহত্যা চিন্তা হয়ে ওঠে ফুল?
আমার আঙুল গুলোকে আমি কখনোই ভালোবেসে যত্ন নিতাম না,
সম্ভবত চোখে পড়তো না কিংবা আমি অন্ধ ছিলাম কিংবা আঙুলহীন বিকলাঙ্গ ছিলাম!
যেদিন তুমি স্পর্শ করলে আমার আঙুল-
তখন মনে হলো আমার আঙুল আছে,
আঙুল বেয়ে নিচে নেমে গেলেই সেখানে আয়ুরেখা আছে।
সম্ভবত সেদিন ই আমার মনে হয়েছিলো-
আমি বেঁচে আছি,
আমার অস্তিত্ব সমান গুরুত্বপূর্ণ ও সুখকর হয়ে উঠেছিলো দশটি আঙুল, হাতের তালু, আয়ুরেখা!
বহুদিন তোমার স্পর্শহীন আঙুলে ফুলের পরাগায়ন ব্যর্থ,
সেখানে আজ উপজীবী ছত্রাক;
হাতের তালুতে সরকারি খাদ্য গুদামের একযুগ ধরে নষ্ট হতে থাকা চালের মতো অন্তঃসারশূন্য , মূল্যহীন কদর্য আয়ুরেখা।
এভাবেও মানুষ বাঁচে বয়সের সংখ্যায়
কান্নার মতো টলমল!

সম্পর্কিত

দেবী

আশ্চর্য ভূগোলের কাছে দাঁড়িয়ে আমি বিস্মিত, হতবাক!
নারী শরীরের মত জ্যামিতি আর কোথাও নেই,
মাংসের মানচিত্রে সপ্ত-মহাদেশে আমি মার্কো পোলো
আমার জাহাজ প্রথমেই গিয়ে নোঙ্গর করে ঠোঁটের ঘাটে।
সেখানে তিন রাত্রি থাকি আমি এবং ঘুমিয়ে পড়ি,
ইউক্লিড আর পিথাগোরাস হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন গোলকের মধ্য বিন্দু,
অথচ তাদের প্রেমিকা না থাকলেও বউ ছিল।

গনগনে গলার নদী ধরে কানের কিনারা ঘেষে চলে আসি পাহাড়ের দেশে,
সেখানে আমার অনভ্যস্ত আঙুল পিয়ানোর সুর তোলে,
দুধদেশে তখন সাঁওতাল নৃত্য!
দুলে উঠে আসমান, পৃথিবী, আটলান্টিক, আমাজানের তটরেখা এবং সমস্ত আমি..
আমার ভিতর জেগে উঠেন কামনার ভগবান!
অথচ হতে চাই পূজারী
আমি স্বপ্ন দেখেছি সামবেদীয় পুরোহিত হবার,
ঠোঁট দিয়ে পূজো করি আশ্চর্য গোলকদ্বয়
যাদেরকে মনে হলো যমজ বোন অথবা কোমল কমনীয়তার অনন্ত উদাহরণ!

আমি ভুলে যাই মহাদেশ, সাত আসমান
ভুলে যাই জাহাজ, ভুলে যাই পুঁজিবাদ
আমি ভুলে যাই আমি অভিযাত্রী,
পরিব্রাজক বা প্রেমিক।
আমি হয়ে উঠি কেবল আমি, হয়ে উঠি সুর স্রষ্টা,শিল্পী এবং কবি…!

বুকদেশে প্রায় অর্ধযুগ ছিলাম
ঐ সময়য়ে পৃথিবীতে কতটা মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে বা কতটা সরকারি সফর আর চুক্তি বাতিল হয়েছে সেটা গৌণ হয়ে পড়েছিল,
আমার কাছে মুখ্য ছিল পূজো করা।
ঠোঁটে ভর করে এলিগেটরের মত নেমে আসি চুমুফুল ছিটিয়ে-ছিটিয়ে একনায়কতন্ত্রী নাভীদেশে।
আমি সেখানে শাসন করি এক কোটি বছর,
সূর্যকেন্দ্রিক পৃথিবীর মত জিবের ডগা দিয়ে চক্কর খাই নাভীর কক্ষপথে,
প্রতিমা কাঁপতে থাকে দশমাত্রিক ভূমিকম্পে!

