অনুবাদ

ইরানের কবি মিনা আসাদীর কবিতা

ভাব-তর্জমা: মঈনুস সুলতান

কবি ও গীতিকার মিনা আসাদীর জন্ম ১৯৪৩ সালে— ইরানের সারি নামক স্থানে। ১৮ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর নির্বাচিত কবিতার সংকলন ‘আরমাঙ্গানে মিনা’ বা ‘মিনাজ্ গিফ্ট’। যশস্বী এ কবির আজ অব্দি প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৪। যে কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন, তা হচেছ ‘ চে কেসি সাঙ মিয়ানদাজাদ’ বা ‘ হু থ্রোজ রকস্ ’। কবি পেশাদার সংবাদিক হিসাবেও একাধিক সংবাদপত্র ও জার্নালের সঙ্গে কাজ করেন। সমাজ সচেতন এক্টিভিস্ট হিসাবে তিনি যেমন নাগরিক সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তেমনি বিরাগভাজনও হয়েছেন সরকারের। ১৯৯৬ সালে মিনা আসাদী ‘হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের’ তরফ থেকে অর্জন করেন ‘হেলম্যান/হামেট গ্রান্ট’। বর্তমানে কবি সুইডেনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। ভাব ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে কবি আসাদীকে সাহিত্য সমালোচকরা আধূনিক বিবেচনা করে থাকেন। তাঁর অনেকগুলো কবিতায় প্রখর সমাজ সচেতনতার ছাপ আছে, একই সাথে কিছু কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে সুফির মার্গের ভাবনা।

নিচে তাঁর একটি কবিতার ভাব-তর্জমা উপস্থাপন করা হচ্ছে। কবিতাটি ফার্সি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন মাহমুদ কিয়ানুস। কবিতা, কবির আলোকচিত্র ও বায়ো-বিষয়ক তথ্যের সূত্র হচ্ছে ইন্টারন্যাট।

সম্পর্কিত

আংটি হচ্ছে দ্বাসত্বের প্রতীক

ভাবি না আমি সচরাচর জায়নামাজের কথা
কিন্তু করোটিতে হামেশা ঘূর্ণিত হয় শত সড়কের মানচিত্র,
ছিন্ন করে সফরের সনাতনী প্রথা,
চলে গেছে যে রাস্তাগুলো শতেক বাগানের ভেতর দিয়ে—
পাথরে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে যে আগুন,
যেখানে বৃক্ষরাজিতে প্রস্ফুটিত হয় রেশমের প্রসূন;

কেবলার দিকনির্দেশনা সম্পর্কে সচেতন আমি
আনন্দলোকে যার অবস্থান,
নিমগ্ন হয় আমার প্রাণ—
নিবিড় খোয়াবে,
প্রার্থনায়— চডুইপাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত
রেশমী সড়কের মেহরাবে;

জানি না আমি সঠিক সংজ্ঞা— স্নেহ কিংবা প্রীতির
অথবা এক রাজ্যের সাথে অন্য রাজ্যের তফাত,
নিঃসঙ্গতা আমার স্বত্ত্বায় নিরন্তর ঝরায় সুখের প্রপাত,
বিরাণ মরুপ্রান্তকে আমি বলি গৃহ— নিজস্ব নিবাস—
এবং বিষন্ন করে যা আমাকে—
অনুভবে ছড়ায় তা ভালোবাসার সুবাতাস;

আমার কাছে পাঁচ টাকার একটি আদনা নোটও
বিবেচিত হয় বিত্ত,
যিনি বৃন্তচ্যুত করে চয়ন করেন পুষ্প,
আমার মূল্যায়নে অন্ধ তার চিত্ত,
আর আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে— মাছকে জল থেকে
বিচ্ছিন্ন করে যে জাতক,
দ্বিধাহীনভাবে বলি আমি— সে মূলত ঘাতক;

ঈর্ষার চোখে তাকাই আমি সাগরের দিকে
‘কত ছোট্ট তুমি’, বলি বারেক নিজেকে,
হয়তো সাগরও মহাসমুদ্রের সান্নিধ্যে আসে যখন —
নিজের ক্ষুদ্রত্ব সম্পর্কে ঊর্মি-ছন্দে হয় সে সচেতন;

নিশিরাতের বৈশিষ্ট সম্পর্কে আমি জানি না তেমন
তবে দিবসের রৌশনী দারুণভাবে আমাকে করে আকর্ষণ,
একটি ফুলের ঝাড়কে মনে হয় পুরো একটি গ্রাম
পাপড়ি ও কোরকে ভ্রমরগুঞ্জরিত জীবনের তৎপরতা প্রচুর,
স্মৃতির বাগিচায় আলাবোলা হেঁটে যাই আমি—
খুঁজে নেই নিয়ত স্বাধীনতার সম্পূর্ণ ছন্দসুর।

যার আয়ত্বে আছে একটি পিঞ্জিরা—
মূলত সে একজন কারারক্ষী,
অনর্থক ভাবনারাজি হচ্ছে
পড়ো বাড়ির ঝুরঝুরে নোনাধরা দেয়াল—
বসে না তাতে — কাকপক্ষী,
চাই না কোন কিছুর স্বত্ত্ব,
অনামিকার আংটিও আমার কাছে দ্বাসত্ব;

ভাবি না আমি সচরাচর জায়নামাজের কথা
কিন্তু করোটিতে হামেশা ঘূর্ণিত হয় শত সড়কের মানচিত্র,
ছিন্ন করে সফরের সনাতনী প্রথা,
চলে গেছে যে রাস্তাগুলো শতেক বাগানের ভেতর দিয়ে—
পাথরে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে যে আগুন,
যেখানে বৃক্ষরাজিতে প্রস্ফুটিত হয় রেশমের প্রসূন।

আপনার মতামত জানান

মঈনুস সুলতান

মঈনুস সুলতান; প্রাবন্ধিক, গদ্যকার, অনুবাদক। জন্ম ১৭ এপ্রিল ১৯৫৬ সালে, সিলেট জেলার ফুলবাড়ী গ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি । শিক্ষকতা, গবেষণা ও কনসালট্যান্সির কাজে বহু দেশ ভ্ৰমণ করেছেন। বর্তমানে সিয়েরা লিওনে বাস করছেন। ২০১৫ সালে ভ্রমণ সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

দুঃখিত, কপি করা যাবে না।