চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া
স্পর্শকাতরতাময় এই নাম
উচ্চারণমাত্র যেন ভেঙে যাবে,
অন্তর্হিত হবে তার প্রকৃত মহিমা,-
চুনিয়া একটি গ্রাম, ছোট্ট কিন্তু ভেতরে-ভেতরে
খুব শক্তিশালী
মারণাস্ত্রময় সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
মধ্যরাতে চুনিয়া নীরব।
চুনিয়া তো ভালোবাসে শান্তস্নিগ্ধ পূর্ণিমার চাঁদ,
চুনিয়া প্রকৃত বৌদ্ধ-স্বভাবের নিরিবিলি সবুজ প্রকৃতি;
চুনিয়া যোজনব্যাপী মনোরম আদিবাসী ভূমি।
চুনিয়া কখনো কোনো হিংস্রতা দ্যাখেনি।
চুনিয়া গুলির শব্দে আঁতকে উঠে কি?
প্রতিটি গাছের পাতা মনুষ্যপশুর হিংস্রতা দেখে না-না ক’রে ওঠে?
– চুনিয়া মানুষ ভালোবাসে।
বৃক্ষদের সাহচার্যে চুনিয়াবাসীরা প্রকৃত প্রস্তাবে খুব সুখে আছে।
চুনিয়া এখনো আছে এই সভ্যসমাজের
কারু-কারু মনে,
কেউ-কেউ এখনো তো পোষে
বুকের নিভৃতে এক নিবিড় চুনিয়া।
চুনিয়া শুশ্রুষা জানে,
চুনিয়া ব্যান্ডেজ জানে, চুনিয়া সান্ত্বনা শুধু-
চুনিয়া কখনো জানি কারুকেই আঘাত করে না;
চুনিয়া সবুজ খুব, শান্তিপ্রিয়- শান্তি ভালোবাসে,
কাঠুরের প্রতি তাই স্পষ্টতই তীব্র ঘৃণা হানে।
চুনিয়া গুলির শব্দ পছন্দ করে না।
রক্তপাত, সিংহাসন প্রভৃতি বিষয়ে
চুনিয়া ভীষণ অজ্ঞ;
চুনিয়া তো সর্বদাই মানুষের আবিষ্কৃত
মারণাস্ত্রগুলো
ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিতে বলে।
চুনিয়া তো চায় মানুষের তিনভাগ জলে
রক্তমাখা হাত ধুয়ে তার দীক্ষা নিক্।
চুনিয়া সর্বদা বলে পৃথিবীর কুরুক্ষেত্রগুলি
সুগন্ধি ফুলের চাষে ভ’রে তোলা হোক।
চুনিয়ারও অভিমান আছে,
শিশু ও নারীর প্রতি চুনিয়ার পক্ষপাত আছে;
শিশুহত্যা, নারীহত্যা দেখে-দেখে সেও
মানবিক সভ্যতার প্রতি খুব বিরূপ হয়েছে।
চুনিয়া নৈরাশ্যবাদী নয়, চুনিয়া তো মনেপ্রাণে
নিশিদিন আশার পিদ্দিম জ্বেলে রাখে।
চুনিয়া বিশ্বাস করে:
শেষাবধি মানুষেরা হিংসা-দ্বেষ ভুলে
পরস্পর সৎপ্রতিবেশী হবে।
(চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া, ১৯৭৭)
যাও, পত্রদূত
যাও পত্রদূত, বোলো তার কানে-কানে মৃদু স্বরে
সলজ্জ ভাষায় এই বার্তা: “কোমল পাথর, তুমি
সুর্যাস্তের লাল আভা জড়িয়ে রয়েছো বরতনু;
প্রকৃতি জানে না নিজে কতোটা সুন্দর বনভূমি।”
যাও, বোলো তার কানে ভ্রমরসদৃশ গুঞ্জরণে,
চোখের প্রশংসা কোরো, বোলো সুঠাম সুন্দর
শরীরের প্রতি বাঁকে তার মরণ লুকিয়ে আছে,
অন্য কেউ নয়, সে আমার আকণ্ঠ তৃষ্ণার জল:
চুলের প্রশংসা কোরো, তার গুরু নিতম্ব ও বুক
সবকিছু খুব ভালো, উপরন্তু, হাসিটি মধুর!
