মেঘনাদবধ। প্রকাশ ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ। ক্লাসিক আদর্শে লিখিত এ কবিতার বইয়ের মূল প্রবৃত্তি রোমান্টিক। এ বই পড়তে পাঠকের মনে কবি’র জীবন এবং কাব্যের সমন্বয় না হলে বিভ্রান্তি বিচিত্র নয়। মধুসূদনের আবেগী—বন্ধনহীন জীবনের ফাঁকে ফাঁকে তাঁর জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে সেই যুগের যে যুগ-প্রবৃত্তি ঘর বাঁধে, তা পরবর্তীতে তাঁকে প্রতিভায় উন্মেষিত করে ছিলো। সেই সময়ের বাঙালি সমাজের প্রাণে জড়তা-বিমূঢ়তা চরমাকার ধারণ করেছিলো। তাঁর সময়ে ইংরেজি শিক্ষিতরা ছিলো নৈতিক সমস্যা—সংকটে। অল্পশিক্ষিত ধনীদের আদর্শ বিপর্যয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছিলো। সে সময় মধুসূদনে একটা বিদ্রোহীভাব জেগে ওঠে। অনেকে বলেন—তখন তাঁর মধ্যে চিন্তা বা বিচার-বুদ্ধি ছিলো না। এ কথার সাথে আমাদের দ্বি-মত আছে। যে সমাজে পাগল না হলে সত্য বলা বিপদ, সে সমাজে ইচ্ছেকৃত পাগল হওয়া মানে বিচার-বুদ্ধিশূণ্যতা নয়। হিন্দু কলেজে থাকতে তিনি স্বজাতি হিন্দুদেরকে ছোট করে অন্যদেরকে বড় ভাবতে শুরু করেন, তা অনেক হিন্দু প-িতদের অভিযোগ। কিন্তু প্রশ্ন, হিন্দু কলেজে যারা স্বজাতীর কর্তধার ছিলেন তাদের অধিকাংশ কি ইংরেজদের চিন্তা-চেতনা এবং আদর্শে লালিত ছিলেন না? তাই মধুসূদন ভ-ামি না করে সরাসরি খ্রিষ্টান হয়ে যাওয়াকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন। রামমোহন—দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো তাঁর সত্ত্বায় সমাজ সংস্কারের ব্যাকুলতা কিংবা অধীরতা ছিলো না, তিনি নজরুলের মতো রাজনৈতিক— সামাজিক অনিয়মের বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠে বিদ্রোহও করেননি। তবে যারা বলেন, ধর্ম বা নীতিঘটিত তত্ত্বজিজ্ঞাসায় তিনি ব্যাকুল ছিলেন না, স্বজাতির প্রতি ছিলো তাঁর অবজ্ঞা, ইংরেজদের প্রতি ছিলো মোহ, আর এসব কোন চিন্তকের কাজ নয়। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলব— মধুসূদন কত বড় চিন্তক, তাঁর ভেতরে স্বজাতী-প্রীতি কত বেশি তা বোঝার মতো মানসিকতা কমপক্ষে কলকাতাকেন্দ্রিক আর্য-মানসিকতা সম্পন্ন কিংবা ওদের সংস্পর্শে প্রভাবিত কারও থাকার কথা নয়। পিতৃধর্ম হিন্দু সম্পর্কে তাঁর মনের ঘৃণা মধুসূদনের পত্রাবলীতে প্রকাশিত।
রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ও ইসলাম এই দু’ধর্মের প-িত ছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন কলম-কাগজে। ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ গঠন করে নিজ সমাজের মানুষকে নব্য হিন্দুধর্ম থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের দাদা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জগদীসচন্দ্র বসু এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের চিন্তার শিষ্য। তারা অসংখ্য দেবতার নয়, নিরাকার ঈশ্বরের বিশ্বাসী ছিলেন। মধুসূদন সেদিকে না গিয়ে সরাসরি খ্রিষ্টান হয়ে যান। অতীন্দ্রিয়ে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান বা যুক্তিবাদ তাঁর মনে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও মধ্যযুগীয় সংস্কারে প্রচ- আঘাত দিলে তিনি আলোড়িত হলেন। যা তৎকালীনসময় হিন্দু কলেজের আরো অনেককেই আলোড়িত করেছিলেন। মূলত ওরা-ই ছিলেন ‘ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটি’র সংগঠক। মধুসূদনে হিন্দু-চিন্তা না-থাকলেও বাঙালি-প্রীতি ছিলো। যার প্রমাণ—‘মেঘনাদবধ কাব্য’।
বাল্মীকি রামায়ণে নায়ক দিয়েছেন রাম’কে। মধুসূদন রামকে নায়কত্ব থেকে সরিয়ে লঙ্কার রাক্ষস-রাজা রাবণ’কে কাব্যের মূল নায়ক করে নিলেন। যা ভারতীয় রামায়ণ পাঠকদের চিন্তারাজ্যে প্রচ- ধাক্কা মারে। এখানে রামায়ণ তো শুধু সাহিত্য নয়, হিন্দু বিশ্বাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসও। এ সম্পর্কে মধুসূদনের বক্তব্য— the idea of Ravan elevatss and kindles my imagination He was a grand fellow.
