বই : এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
লেখক : পিয়াস মজিদ
প্রকাশক : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদ : রাজীব রাজু
এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শৈবালঝড়ে চুরমার রুপালি হরিৎ কাচের পাখির গান। নগ্নদিগন্ত বাজায় সূর্যবেহালা। লতাপাতার দেয়ালি জ্বেলে দাঁড়িয়েছ দেবদারু। সোনার কানন পুড়ে যায় তাতে। রজতের ছাই হয়ে ময়ূরীর নাচ অশেষ। খুলবে এবার সংবর্ত ব্যথার পালক। অরণ্যসমুদ্র সবাই শুনবে নিশীথ-প্রহার শেষে কী সুরে কাঁদে কূলহারা চাঁদ
সুরবাহার, কান্নাবাহার
সোনালি পাতাল ফুঁড়ে মৃত্যুছায়াবীথি। পুরনো জামবাটিতে নামস্বাক্ষরহারা বেদনারা ঘুমোতে গেলে ফুটে ওঠো তুমি; গোপন আলো। পরিত্যক্ত কোঠাবাড়ির দিকে ছুটতে দেখি মেয়েদের। তাদের কপালে সীতাভাগ্য, পায়ে মরচে পড়া ঘুঙুর। গা ঠিকরে বের হয় হিংস্র মাধুরী। বিষাদের পর পৃথিবীতে অজস্র হর্ষসিন্ধু কিন্তু তার জল শুষে নিয়েছে কিছু ব্যথাবীণা। আর বীণা ভেঙে সুরবাহার, কান্নাবাহার। আজ পুবের হাওয়া আছে, পশ্চিমে পাহাড়ে আছে, ধুলোয় ডুবে আছে রক্তাভ মৃণাল
কোমলগান্ধার
রাত্রি।
মরুভূমি ছেড়ে যাই
ওই দূর
মালিনীর
অববাহিকায়।
তার জলে
হাঁস হয়ে ঘুরে বেড়ায়
আমার দগ্ধ চৈতন্য।
ভোর
এখন মালিনীই
মূলত মরুভূমি।
শিল্পী
কাকভোরে ঘুম ভেঙে যায় মার
সেই সকাল থেকে শুরু হয়
তার শিল্পকলার আয়োজন।
গনগনে উনুনের আঁচ সইতে সইতে
আর নাশতার টেবিল সাজানোর মধ্য দিয়ে
তিনি রচনা করেন অনুপম ভৈরবী।
দুপুরের দিকে এই গীত
আরো ঘন হয়
মধ্যাহ্নভোজের চকমকি বাহারে।
সূর্য ডুবতে না ডুবতেই
আবার তার ওপর ভর করে
রন্ধন-পূরবী।
রাতের খাবার শেষে
আমরা টের পাই
দিনভর মায়ের গেঁথে তোলা গানটার
সম্পূর্ণ সুর-তাল-লয়।
আজন্ম দেখছি
মায়ের এমন নিবেদিত সাধনা।
এখন আর কাউকে
তার চেয়ে বড় শিল্পী মনে হয় না।
বসন্ত, কোকিলের কর্তব্য
‘বসন্ত এসে গেছে’
এই পাইকারি প্রচারণায়
ভরে উঠেছে
খুচরো খরিদ্দারের দুনিয়া।
প্রেমের পাসওয়ার্ড
বারবার ভুলে গিয়ে
ফাল্গুনফুল
হয়ে আসে ফিকে।
বুকের ব্যাকুল বাগান
আজ
বিকিকিনির বাজার বিশাল।
এরপরও
হে মরার কোকিল,
তোমাকে গাইতে হবে গান;
বেঁচে থাকার।