যাও পত্রদূত, বোলো “হে মাধবী, কোমল পাথর,
দাঁড়াও সহাস্য মুখে সুদূর মধুর মফঃস্বলে!
বিনম্র ভাষায় বোলো, “উপস্থিতি খুবই তো উজ্জ্বল,
যুক্তিহীন অন্ধ এক আবেগের মধ্যে, বেড়াজালে,
আবদ্ধ হয়েছো উভয়েই, পরস্পর নুয়ে আছো
একটি নদীর দিকে—বোলো তাকে, “অচ্ছেদ্য বন্ধন
ছিঁড়ে ফেলা সহজ তো নয় মোটে, কোমল পাথর!”
যাও পত্রদূত, বোলো—ভালোবাসা গ্রীষ্মের দুপুর?
নীরব দৃষ্টির ভাষা-বিনিময়—দিগন্ত সুদূর
(অসম্ভবের পায়ে, ১৯৭৩)
জীবন একটি নদীর নাম
জীবন একটি নদীর নাম,
পিতামাতার ঐ উঁচু থেকে
নেমে-আসা এক পাগলা ঝোরা—
ক্রমশ নিম্নাভিমুখী;
পাথুরে শৈশব ভেঙে
কৈশোরের নুড়িগুলি বুকে নিয়ে
বয়ে চলা পরিণামহীন
এক জলধারা—
গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে বেলে-এঁটেল-দোআঁশ
মাটি ভেঙে-ভেঙে সামনে চলা
এক ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনী;
এই বয়ে চলা পথে
বিভিন্ন বৃক্ষের সঙ্গে চলে
দ্বিরালাপ;
একবার এক বৃদ্ধ অশ্বথের সঙ্গে
হয় তার অল্পক্ষণ স্থায়ী
আদাব-সালাম বিনিময়,
তাকে বলেছিলো সেই বুড়ো:
“এ্যাতো তাড়াহুড়ো করো না হে,
ধীরে বয়ে যাও, তোমার চলার পথে
পড়বে অনেক বৃক্ষ— সবুজ, সতেজ—
তাদের শাখায় আছে পাখিদের প্রিয় ঘরবাড়ি,
পাখিদের শাবকেরা আছে— তাদের রয়েছে খুব
নরম পালক,
যেন ঐ বৃক্ষ আর তার আশ্রিতজনের
কোনো ক্ষতি না হয় তোমার দ্বারা;
যদি পারো ঊষর মাটির মধ্য দিয়ে
বয়ে যেয়ো, সর্বদা এড়িয়ে যেয়ো
পাখির নিবাস…
আমি তাকে কোনো কথাই পারিনি দিতে;
নদীর ধর্ম তো অবিরাম বয়ে চলা,
বহমান তার স্রোতধারা ভেঙে নিয়ে চলে
পাড়ের সমৃদ্ধ মাটি,
গৃহস্থের আটচালা, মাটির উনুন,
প্রবীণ লাঙল, ধানী মরিচের টাল,
তরমুজের ক্ষেত, পোষা বেড়ালের মিউ,
ফলবান বৃক্ষের বাগান, কাঁথা ও বালিশসহ সম্পন্ন সংসার।
তেমন আহ্লাদ নেই তার ভেঙে ফেলতে দু’পাড়ের
সোনার সংসার;
সে তো খুব মনস্তাপে পোড়ে,
নিরুপায় অশ্রুপূর্ণ চোখে
দীর্ঘশ্বাস চেপে সে-ও দু’পাড়ে তাকায়:
এক পাড়ে দাঁড়ানো নারীকে বাঁচাতে গিয়ে
অপর পাড়ের নিরুদ্বিগ্ন পাখিদের বাসা
তছনছ করে ছোটে,
তাকে তো ছুটতে হয়, সে যে নিরুপায়
তার কষ্ট থাকে তার বুকে;
তারও বুক ভেঙে যেতে পারে— বুকভাঙা অভিজ্ঞতা
তারও তো রয়েছে— থাকতে পারে, থাকে…
সে কথা ক’জন জানে।
নদীকে তোমরা জানো ভাঙচুরের সম্রাট!
