কবিতা

উদাম রাতের সময় এবং আরও তিনটি কবিতা

উদাম রাতের সময়

দূর থেকে ভেসে আসে—
বাজায় কে যেন তানপুরা
এমন উদাম রাতের সময়
দুঃখও জেগে থাকে কার

সম্পর্কিত

মনে পড়ে— গাঙের ঢেউয়ের কথা। সুরের মানুষ বাইক্কা দিয়া যায় আন্ধারের দিকে। আল্লার দুনিয়ায় ১০০টা পথ, সব রাস্তার মাপঝোঁকে যে নিরাই হয়ে থাকে অনাদিকাল থেকে— রাতের করুণ সুর সিনায় রেখে নবী সুলাইমানের মতো মাছের কথা বুঝতে হয়, পাখির কথা বুঝতে হয়। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে কারো কোনো দুঃখের অভাব নেই। উছলে উছলে উঠা উজানের নারীর ক্ষতের সমান গভীরতা থাকে না সবুজে- পৃথিবীর সব সমাহিত দাফনের পাশে আর বেশী ক্ষতচিহ্ন দেখেনি কোনো দরবেশের মন।


গন্তব্য, দেবদ্রোহী দুপুর

কোথায় যাওয়ার আছে
ঘাসের ত্রিকোণমিতি বুঝতে গেলে বেজে ওঠে
সবুজ সাইরেন। তবে কি সূর্যাস্ত থেকে পালানো যায়?
………………মিলিটারি গাড়ি থেকে,
………………সতেজ আঘাত থেকে
যেভাবে পালাতে গিয়ে হাওয়ার মানুষের মতো দৌড়ে যাচ্ছি
যেন হাসন রাজার মন জমিদারি ছেড়ে
………………শূন্যে উড়াল দিবে—

প্রথমত বাতাসকে অস্বীকার করতে হবে
দ্বিতীয়ত তোমাকে অস্বীকার করতে হবে
আর কোথায় থাকে বলো কার অস্তিত্ব?

বাউলের আসর থেকে
নগরের দিকে যে ভূগোলবিদ দৌড়ে গেলো
মানচিত্রের কোনো নকশা তাকে রক্ষা করতে জানে না
………………অথচ নির্দয় নিলাজ বুকে
………………গোপন আকাশ রেখে শুয়ে থাকা
প্রতিটি ঘাস জানে তার অস্তিত্ব, জন্মদাগ
………………এবং পূর্বপুরুষের সুর—

নিজেকে খুঁজে পাওয়ার অহেতুক তাড়াহুড়ায়
………………গ্রাম উজাড় হচ্ছে
………………বিস্তীর্ণ অন্ধকারের দিকে—
বনপাতার উড়ন্ত শিকড়ের নীচে
ঝড়ে যাচ্ছি শীতের মতো
কোথাও না গিয়ে নিজেকে বেঁধে রাখার মন্ত্রে
হৃদয় খুলে রাখছি দেবদ্রোহী দুপুরে।


তোমাকে প্রার্থনা করি

তোমাকে প্রার্থনা করি—
জল শ্যাওলায় পড়ে থাকে আয়ু,
দক্ষিনে প্রবাহিত বাতাসের শিকড়ে গাঁথা
তামাটে রাত পোহায় পালক।

গুমোট বাতাবরণে, শেষ মানুষ
ভাঙে মাটির হাড়িকেনের ঔজ্বল্য,
বনের আড়াল হওয়া পাখির কথায়
ভেঙে আসে কদর রাতের প্রার্থনা

আল্লাকে ডাক দিলে, শুধু নড়ে ওঠো তুমি—
সুবর্ণ ভাগ্যের সুযোগে
তোমার অস্তিত্ব ছাড়া আর কোনো তৃষ্ণা দেখি না।


দেখা কম, বন্ধু বেশী যারা

দূরে গেলেও দূরবর্তী বন্ধু যারা
যাদের সাথে দেখ হয়, অকস্মাৎ—
হঠাৎ কোথাও, সব সময় না
দেখা তো হওয়ার কথা
তবু বিরক্ত হলো তারা কয়েক জন
যেন দেখতে চাইলো না আর
যেন কথাও কইতে চাইলো না
যেন আমি গেলে মূলত বিরক্ত নিয়ে যাই।

দূরে গেলেও তাদেরকে তবু মনে পড়ে
কাছে গেলে আরো দূরে তো যাই
মনে হয় একা একা জঙ্গলের ভেতর
কেন দেখা হতে হবে, দূরবর্তী বন্ধু যারা
কয়েকটা শহরে আমরা কেন
ভাগ হইয়া গেলাম না আরো আরো আগে—
ভাগ হয়ে গেলে, দেখা না হলে দূরে দূরেই
যেন আমরা বন্ধু থাকতাম বেশী।

আপনার মতামত জানান

সাইয়্যিদ মুজাদ্দিদ

সাইয়্যিদ মুজাদ্দিদ; কবি ও আলোকচিত্রী। জন্ম ১৯৯৯ সালের ২২ জুলাই যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম শহরে। প্রকাশিত বই ‘তুমি, অস্তিত্ব ও জন্ম সাল’ (কবিতা)। তার সম্পাদনায় অনিয়িমিতভাবে বের হয় ছোটকাগজ চৈত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।