আমি খুঁজতে থাকি মন্দির
আমি জানিনা ঐ পবিত্র শহর কোথায়,
ইতালীর মধ্যখানে আছে পবিত্র রোম,
আমি জানতাম;
কিন্তু আমি জানি না ইতালী কোন দ্রাঘিমাংশে।

নারী বা প্রতিমাটি হরতনের মত উল্টে যায়
আমি তার পিঠের সাম্রাজ্যে দ্য বিলি কিডের ঘোড়ায় চড়ে চুলের বনের ভিতর হারিয়ে যাই,
ঘাড়ের উপকূলে গরম নিশ্বাস ঢেলে আমার অস্তিত্ব জানার চেষ্টা করি,
মেরুদন্ড বেয়ে জিবের তুলিতে আঁকিবুকি করি
আমি হয়ে উঠি বিখ্যাত শিল্পী,
ম্যাডোনার মত বিখ্যাত চিত্রকর্মটিও পিঠের কারুকাজের কাছে অর্থহীন এবং হাস্যকর হয়ে উঠে!

আমি জানি না স্বর্ণমন্দিরটি ঠিক কোথায়
আলিফলায়লার জাদুর পাটিতে উড়ে আমি চলে যাই দেবী বা নারীটির পায়ের কাছে,
তার আঙুলকে মনে হয় গন্ধম,
আমার পাপ করার ইচ্ছে জেগে উঠে এবং পান করতে থাকি আঙুলফল!

আমি জানি না তখন আমি কোথায়
পাপের পাহাড় আমাকে কোথায় নিয়ে গেছে কে জানে!
আমি কি এশিয়া প্যাসিফিকে? হাডসন বে তে? গুয়েতমালায়? অ্যামাজানে? গভীর জঙ্গলে? নাকি নেশাতুর মাংসল স্বর্গে?
জানি না, জানার প্রয়োজনও ছিল না
আমি নগন্য পূজারী,
আমাকে পৌঁছাতে হবে প্রচ্ছন্ন বেদী মূলে….
পা-গুলোকে মনে হয় প্রণালী অথবা ব্রীজ অথবা পুলসিরাত স্বর্গে যাবার রাস্তা।

আমি স্বর্গে যাবার রাস্তা ধরে এগিয়ে যাই
জন্ম আর মৃত্যুর মত জাগতিক বোধ পেরিয়ে আমি হয়ে উঠি অমর,
হয়ে উঠি পিতা ও পিতামহের আজ্ঞাবহ বাহক
হয়ে উঠি আদিম সুন্দর!

ওফেলিয়া… তুমি কি আমাকে বলবে যে আমি ঠিক রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছি কি না?
নাবিক, এগুতে থাকো চুপচাপ কোলাহলে
সামনেই দেখতে পাবে সভ্যতার দরজা
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম আনন্দম।


পোষা

বিছানার দিকে যাইতে-যাইতে বিছানাও আগায়া আসে,
পোষা বিড়ালটা দৌঁড়ে আসে ডাক দিতেই
পায়ের পাতায় নাক ঘষাঘষি করে,
কোলে তুইলা নাও
বুকে চেপে ধরো
আরামে বিড়ালটা চোখ বন্ধ কইরা ফেলে
আরও আদর চাই তার
তুমিও চোখ বন্ধ করো।

তোমার এতো আরাম কেন?
বিড়ালটা কি তোমার ভিতর পুরুষ হয়ে ঢুইকা যায় অবচেতনে?

কেউ কেউ কুত্তা পালে।
কম দামী, বেশি দামী।
পার্কে যায় কুত্তা লইয়া, হাঁটে
শরীর হাতায়া দেয়
কুত্তাটা আরামে চোখ বন্ধ কইরা ফেলে।
কুত্তাটার এতো আরাম কেন?
কুত্তাটার ভিতরে কি একটা কুত্তি ঢুকে পড়ে গোপনে?


প্যারালাল

তুমি এমন কইরা দিনদিন ফুরাইয়া যাইতেসো কেন
মনে হইতেসে ইউ আর দ্যা লোনলিয়েস্ট হুয়েল অফ আর্থ।
তুমি তো ইন্ট্রোভার্ট না, রাইট?
জলও তো সবসময় গড়ায় না; ভাইসা বেড়ায়, এটমোস্ফিয়ারে-
মেঘ নামে ডাকি।
তুমিও বক্ষবন্ধনী খুইল্যা তাড়ায়ে দিতে পারো
ল্যা শ্যাটেলিয়ার, সংসদ ও ক্লাউন ও সেরিফদের আলাপ,
আলাপের ইস্কুল পাশ করতেই হইবে ক্যান?