দু’কূল-ছাপানো তার আবেগে উদ্বেল
পলি তোমাদের জীবনে কি এনে দ্যায়নি কখনো
শস্যের সম্ভার?
স্মৃতি, চাঁদের মতো ঘড়ি
ঘড়ির কাঁটায় স্থির, সমর্পিত, হে আমার অন্তরঙ্গ অবিচ্ছিন্ন চাঁদ,
তোমার যাদুতে মুগ্ধ এই আমি শতচ্ছিন্ন কাঁথার একায়
হিরন্ময় নক্ষত্রের মেলা এক বসিয়েছি অবাস্তব স্বপ্নের বিন্যাসে:
একটা বয়স আছে অবোধ শিশুর দল শতাধিক পুতুলে যখন
জননীর মতো সোহাগ বিলোতে চায়,—
ন্যাকড়ার টুকরোয় তারা কী উজ্জ্বল জামা তৈরি করে,
চুমোয় আচ্ছন্ন করে সারি-সারি পুতুলের নির্বিকার মুখ!
শিশুদের মতো আমি,— মুখাবয়বসর্বস্ব,—ভাঙা এই একটি পুতুলে
আমারও আজন্ম খেলা, সারাবেলা—দুপুরে-রাত্রিতে।
ঘড়ির কাঁটায় স্থির, সমর্পিত, হে আমার অন্তরঙ্গ অলীক লন্ঠন,
সর্বক্ষণ জ্ব’লে যাও তুমি, তোমার মুখশ্রীখানি
কী মসৃণ আলো ফ্যালে দুর্গন্ধে আমার!
অবাস্তব উটপাখি, তোমার পিঠের ‘পরে চ’ড়ে
জরায়ুতে চ’লে যাই, ভবিষ্যতে যাই…
খটখটে মৃত্তিকায় শিকড় চারিয়ে দিই, কিংবা
আইয়ো-র শিঙয়ের মতো বাঁকানো শৈশব ঘুরে আসি!
শিখাহীন অলৌকিক তোমার আগুনে পুড়ে যায়—
পরিত্যক্ত বাঁশঝাড়, গাছপালা, গোপন বাগান!
ঘড়ির কাঁটায় স্থির, সমর্পিত, হে আমার অন্তরঙ্গ জীবনদেবতা,
তালের শাঁসের মতো রাতে আনো অপার বেদনা;
সাবানের মতো তুমি পিছলিয়ে যাও
ব্যক্তিগত বাথরুম থেকে কোথা কোন্ স্বর্গলোকে!
আমার বাস্তব-স্বপ্নে কখনো আসো না আর ফিরে।
তবে অশ্রুজল ছাড়া ঐ-পদপল্লবে
আর কী দেবার আছে? …কেবল চোখের জলে ভ’রে দিতে পারি
একটু অদৃশ্য, শুষ্ক বঙ্গোপসাগর।।
.
(অসম্ভবের পায়ে, ১৯৭৩)
বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে
বালক জানে না তো পুষবে অনুরাগ
হৃদয়ে কতদিন, কার বা চলা-পথে
ছড়াবে মুঠো-মুঠো বকুল ফুলগুলো;
কোথায় যেতে হবে, যাবে না কোন দিকে,
ব্যাপক হাঁটাহাঁটি করবে কোন পথে!
বালক জানলো না—মানুষ ম্লানমুখে
কেন যে তারা গোনে; পায়ের নীচে কার
কেন যে ফুল ঝরে, কতটা ফুল ঝরে!
মানুষ ভুল পথে গিয়েছে কত দূর,
বেপথু কাকে বলে বালক জানে না তা!
বালক জানে না তো কতটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই—থাকে না, নিরুপায়—
যে আসে সে-ই জানে—ভুলের দামে কিনে
আনে সে প্রিয় ম্যাপ—পথিক ম্রিয়মাণ,
উল্টোরথে চ’ড়ে চলেছে মূল পথ!