ভারতবর্ষের আর্য-অনার্যের যুদ্ধগুলোর ইতিহাস দেখি, তখন মধুসূদনের মহাকব্যের বীররসে বিস্মিত হতে হয়। মধুসূদনের কি অসাধারণ সাহস, বাল্মীকির রামায়ণে যে রাক্ষস ঘৃণিত, তাকে মধুসূদন কর্মে-সাহসে মহান করে দিয়েছেন। সেই সময় কিংবা আজকের সনতনধর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে রাবণকে রামের উপর নায়কত্ব দান! সহজ কথা নয়।
মধুসূদন তাঁর মেঘনাদবধের সমস্ত কবিতায় বাল্মীকির রামায়ণের রাক্ষসকে মানুষের বীর্য, ঐশ্বর্য্য, প্রাণের প্রাবল্য ও বীরোচিত অহংকার দিয়ে নতুন করে সাজিয়েছেন। তাঁর কাছে নৈতিক মহত্ত্ব ও আধ্যাত্মিক শ্রেষ্ঠত্ব কোন বিষয় ছিলো না। তিনি রাবণ ও মেঘনাদকে বিবেচনা করেছেন মানবিক দৃষ্টিতে। মধুসূদন রাবণকে নায়ক করেননি, মূলত এতে রাবণের ভেতরে নিজেই নায়ক। আর তিনি মূলত তিনি নয়, তিনি এখানে নির্যাতীত মানুষের প্রতিনিধি। মধুসূদন যখন রামকে ভীত, দ্বিধাগ্রস্ত এবং কাপুরুষ বলেন, তখন অনেকই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এজন্য মধুসূদনের উপর নারাজ। বাল্মীকির রামায়ণে রাম বাহিনীর আরেক চরিত্র—বিভীষণ। বিভীষণ সম্পর্কে মধুসূদনের কথা- ‘সে ধর্ম-বিশ্বাসের কারণে মানুষের স্বভাবধর্ম থেকে বিচ্যুত, ধর্মের ভয়ে সে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়েছে।’ প্রকৃত অর্থে বিভীষণ মীর জাফরের মতো একটা বিশ্বাস ঘাতক ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা যদি বাল্মীকির রামায়ণের পাশে মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ পড়ি, আর এ দু-এর পাশে ভারতবর্ষের আর্য-অনার্যের যুদ্ধগুলোর ইতিহাস দেখি, তখন মধুসূদনের মহাকব্যের বীররসে বিস্মিত হতে হয়। মধুসূদনের কি অসাধারণ সাহস, বাল্মীকির রামায়ণে যে রাক্ষস ঘৃণিত, তাকে মধুসূদন কর্মে-সাহসে মহান করে দিয়েছেন। সেই সময় কিংবা আজকের সনতনধর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে রাবণকে রামের উপর নায়কত্ব দান! সহজ কথা নয়।
কবি কৃত্তিবাস এই সাহস করেননি। তিনি রাক্ষস পরিবারের কোন কোন সদস্যের চরিত্রকে কোমল করলেও বাল্মীকির মানুষ রামকে ঐশী রাম বানিয়ে নিয়েছেন। মধুসূদন সব ভেঙে রাবণকে সরাসরি নায়ক করে দিলেন। এই কবিতার বইতে মেঘনাদ মূলত রাবণের বিচ্ছিন্ন একটা অংশ, রাবণ-চরিত্রের পরিপূরক। এতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কবি রাবণের ভাগ্য নিয়ে-ই কল্পনা করেছেন, শুধু ট্র্যাজেডিকে পুষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ করতে মেঘনাদের মৃত্যুকে প্রধান ঘটনায় রূপ দিয়েছেন। এখানে রাবণের মৃত্যুকে প্রধান ঘটনা করলে মেঘনাদের মৃত্যুর পর রাবণ মানবিক এবং দেশাত্মক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে পাঠক বঞ্চিত হতেন এবং কবিকল্পিত মানবজীবন ও মানবভাগ্যের চিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যেতো। মেঘনাদ বধের সংবাদে রাবণ যা বলেছেন, তা একদিকে রাবণের বীরত্ব, অন্যদিকে দেশপ্রেম প্রকাশ করে—
‘লঙ্কাপতি হরষে বিষাদে
কহিলা; ‘সাবাসি, দূত! তোর কথা শুনি,
কোন বীর-হিয়া নাহি চাহে রে পশিতে
সংগ্রামে? ডমরুধ্বনি শুনি কাল ফুী
কভু কি অলসভাবে নিবাসে বিবরে?
