কিছু ঘ্রাণ পুষে রাখে সে, ঘ্রাণগুলো পোষ মানে না৷ বারবার নিঃশ্বাসের সাথে লড়াই করে বেরিয়ে আসতে চায়। একটা লড়াই ক্রমাগত চলতে থাকে! উইন উইন সিচুয়েশন কিন্তু জিততে পারে না। ফিরে আসে আপন কক্ষপথে। সে পথেই একটা রেখা টেনে নিয়ে ফিরে আসতে হয় তোমার। কিন্তু কোথায় ফিরবে? ফেরার কোনো ঠিকানা নেই, নেই কোনো পথরেখাও। তাই তোমার শুধু যেতে হবে। অই দূরে একটা যুদ্ধ তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে৷ একটা লড়াই অপেক্ষা করে আছে। লড়তে লড়তে তোমার মরে যেতে হবে। মরে যাওয়া মানে মরে যাওয়া নয়। অন্য কিছু। যেমন একটা পাতার ওপর দিয়ে একটা পিপড়ের হেঁটে যাওয়া। তুমি যখন এসব ভাবছিলে একটা আলোর ছটা জানালা গলে তোমার চোখ স্পর্শ করে। অনেক দিন পর আলোর দেখা পেয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য কেঁপে কেঁপে উঠেছে পুরো শরীর। সেই আলোর রেখা ধরেই বেরিয়ে পড়ো তুমি। কিন্তু কোথায় যাবে?
অই দূরে হাঁটছে মি. বাদি৷ টেস্ট অব চেরি থেকে বেরিয়ে নিজের কবরে মাটি দেওয়ার জন্য মানুষ খুঁজছে সে৷ তাঁর সঙ্গে চলছ তুমিও। তোমারও একটা নিরাপদ কবর দরকার, আর দরকার একটা শান্তির ঘুম। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে দেখবে পৃথিবীর আর কোথাও কোনো কবর খালি নেই। এমনকি এই পৃথিবীতে আর কোনো মানুষ নেই। তুমি আর মি. বাদি। বাদি অবশ্য মানুষ নন। তিনি মূলত সিনেমার চরিত্র। কিন্তু যে মুহূর্তে পৃথিবীতে আর কোনো মানুষ নেই, তখন সবাই মানুষ কিংবা না মানুষ। তুমি আর বাদি না মানুষের পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াও। যেখানে পড়ে আছে সর্বশেষ যুদ্ধের ছাই ভস্ম।
তখনও মানুষ লড়ছে৷ নাহ, ঠিক মানুষ নয়। কোথাও লড়ছে মানুষের দুটি হাত৷ কোথাও দুটি পা। বেশির ভাগ জায়গায় যা লড়ছে তা মানুষের রুহ বা আত্মা। না মানুষের পৃথিবীতে এই লড়াইও তুমি দেখতে পাবে৷ এই লড়াই শেষ হওয়ার অপেক্ষাতেই আছে ফেরেশতা। অতপর ফুঁসে ওঠবে শিঙ্গা। শুরু হবে তোলপাড়। তুমি শেষবারের মতো পৃথিবীকে দেখে নিতে চাও। বুঝে নিতে চাও হলুদ আর নীলের পার্থক্য মানে চোখের ব্যর্থতা। এইসব ব্যর্থতা নোট করে নিতেই তোমার আর বাদির ফিরে আসা। যদিও তোমরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলো না। দুজনেই দ্রুত হাত চালিয়ে টুকে নিতে থাক মানুষের সীমাহীন ব্যর্থতা।
দুটি ডুমুর ফল, একটা আধ খাওয়া তরমুজ আর ডোরা মুছে ফেলা জিরাফের ছাল। এসবও যে মানুষের ব্যর্থতা হতে পারে তা আগে জানতে না। বৃষ্টির দিয়ে তিরের ফলার মতো ছুটে যাওয়া খরগোশটাও যে মানুষের ব্যর্থতা তাও তুমি জানতে না। জানতে না শুক্রবার থেকে সোমবারকে আলাদা করার প্রচেষ্টাও মূলত মানুষেরই ব্যর্থতা। এমনকি শেষ পর্যন্ত তুমি বুঝবে মানুষের বেঁচে থাকা কিংবা মরে যাওয়াও মূলত মানুষের ব্যর্থতাই। সমস্ত ব্যর্থতাকে তুমি লিখে নাও মানুষের ইউনিভার্সাল নোটখাতায়। যেখানে আর কোনো মানুষ নেই। আছে এলোমেলো গুটিসুটি মেরে মেউলের মতো থমকে থাকা এক খণ্ড ব্যর্থতা।