বালক জানে না তো অর্থনীতি আর
মৌল রাজনীতি—উল্টো ক’রে ধরে
সঠিক পতাকাটি—পতাকা দশদিশে
যেনবা কম্পাস স্বদেশ ঠিক রাখে।
বালক জানে না সে বানানে ভুল ক’রে
উল্টাসিধা বোঝে : সঠিক পথজুড়ে
পথের সবখানে কাঁটার ব্যাপকতা!
বালক ভুল ক’রে পড়েছে ভুল বই,
পড়ে নি ব্যাকরণ, পড়ে নি মূল বই!
বালক জানে না তো সময় প্রতিকূল,
সাঁতার না শিখে সে সাগরে ঝাঁপ দ্যায়,
জলের চোরাস্রোত গোপনে ব’য়ে যায়,
বালক ভুল ক’রে নেমেছে ভুল জলে!
বালক জানে না তো জীবন থেকে তার
কতটা অপচয় শিল্পে প্রয়োজন।
পাথর বেশ ভারী, বহনে অপারগ
বালক বোঝে না তা—বালক সিসিফাস
পাহাড়ে উঠে যাবে, পাথর নেমে যাবে
পাথুরে পাদদেশে!—বিমূঢ়, বিস্মিত
বালক হতাশায় অর্তনাদ ক’রে
গড়িয়ে প’ড়ে যাবে অন্ধকার খাদে।
বালক জানে না তো সময় প্রতিকূল,
ফুলের নামে কত কাঁটারা জেগে থাকে
পুরোটা পথজুড়ে, দীর্ঘ পথজুড়ে—
বালক জানে না তা, বালক জানে না তো!
বালক জানে না তো কতটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
(পরিকীর্ণ পানশালা আমার স্বদেশ, ১৯৮৫)
মাধবী এসেই বলে: ‘যাই’
খণ্ডিত ব্রিজের মতো নত মুখে তোমার প্রতিই
নীরবে দাঁড়িয়ে আছি: আমার অন্ধতা ছাড়া আর
কিছুই পারি নি দিতে ভীষণ তোমার প্রয়োজনে;
উপেক্ষা করো না তবু, রানী—তোমার অনুপস্থিতি
করুণ বেদনাময়—বড় বেশি মারাত্মক বাজে
বুকের ভিতরে কী যে ক্রন্দনের মত্ত কলরোলে।
দালি-র দুঃস্বপ্নে তুমি, আর্তো-র উন্মাদ মনোভূমে,
সবুজ মৎস্যের মতো অবচেতনের অবতলে
রঙিন শ্যাওলা-ঝাড়ে সুজাতার মতো সরলতা।
মুহূর্তের নীলিমায় তরুণ ধ্যানীর মনে হয়
তুমি হও ছলাকলাহীন, রূপশালী ধান-ভানা
জীবনানন্দের মনোবাঙলার এক শাদাসিধে
নেহাৎ রূপসী। তবু কেন প্রাণপাত পরিশ্রমে
তোমাকে যায় না পাওয়া?—তুমি নেই মস্তিষ্কে, হৃদয়ে।
কখনো জ্যুরিখে তুমি, কিয়োটোতে, বাম-তীরে,
গ্রীনিচ পল্লীতে কিংবা রোমে পড়ে থাকো; কখনোবা
যোগ দাও পোর্ট-সৈয়দের নোংরা বেলাল্লাপনায়।
তোমার স্বভাব নয় স্থিরতায়—অস্থির, অধীর
তুমি আছ অনুভবে, তুমি আছ শিশুর স্বভাবে।
ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পরিশ্রমে গড়ে-ওঠা রম্য-
অট্টালিকা, স্বভাবের ডালপালা—বিশ্ব-চরাচর।
যেনবা কোথাও গর্জে ওঠে ভয়াবহ অগ্নিগিরি
সোনালি লাভার স্রোতে ভরে দিল গ্রাম ও নগর।
যেন গর্ভগৃহ থেকে নেমে ডিনামাইটের মতো
অসম্ভব তোলপাড় তুলে দিল একটি শৈশব।
অবিশ্বাস্য উষ্ণতায়, চাপে দ্রুত গলে যেতে থাকে
ঘড়ির ডায়াল আর তোমার নিটোল অবয়ব।
তুমি সেই লোকশ্রুত পুরাতন অবাস্তব পাখি,
সোনালি নিবিড় ডানা ঝাপটালে ঝরে পড়ে যার
চতুর্দিকে আনন্দ, টাকার থলি, ভীষণ সৌরভ!
