অনুবাদ

নিলুফার নিকসিয়ারের কবিতা

নিলুফার নিকসিয়ার ১৯৮৭ সালে আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়াশুনা করেন। তালেবানের উত্তানের পর রাজধানী কাবুল ছেড়ে তিনি সপরিবারে হেরাতে চলে যান। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর তিনি হেরাতে স্কুলের পড়াশুনা শেষ করেন। ২০১০ সালে হেরাত বিশ্বিবদ্যালয় থেকে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। দশম শেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি প্রথম হেরাত সাহিত্য সঙ্ঘের সাথে সম্পৃক্ত হন। তখন থেকেই তিনি একজন সক্রিয় সদস্য। তার সৃষ্টি ‘কোজাহা হানুয এসতাদা-আন্দ’ (এখন তারা কোথায় দাঁড়াবে? ২০০৮), ‘ইনজা চাহারশানবে আস্ত’ (এখানে বুধবার, ২০১০) এবং ‘ইনজা নাগুফতাহা আস্ত’ (এখানে অনেক কিছুই না বলা রয়ে গেছে, ২০১০) সহ বেশ কিছু সাময়িকী ও সংকলনে প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ হবার পথে।

হলি কাউ প্রেস থেকে প্রকাশিত আফগান নারীদের কবিতার সংকলন ‘লোড পোয়েমস লাইক গানস’ থেকে নিলুফার নিকসিয়ারের ৪টি কবিতা তরজমা করেছেন কায়েস সৈয়দ। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সংকলনের সম্পাদনা করেন ফারজানা মারী।  

সম্পর্কিত

গজল ১

পুনরাবৃত্তি পুনরাবৃত্তি এবং আবারো পুনরাবৃত্তি
করতে করতে করতে করতে আমি এখন ক্লান্ত
দেয়ালের কাঁধে মাথা রেখে… পুনরাবৃত্তি
জীবন প্রেম আর আরাম
খারাপ স্বাদ ছেড়ে তাই
একাই ভোগ করি এই একগুঁয়ে হুল… পুনরাবৃত্তি

যন্ত্রণা আমাকে আঁকড়ে ধরে গভীর থেকে গভীরে
যেনো মৃত্যু-ছুরি-রক্ত-নাটাইর অবিরাম পুনরাবৃত্তি

এই তিক্ত গল্পের যন্ত্রণাগ্রস্ত কথককে শোনো
শ্বাস-প্রশ্বাসে গড়ে তোলে জীবনের গল্প… পুনরাবৃত্তি

কতোটা খারাপ লাগে একবার বিশ্বাস করো
আমার পাশে রেখে যেও না একটি খালি আসন


গজল ২

অনুভূতির পলল
গানের ঢেউ প্রবাহিত
তোমার হাতের পুকুরে
সাথে তোমার দৃষ্টির গভীরে
শত শত আগামী-জানালা
শত শত বসন্ত
শত শত রঙিন উদারতা
আর মিষ্টি উদ্বেগ প্রবাহিত
যেনো প্রবাহিত মধুর প্রতিচ্ছবি
তোমার কানাঘুষোয় আমি হারিয়ে যাই
আর খুঁজে পাই
আমার এই হারিয়ে যাওয়ার মাঝে
একটি দ্বন্দ্বের সমুদ্র প্রবাহিত
যেনো তোমার অনুভূতি আমাকে ভরিয়ে দেয় প্রতি নিঃশ্বাসে
যেনো গানের মতো তোমার এই সুন্দর অনুভূতি প্রবাহিত


গজল ৩

সে শুধু তার চোখ দিয়েই নিখাদ গজল গাইতে পারতো
আমার জীবনের শুকনো সময়ে জলের গান গাইতো

রাত্রি যখন তার বিষণœতা নিয়ে আসতো আমার মনে
কতো সহজে সে আমার তরে জ্যোৎস্নার গান গাইতো

কণ্ঠ তার সাত শহরের গানের সুর ধরতো
যখন আমার ক্লান্তির তরে ঘুমের গান গাইতো

রাতের বেলা অবিরত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতো
বৃষ্টি আর বাগানের প্রেমের গানে শিহরণ জাগাতো

এখন আমি আস্থা রাখি স্মৃতির ওপর
কোথায় সে যে পবিত্র গান গেয়েছিলো আমার তরে?


রাতে এই জনশূন্য পাড়ায়

রাতে
এই জনশূন্য পাড়ায়
মনের পাশ-রাস্তায় আঘাত করে প্রলাপ
আমার ভিতরে হেঁটে বেড়ায় মৃত এক ব্যক্তি
ক্ষয়প্রাপ্ত হয় আমার রাস্তা

রাতে
এই জনশূন্য পাড়ায়
বুলেটে নিমজ্জিত গ্রাম
চূর্ণবিচূর্ণ একটি বাড়ির প্রান্তে
রক্ত তখনও বইছে

প্রতীক্ষা করা
নিজের নীরবতায় ডুবে থাকা
বসে বসে রাস্তা দেখি
রাস্তা গিলে ফেলেছে তোমার পায়ের ছাপ
আমি একটা কূপ দেখি তোমার পথে
আমি নিজেই ক্লান্ত
আমাকে সাহায্য করো
আমার মৃত্যুকে সামান্য ত্বরান্বিক করতে
আমার মস্তিষ্কের দেয়ালে আবারও দুঃস¦প্ন আঁকতে

একটি জ¦রে আরও একবার পুড়ছে ঘর
ঘরের মধ্যে দীর্ঘায়িত স¦প্ন
একজন নারী সেখানে বসে আছে তার ভয় নিয়ে
তার রোগের চিৎকারের ভয়

রাতে আমি ব্যথায় কাতর
সারারাত প্রলাপে সিক্ত
আমার হৃদস্পন্দন একেবারে শীতল
হাতুড়ি আর নেহাই এর মতো
ব্যথার পুঞ্জ দিয়ে ফুলে যায় সময়
কেটে গেছে রাত
লাথি মারা একটি কুকুরের চিৎকার
ছড়িয়ে আছে সবখানে

আপনার মতামত জানান

কায়েস সৈয়দ

কায়েস সৈয়দ; কবি ও অনুবাদক। জন্ম ১৭ মে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে। বেড়ে ওঠা বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। প্রকাশিত বই- ‘পাবলো পিকাসোর কবিতা’ (অনুবাদ কবিতা), রৈখিক রক্তে হিজলফুল (কবিতা), যুদ্ধ বিদ্যালয় (অনুবাদ কবিতা) ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।