আমি এক মাতাল সার্কাসম্যান
হৃদপিন্ডের খুব কাছাকাছি বাজছে যে সানাই, করুণ রোদনে তাকে জানানো হয় না -বিছানায় টং হয়ে বসে থাকে রাত।শরীর অনুবাদে হেসে উঠে গগলসের চোখ, আমাদের দেখা হয় না….
চুত্মারানী শব্দের জুতসই ব্যবহার শিখতে পারিনি বিধায়, আজও মূল্যহ্রাসের জীবন লাইনে দাড়ায়, পাজামা খুলে দেখাতে হয় কুমারীত্ব। অবশ্য, অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, বহু পুরানো দৃশ্য । বিরক্ত যোনীর কপাল কুচকানো কুচকাওয়াজে- একজন ভন্ড,প্রতারক,মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে আসা লোফার বিস্কুট খাবে বলে এসেছে।
ধরিয়ে দিন ওকে ধরিয়ে দিন এখন জ্ঞানীদের নীরবতার সময় – শব্দ জোরে ধ্যান ভাঙলে বিরক্ত হবে রাষ্ট্র ,কাজেই শব্দ অপরাধীকে ধরিয়ে দিন -বন্ধ করুন খেলা..
নীরবতা মানেই পূন্য শব্দের যোণী বন্ধ করে কবিতা উৎপাদন বন্ধ করুন, রাস্তায় রাস্তায় পরে থাকুক লাশ- আমাদের দেখা হয় না। আমাদের বলা হয় না সেসব দিনের কথা, যখন নিরোধ কিনবো বলে ফুলের দোকানে ঢুকে পরাটাই জাদুবাস্তবতা! চোখের পাতায় লেগে থাকা ক্ষুধায় কাতর শোল মাছ, বুকের পাতায় পাতায় শৈশব লজেন্স- হাতের রেখা দেখে দেখে মাপি দূরত্ব ঘর থেকে বেশ্যাপাড়ার, শুনেছি ওখানে সুলভে পা চ্যাগিয়ে শুয়ে থাকে গণতন্ত্র ! আমাদের অবশ্য দেখা হয় না ,কথা হয় না,শুধু হাত থেকে হাত বদল হয় বিশ্বাস, যেভাবে ছোটবেলায় বদল হতো নীল দৃশ্যের বই।
খরচ বৃত্তান্ত
আমার একপকেটে ছিলো সুনীল সমুদ্র, একপকেটে আকাশ। আমি হেটে বেড়িয়েছি হেলসিংকি, পাফোস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, জেনেভা, ইস্তাম্বুল, সেন্টপিটার্সবার্গ, জেনোয়া,বুয়েন্স আইরিস,বোগোটা অথবা লিমা সহ নাম হারিয়ে ফেলা বহু শহর।আমি জীবনকে খরচ করেছি দেদারসে, দুহাতে দুপকেটে যা ছিলো পুরোটাই। জীবনকে উড়িয়েছি কফিশপে, পুড়িয়েছি অহর্নিশি রাস্তার ধারে জ্বলে থাকা পেরিপতেরো অথবা ২১ উর্ধ্ব নারী প্রবেশ নিষিদ্ধ আইয়ানাপায়।
আমি একদিন হাসতে হাসতে খরচ করেছিলাম আয়ু, বলেছিলাম সঞ্চয় শব্দটি লিখতে আদতে কয় অক্ষর প্রয়োজন? হেঁটে গেছি থামিনি কোথাও উকি দিয়ে দেখেছি আমার পায়ের কাছে ছোট হয়ে গেছে আমার ছায়া। মানুষের ; মানুষের বুকের কাছে এসে পিঠে আঘাতে খুন করার ইতিহাস দেখতে বিরক্ত আমি একদিন চীতকার করে ভাঙিয়েছিলাম গ্রীকপূরাণের ভূল। হৃদয় মূলত চোখের এককোনে জেগে থাকা ইতিহাসের ভূল বৃদ্ধ।আসলে কবিতা আমার বয়স বাড়িয়ে দেয় আর অভিজ্ঞতা একধরনের পাপ, আর সে পাপে আমি ১৫তে হয়েছিলাম ২২ এর অভিজ্ঞ। ২২ এ ২৭, ২৭ এ ৪৬, ৩০ এ সত্তরের অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত।