বরং নামো বা উইঠা পড়ো মাংসের অর্গানে
জলযানে; লাউডস্পিকারে বাজুক রেডিওহেড বা পিংক ফ্লয়েড বা শিৎকারের গান বা ঘনতর নিরব আলাপের হার্জ,
আর একটি নিরব নির্জন হাইওয়ে ধইরা অন্ধকারে ভর কইরা চইলা যাক নগর ও নীতি,
উইন্ডশিল্ডে বাসযোগ্য গোপণ যাপনে মদ ফুরাইয়া যাইবার আগে-
গমন করতে থাকি একে অন্যের নক্ষত্রপুঞ্জে
যখন একটি ওয়ার্মহোল আমাদের অধিকারে আছে, ঠিক বলসি না?


মাগী

মাগীটার পেট বরাবর একটা লাত্থি না দিতে পারার রাগ পাগল কইরা দিতেছে,
ওরে যদি একটা ট্রাকের নিচে ফালায়ে দিতে পারতাম-
কার্দাসিয়ান বুনি গুলা চ্যাপ্টা হইয়া কৃষ্ণচূড়া ফুটতো
বা একটা গরম হলুদাভ লালচে রড ওর ভোদায় ঢুকাইয়া দিতে পারলে,
বাষ্প হইয়া যাইতো বাজারি পুরুষদের থুয়ে যাওয়া বীর্য আর কনডমের লুব্রিকেন্ট।

মাথায় আগুন ধইরা যাইতেছে,
ঐ আগুন দিয়া যদি মাগীটার পাছায় আগুন লাগাইতে পারতাম-
এই প্রবল শীতের সন্ধ্যায় রোয়াউঠা কুকুর গুলো উষ্ণ হইতো,
আগুনের পারদ নামতো,
সুস্থ হইতাম।

অসুস্থ হইয়া যাইতেছি,
মাগীটারে যদি কিছু আর্সেনিক খাওয়াইতে পারতাম-
যদি একটা ব্লেড দিয়া বুনিটারে আলগা কইরা বুভুক্ষু কুকুরের মুখে ছুইড়া দিতে পারতাম,
লেজ নাড়াইতে নাড়াইতে সে একটা অলিম্পিক লাফ দিতো,
খপ কইরা ধইরা দৌঁড় দিতো লেজ নাড়াইতে নাড়াইতে।
আমিও পালাইতে পারতাম।

দালালের হাত দিয়া পাইছিলাম,
মাগীটা এখন নিজেই দালালী শুরু কইরা দিছে-
বেশ্যাদের
অর্থনীতির
মানবেতর যাপনের।

মানবতার দালালদের কে চুদে আজকাল!

বেশ কয়েকটা ডাউসদের মধ্যে তারেই মনে ধরছিলো,
মাংসল
ভরাট
তুমুল ও তীব্র।

মাগীটা সময় ক্ষেপনে তার ভাবগুরুরেও ছাইড়া গেছে মনে হয়,
বালের আলাপ শুরু কইরা দিছে সময়ের পাছা মারতে।
সময়ের দাম ম্যালা,
চোদাইতে আইসা শীবের গীত গাইবে আচোদারা,
ইজম ফলানীর জন্য শাহবাগ তো আছেই
বিরিয়ানিও আছে
চোদাচুদিও আছে নাকি?

এক ঘন্টা সময় আছে,
সময় থাইমা নাই
যাইতাছেগা প্রশ্রাবের মতো সুরসুর কইরা,
আর এইদিকে এথিক্স মারাইতেছে মাগীটা
প্রেম মারাইতাছে
দ্রোহ আর সমাজ মারাইতাছে।

রাগে মাথায় আগুন ধইরা যাইতেছে আমার,
কানের ফুটা দিলা গলগল কইরা লাভা বাহির হইতেছে,
আর শালীটা
ইউনিভার্সিটি মারতেছে
১০ মিনিট গেছে,
গণতন্ত্র মারতেছে
২৫ মিনিট গেছে,
আগুন জ্বলতাছে শরীরে
রক্ত ফুটতেছে।

একটা জামা খুলতে ৩০ মিনিট লাগে!
মাগীটার হোগায় কি টাইম স্লো চলে?