ধন্য লঙ্কা, বীরপুত্রধরী! চল, সবে,-
চল যাই, দেখি, ওহে সভাসদ জন
কেমনে পড়েছে রণে বীর-চূড়ামণি
বীরবাহু; চল, দেখি জুড়াই নয়নে।’
এখানেই মূলত মধুসূদনের মূল চিন্তা এবং বক্তব্য, যা মেঘনাদবধ’কে দ্রাবিড় বাংলার প্রতিনিধিত্বশীল রামায়ণে রূপান্তরিত করেছে।
ভারতীয় সাহিত্যে দৈত্য-দানব-রাক্ষস প্রভৃতি চরিত্রে মানবীয় আদর্শের স্পর্শ থাকলেও তা সর্বদাই ঘৃণিত। কেন এ ঘৃণা? মূলত যারা এসবের লেখক তারা ছিলেন বিজয়ী শাসকগোষ্ঠির মদদপুষ্ট। আধিপত্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠির বিজয়ে প্রতিপক্ষ দেশপ্রেমিকেরা সর্বদাই থাকেন গাদ্দার, যবন, রাক্ষস, সাপের জাত, পাখির জাত, দৈত্য-দানব ইত্যাদি। অথচ ক্ষেত্রবিশেষ ওদের মধ্যেই লুকিয়ে থাকেন যুগের মহান নায়কেরা। মধ্য এশিয়া থেকে এসে আর্যরা ভারতবর্ষে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করলে স্থানীয়রা, বিশেষ করে দ্রাবিড় বাঙালিরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। আমরা যদি ইতিহাসের এই পর্বকে সামনে নিয়ে বলি— রাম হলেন আর্য রাজার চরিত্র, আর রাবণ স্থানীয় রাজা কিংবা স্থানীয় মানুষদের নেতা, তা কি ভুল হবে? বাল্মীকি কি রামের সমসাময়িক? এ প্রশ্ন তো আমরা আগে রেখে এসেছি। এখন আরেকটা প্রশ্ন রেখে যেতে চাই— রাম কি এক ব্যক্তি, না মিশরীয় ‘ফেরাউন’দের মতো রাজা বা নেতাকেই রাম বলা হতো? রামায়ণ যদি বিভিন্ন সময়ের সৃষ্টি হয় তবে রাম কেন বিভিন্ন সময়ের চরিত্র হবে না? এই প্রশ্ন এখানে থাক। আমরা ফিরে যাই মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ’-এ। মেঘনাদবধ পাঠকালে পাঠককে আর্যীয় সকল রামায়ণের কথা ভুলে যেতে হবে। কারণ, তার আখ্যানবস্তু পুরান আর্যীয় হলেও বক্তব্য অনার্যিয় এবং নতুন। বাল্মীকির রামায়ণের ভক্তদের কেউ যখন মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ’ পড়ে দেখেন, এতে রাবণ আর রাক্ষস নয়, রাম আর ভগমান নয়, তখন অভিযোগ করে বলেন—‘ভারতীয় অন্যান্য অনেক কবি’র মতো মধুসূদন কেন রাম-লক্ষ্মণ, সীতার চরিত্রে নতুন মহিমা ও মাধুর্য দিয়ে অমর হওয়ার চেষ্টা করলেন না? তাঁর কল্পনার পক্ষে এ সকল চরিত্রের মহিমা কি এতই অপর্যাপ্ত? তখন উত্তরে কবি মোহিতলাল বলেন— ‘মধুসূদনের কবিপ্রেরণার মূলেই যে রামায়ণ নয়, তা বুঝতে হবে। তিনি রামায়ণকে কাহিনি হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তা তাঁর কাছে গৌণ সহায় মাত্র, মূল বিষয় নয়।’ (কবি শ্রীমধুসূদন)। তারা তাতেও সস্তুষ্ট নয়। তাদের কথা—মধুসূদন ঋষি-কবি বাল্মীকির এই লোকশ্রুতিত আদর্শকে বাদ দিয়ে অন্যত্র দৃষ্টি দিলেন না কেন? আমরা এর উত্তরে বলবো—মধুসূদন অনার্য বাঙালি, যশোহরের দত্ত পরিবারের ছেলে। আর্যরা অনার্যদের ইতিহাসকে রাক্ষস বানিয়েছিলো, মধুসূদন তা পাল্টিয়ে রাবণ এবং মেঘনাদকে মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে সর্বোপরি স্থাপন করেছেন মাত্র।