নিস্তব্ধতার কোলাহলে আমি একদিন হারিয়ে ফেলি চেনা ডাকবাক্স, চেনা গলিপথ, চেনা আমার অচেনা ঘর। হাতের রেখায় আঁকা উপহাসকে তীব্র বিদ্রুপ করে আমি একদিন,দেদারসে জীবন খরচ করতে করতে ঢুকে পড়লাম গুহায়, ঘোড়সওয়ার।ঈশ্বর বন্ধ করে দিলেন খাতা, আটকে দিলেন গুহামুখ, এরপর প্রায় পৌণে পাঁচশো বছর মানুষ দর্শণীতে কান পেতে শুনে নিচ্ছে পায়ের শব্দ খুঁড়ের আওয়াজ। একদিন দেদারসে জীবন খরচ করতে করতে আমি জানলাম দিনটি ছিলো শুক্রবার, বছরের ৪৯তম সপ্তাহ। বরাবরের মতন আমি চলে যাবার পরই মানুষ লিখলো ” সোয়েব, তুমি থেকে গেলে পারতে।”অথচ আমি আমার জীবন খরচ করেছি, উড়িয়েছি, পুড়িয়েছি দেদারসে কেবল বুকের কাছে থাকা ডাকবাক্স দেখবো বলে।
একটি আত্মহত্যা স্থগিত করে এসেছি
আমিতো জন্মান্ধ ছিলাম না,
পা বের করে বুকের সংসারে ধুয়ে মুছে হৃদয়,
শুয়ে’তো ছিলোনা কোনো ধীবরজায়া।
আমিতো বধির ছিলাম না,
শুন্যতার অক্ষজুড়ে নিজের শব নিজের কাঁধে
নিয়ে ফেরিতো করিনি নিঃসঙ্গতার।
আমি, আমিতো পঙ্গু ছিলাম না,
বড় হওয়া রাস্তাঘাট, সদালাপী কবরস্থান
জুড়ে করিনি তো চাষ গর্ভে বেড়ে ওঠা পিতৃত্বের।
তবে, দোলনচাঁপার স্নিগ্ধতায়, রক্তজবার উষ্ণতায়,
আকন্ঠমগ্ন হতাশার কনষ্টেবল আমাকে
গ্রেফতার করে কেনো তিনশত দুইধারায়
হস্তান্তর করবে সিভিল সার্জনের ঘরে?
আমার করোটিতে রোদ্দুর ঢুকেনা মহামায়া,
আমার পাঁজরে পাঁজরে ঘ্রাণ ভালোবাসার,
আমি বুকে হেটে পাড়ি দেই ফোরাত নদ,
এক্লিপ’স পর্বত, স্থলবাহিনী বেষ্টিত আলবামা শহর,
যীশুর কাছ থেকে চেয়ে আনি ক্রুশ,
শেষ জাহাজ থেকে লাফিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস
পাড়ি দিয়ে নোঙ্গর ফেলি অবশেষে তোমার সিথানে।
তোমার বাবার সাথে আমার দেখা হয়না,
দেখা হয়না মায়ের সাথেও,
পরকীয়ায় মগ্ন তোমার ছোটবোনের সাথে
পতঙ্গভুক সন্ধ্যায়,হ্যাজাকের আলোয়
বিদগ্ধসমাজ ব্যবস্থাদি নিয়ে কথা হয়,
বুকের খাঁজে দেখা হয় হতদরিদ্র মধ্যবিত্ততা!
তোমার সাথে দেখা হয়না পৌণে দুইশ বছর,
মহামায়া দোতালার ব্যালকনী জুড়ে ছড়িয়ে
পড়ছে বজ্রবিদ্যুত , পয়মন্ত মেঘেরা পথভ্রান্ত
ব্লাউজের বিলবোর্ডে যখন আশ্রয় প্রার্থী,
ঠিক তখন – কথাদের কথা দেয়া কথায়
হেটে যাবো বহুদূর , আমরা আমাদের ছায়ায়,
আমাদের গন্ধে, বিশ্বাস আর অবিশ্বাসে,
ঘৃণা আর ভালোবাসায়। ছিড়ে ফেলে দ্যোতনার
দূরত্ব দেখো মুখ তুলে দেখো – ঈশ্বরের
অন্ধকার হেরাগুহায়, লিপিবদ্ধ পান্ডুলিপিতে আমি
অবশেষে ফেব্রুয়ারির মুখ থেকে তাড়াতে বেনিয়া মাছি
অজস্র মৃত্যু উপেক্ষায়
একটা আত্মহত্যা স্থগিত করে এসেছি।