দাঁতে দাঁত চাইপা নিজেরে কন্ট্রোল রাখতেছি,
ইচ্ছে হইতেছে
ধোন কাইটা মাগীটার হাতে ধরাইয়া কই-
নে খানকি, তোর টাইমে তো লাগায়া বইসা থাক।


বড়দের বর্ণ পরিচয়

সীমান্ত ভাগ করে জমি,আইন ও ইত্যাদি
মৃত্যুতে কি ভাগ হয় সম্পর্কের আয়ু?
যেহেতু মৃত্যুর থেকে বড় সীমান্ত নয় কিছুই
তাই মদ আর জলের মতো মিশে যেতে পারি আমরা
একটু সাহসে,
একটু পাপে ও অনুতাপে।

প্রতিটা মানুষই দর্জি
কী চমৎকার করে বুনে জামা, লেইস-ফিতা-লেইস!
সম্পর্কের জামায় সেলাই করতে-করতে
কেউ কি নিজেই জামা হয়ে উঠে না?

যেমন আমি হয়ে উঠি পরিধেয়
পরতে দিই কারো মাপে
সেলাই করা জামা আমার মাংস এবং পাপে।
যারা এখনো নক্ষত্র দেখার জন্য আকাশে তাকায়,
অবসর কাটাতে যায় দিঘা বা মিয়ামী
তারা কি জানে প্রেমিকার নাভী হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সৈকত,
অনতিদূর পবিত্র পাপের মালভূমি?

সেদিন এক সমুদ্র ভ্রমণে
হাতছানি দিয়ে ডাকে দ্রাবিড় নিসর্গে একা একটি প্রচ্ছন্ন মুখ,
উজ্জ্বল আর গভীর!
বাগানের কোমলতার আড়ালে এক মধুবন
অভাবনীয় সুরার পাত্র যেনো- স্থির, ধীর।

তাকাই!
বিম্ময়ে উপচে পড়ে আমার গোপণ হতে লাজ,
নেশাতুর হই
হয়ে যাক তবে জন্ম মৃত্যুর বোঝাপড়া আজ।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই ছোঁই
আর উঠি বেঁচে।
পাপ জেনেই স্পর্শ করি
আর একটি ফিলিস্তিনি প্রেমিক যেনো আমার বুকে গুটিসুটি বসে আছে।

নেশা নিশ্চিত জেনেই পান করতে ঠোঁট বাড়াই
উন্মুখ অনন্ত বিভোর অধর
কেবল একটিমাত্র ইশারায় নিশ্চিত হয় আমার জন্মান্তর।

সে হয়ে উঠে লাইব্রেরি অব আলেকজান্দ্রিয়া
নিজের ভিতর জেগে উঠে মহারাজ-
কঠিন হয়, আরও আরও আরও
আমি যেনো বর্ণ পরিচয়হীন,
পড়তে থাকি- অ তে অজগরটি অনেক বড়।

সে হয়ে উঠে আমার হাতেখড়ি,মিস ও আকাদেমি
নিয়ে চলে বিদ্যা ও বুদ্ধিনাশে আরো গভীরে!
আ-তে আস্তে! আহ্! ধীরে!

পাঠ-পরে চোখ তুলে আমি যেনো জন্মান্ধের চেয়েও বেশি অন্ধ হয়ে যাই,
জন্মান্ধরা তো তবুও চলতে পারে।
আর আমি দিশা পাইনা
দেখতে পাইনা কিছুই এপার-ওপারে।

বা দেখতে পাই বা দেখেও বুঝতে পারি না
বা পারি বা পারি না, হয়তো মুহূর্তেই খরচ করে ফেলেছি চোখের সবটুকু জ্যোতি!
কেউ পড়ায়
পড়ি, ম-তে যেমন ইচ্ছে মাত করো কিস্তি।

তারপর আর মনে নেই, কি হয়েছিলো, কতটুকু
কতবার আনাগোনা!
খালি আবছা-আবছা মনে পড়ে কেউ আমাকে পড়াচ্ছে,
পড়ো-
দ-তে সকল দুধে সর পড়ে না।
এবং প্রমাণ করো।

আপনার মতামত জানান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।