মধুসূদনকে বলা হয় ইংরেজ-ভক্ত। কিন্তু তিনি পোশাকে আর খাবারে ইংরেজ ছাড়া মনে-প্রাণে ছিলেন বাঙালি। তিনি তৎকালীনইংরেজ-রাজ কিংবা ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কথা বলেছেন। বাল্মীকির রামায়ণ পাঠকালে তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছেন রাম, লক্ষ্মণ ও বিভীষণরূপী সমাজের পতন। ‘মেঘনাদবধ’-এ তাঁর মনের কথাতো আর গোপন থাকেনি। কিন্তু তাঁর প্রচ- ইচ্ছেয়’তো আর সাম্রাজ্যবাদী-আগ্রাসীশক্তি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যাবে না। তাই কবি’র মনে অত্যন্ত ক্ষোভ ওদের প্রতি। মেঘনাদকে হত্যার দায় কবি’র নিন্দা এবং ঘৃণার পাত্র লক্ষ্মণ। এ ঘৃণা এবং আক্রোশের ভাষা তিনি ধারণ করতে পেরেছেন ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’। তাই ‘মেঘনাদবধ’ খাঁটি বাঙালি মহাকাব্য বা রামায়ণ হয়ে উঠেছে। ‘মেঘনাদবধে’ অঙ্কিত মধুসূদনের রাম চরিত্র—ভ্রাতৃস্নেহের অত্যধিক প্রাবল্যে পৌরুষের শেষ লক্ষণটুকুও হারানো এক মানুষ। আর বিভীষণ তাঁর দৃষ্টিতে রাজ্যলোভী এমন গৃহশত্রু—যে স্বার্থ ও পরমার্থ-সাধনের উদ্দেশ্যে নিজের মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়েছেন। ফলে তার চক্রান্তে ও সহয়তায় মেঘনাদ খুন হন। অপরদিকে তিনি রাবণের সব দুঃখ ও পরাজয়ের কারণ বলেছেন- স্নেহশীলতা। রাবণের প্রজা-স্নেহের চিত্রটি সত্যি পাঠক বিবেককে ভাবিত করে। পুত্র মেঘনাদের মৃত্যুতে রাবণের স্ত্রী চিত্রাঙ্গদা (যাকে মধুসূদন সতী বলেছেন) যখন স্বামীর দিকে চেয়ে পুত্রশোক প্রকাশ করছিলেন তখন রাবণের কি অসাধারণ উত্তর—
‘এক পুত্রশোকে তুমি আকুলা ললনে,
শত পুত্রশোকে বুক আমার ফাটিছে
দিবানিশি! হায়, দেবী..।’
মধুসূদন দত্ত তাঁর চিন্তা, ছন্দ এবং কবিতার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ অনেকের কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু’র আক্রমণের কারণ আব্দুল মান্নান সৈয়দের মতে— ওদের লিরিক স্বভাব। অনেক সমালোচক মধুসূদনের সমসাময়িক কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৯০৩)-এর সাথে তাঁর ‘মেঘনাদবধ’-এর বিচার করে বলেন—‘হেমচন্দ্রের মহাকাব্যের মতো ‘মেঘনাদবধ’ হয়নি’। তাদের জবাবে কবি মোহিতলাল মজুমদার বলেন— ইহাই আমাদের সৌভাগ্য; কারণ তাহা হইলে আমরা একটি নকল মহাকাব্য- একটি চূড়ান্ত বীররসের পদ্মময় গদ্য-সদ্য মাত্র লাভ করিতাম, এমন একখানি কাব্য পাইতাম না। ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যের কবিত্ব এই হিসাবে আরো খাঁটি যে, এই কাব্য সেই যুগেরই অবশ্যম্ভাবী ফল; ইহার অন্তরালে যে কবি মানস রহিয়াছে, তাহা সেই যুগের ই আবহাওয়ায় উৎপন্ন ও পরিপুষ্ট হইয়াছে।’ (কবি শ্রীমধুসূদন)।