রোমশ বালুকা-বেলা খেলা করে রৌদ্রদগ্ধ তটে
অস্তিত্বের দূরতম দ্বীপে এই দুঃসহ নির্জনে
কেবল তোমার জন্যে বসে আছি উন্মুখ আগ্রহে—
সুন্দর সাম্পানে চড়ে মাধবী এসেই বলে—‘যাই’।
.
(অসম্ভবের পায়ে, ১৯৭৩)
প্রতীক্ষা
এমন অনেক দিন গেছে
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি,
হেমন্তে পাতা-ঝরার শব্দ শুনব ব’লে
নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে—
কোনো বন্ধুর জন্যে
কিংবা অন্য অনেকের জন্যে
হয়তোবা ভবিষ্যতেও অপেক্ষা করব…
এমন অনেক দিনই তো গেছে
কারো অপেক্ষায় বাড়ি ব’সে আছি—
হয়তো কেউ বলেছিল, “অপেক্ষা ক’রো
একসঙ্গে বেরুব।”
এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি
কোনো বন্ধু ঘোরের মধ্যে গোঙানির মতো
উচ্চারণ করেছিল, “বাড়ি থেকো
ভোরবেলা তোমাকে তুলে নেব।”
হয়তো বা ওর মনের মধ্যে ছিল
চুনিয়া অথবা শ্রীপুর ফরেস্ট বাংলো;
—আমি অপেক্ষায় থেকেছি।
যুদ্ধের অনেক আগে
একবার আমার প্রিয়বন্ধু অলোক মিত্র
ঠাট্টা ক’রে বলেছিল,
“জীবনে তো কিছুই দেখলি না
ন্যুব্জপীঠ পানশালা ছাড়া। চল, তোকে
দিনাজপুরে নিয়ে যাব
কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর দেখবি,
বিরাট গোলাকার চাঁদ মস্ত খোলা আকাশ
দেখবি,
পলা ও আধিয়ারদের জীবন দেখবি,
গল্প-টল্প লেখার ব্যাপারে কিছু উপাদান
পেয়ে যেতেও পারিস,
তৈরি থাকিস—আমি আসবো”
—আমি অপেক্ষায় থেকেছি;
আমি বন্ধু, পরিচিত-জন, এমনকি—
শত্রুর জন্যেও অপেক্ষায় থেকেছি,
বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
অপেক্ষায় থেকেছি—
কিন্তু তোমার জন্য আমি অপেক্ষায়
থাকব না,
—প্রতীক্ষা করব।
‘প্রতীক্ষা’ শব্দটি আমি শুধু তোমারই
জন্যে খুব যত্নে
বুকের তোরঙ্গে তুলে রাখলাম,
অভিধানে শব্দ-দু’টির তেমন কোনো
আলাদা মানে নেই—
কিন্তু আমরা দু’জন জানি
ঐ দুই শব্দের মধ্যে পার্থক্য অনেক,
‘অপেক্ষা’ একটি দরকারি শব্দ—
আটপৌরে, দ্যোতনাহীন, ব্যঞ্জনাবিহীন,
অনেকের প্রয়োজন মেটায়।
‘প্রতীক্ষা’ই আমাদের ব্যবহার্য সঠিক শব্দ,
ঊনমান অপর শব্দটি আমাদের ব্যবহারের
অযোগ্য,
আমরা কি একে অপরের
জন্যে প্রতীক্ষা করব না?
আমি তোমার জন্যে পথপ্রান্তে অশ্বত্থের
মতো
দাঁড়িয়ে থাকবো—
ঐ বৃক্ষ অনন্তকাল ধ’রে যোগ্য পথিকের
জন্যে প্রতীক্ষমান,
আমাকে তুমি প্রতীক্ষা করতে বোলো
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকব অনড় বিশ্বাসে,
দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে
আমার পায়ে শিকড় গজাবে…
আমার প্রতীক্ষা তবু ফুরোবে না…
.
(সশস্ত্র সুন্দর, ১৯৮২)
আপনার মতামত জানান