সুন্দরবনের অল্প কিছু অংশ দেখা হয়েছিল অনেক বছর আগে। রেডিও অ্যানাউন্সার্স ক্লাব প্রথম যখন গঠন হয় খুলনায়, তখন। সিলেট বেতারের প্রতিনিধি হয়ে শতাধিক বেতার টেলিভিশনের ঘোষক-ঘোষিকাদের সম্মেলনে যোগ দিতে ১৯৯০ সালে খুলনায় আমার প্রথম ভ্রমণ। তিন দিনের সে সম্মেলনের অংশ হিসেবে নেভির জাহাজে চড়ে ঘুরে এসেছিলাম সুন্দরবনের কিছু অংশ। একটা বিশদ ভ্রমণের আকাক্সক্ষা থেকেই ২০১৮ সালের নভেম্বরে গেলাম সুন্দরবন বেড়াতে। বনের প্রেমে পড়ে আবার গেলাম গত বছরের (২০২১) অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। তবে এ লেখায় রইল ২০১৮ সালের স্মৃতির প্রসঙ্গ।
দুই দিন-তিন রাতের এক প্যাকেজ নিয়ে আমরা স্বপ্নের বন দেখতে যাব। রাজীব (আমার সহকর্মী, এখন খুলনায় কর্মরত) প্রায় সব ব্যবস্থা করে দিল। তাঁর মাধ্যমেই পরিচয় হলো খুলনার পর্যটন শিল্পের দক্ষ এবং সুপরিচিত একজন মানুষ কচি ভাইয়ের সঙ্গে। তিনিই আমাদের প্যাকেজ মেকার।
দুপুরের ফ্লাইটে ঢাকা। বিকেলের বিলম্বিত ফ্লাইটে যশোর, তার পর ওখান থেকে বিমানের বাসে চড়ে দুই ঘণ্টায় পৌঁছলাম খুলনা। রাজীবের বাসায় উঠা হলো পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী। গল্প, আড্ডা শেষে রাতের খাবার সেরে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকাল ৭টায় আমরা ছুটব সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে আর রাজীব তাঁর বউ-বাচ্চা নিয়ে যাবে বান্দরবন।
সকালে উঠেই দেখলাম, টেবিলে নাস্তা রেডি। ঝটপট খেয়ে বিদায় নিয়ে টমটম করে ছুটলাম জাহাজ ঘাটে। টমটমের মালিক রিয়াজুল ভাই। বাড়ি বরিশাল। সজ্জন লোক। পরহেজগার। রাজীবের স্ত্রীও ব্যাংকার। খুলনা শহরেই পোস্টিং। রিয়াজুল ভাই নিত্য আনা-নেওয়া করেন তাঁকে। আরেকজন ডাক্তার আছেন। তাঁকেও তিনি প্রতিদিন ঘর থেকে চেম্বারে আনা-নেওয়া করেন। গল্পগুজব করে করে আমরা ছুটলাম জাহাজের উদ্দেশ্যে।
খুলনার জেলঘাট গিয়েই কচি ভাইকে পেলাম। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের অপেক্ষায়। ঘাটে ছোট নৌকা। নৌকায় দুজন বিদেশি। আমরা কচি ভাইয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা বলে নৌকায় উঠলাম। কচি ভাই আমাদের জন্য বড় এক প্যাকেট বিস্কিট, একটা বড় কোকের বোতল আর ২ লিটার ওজনের ২টা খাবার পানি দিলেন শুভেচ্ছা হিসেবে। নৌকায় উঠেই চোখে পড়লো অল্পবয়স্ক দুজন বিদেশি পর্যটক আপেলের সঙ্গে মেয়নিজ জাতীয় কিছু একটা ছুরি দিয়ে লাগিয়ে ব্রেকফাস্ট করছে। আমাদেরকে ‘হাই’ বলে স্বাগত জানালো। অল্পসল্প কথা বলে জানা গেল ছেলেটি এসেছে ফ্রান্স থেকে আর মেয়েটির দেশ কানাডা। কানাডা শুনেই কেমন যেন বুকে একটা ধাক্কা লাগলো। আমার ছেলেটাও যে কানাডা থাকে।
বুট ছেড়ে দিলো জাহাজের উদ্দ্যেশে। জেলঘাটের ওপর পারে জাহাজ ভিড়ানো। ওখান থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে ছাড়বে জাহাজ।
এম ভি রেইনবো চড়ে আমাদের এবারে সুন্দরবন ভ্রমণ শুরু হলো ২৩ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার, সকালে।
দুইরাত তিন দিন বনে-জলে সমুদ্রে কাটাবো আমরা। কথা ছিল এটাচ বাথ একটা কেবিন দেয়া হবে আমাদেরকে। তাই হলো। কিন্তু বিপত্তি ঘটল এটাচ বাথ কেবিন সবগুলো জাহাজের নীচ তলায় আর আমাদের কেবিনটি একেবারেই ইঞ্জিনের পাশে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা দুর্ভাগা। যা হোক, মন খারাপ করলে তো হবে না। লাগেজ রুমে রেখে তালা দিয়ে উপরে উঠে গেলাম। এবার মন ভালো না হয়ে যাবে কই!
উপরে বসার জন্য অনেকগুলো চেয়ার পাতা। এখানেই একটা টেবিলে খাবার-দাবারের আয়োজন। রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাদ রয়েছে। আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে, এই জায়গায় বসেই পর্যটকেরা অপরূপ দৃশ্য দেখবেন। ক্লান্তি এলে হয়তো কিছুক্ষণ বিছানায় গা ছড়িয়ে দিতে ভেতরে যাবেন।
সুন্দরবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জাহাজ। বসে আছি জাহাজের ছাদে। শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছে মিষ্টি হিমেল হাওয়া। জলের উপর এগিয়ে চলছে আমাদের জাহাজ। দুপাশে নোঙর করে আছে অসংখ্য কারগো। মাল ওঠানামা করছে। নদীর দুপাশ জুড়ে কোলাহল। এই কোলাহল ভেদ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি শুনশান নিরবতার দিকে। ভৈরব ও রূপসার মিলনে প্রবাহিত জলপথ ধরে আমরা এগুচ্ছি। টুংটাং শব্দ হচ্ছে জাহাজের ছাদের পেছন দিকে। তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছি বিশাল দিগন্তের দিকে। শব্দে সম্বিত ফিরে পেলাম। চেয়ে দেখি সকালের নাস্তা রেডি হচ্ছে। শুধুই নাস্তা বললে ভুল হবে। বলা দেতে পারে রাজকীয় খাবারের আয়োজন।
বাঘ দেখিনি। পায়ের ছাপ দেখেছি। কাঠের ট্রেইল ধরে যখন হাঁটছিলাম হারবারিয়ায়। জেনেছি এখানে বাস করে ১০৫টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২৩ জনের দলে ৬ জন বিদেশির মুগ্ধতা দেখে গর্বে ভরেছে বুক। এ আমার বাংলাদেশ। সারাদিন সারারাত জাহাজে। দুপাশে ঘন বন। সুন্দরবন। হারবারিয়া ঘুরে দেখলাম অসংখ্য হরিনের পায়ের ছাপ। পাখির কলতান। এই প্রথম পা রাখলাম আমাদের গর্বের ধন সুন্দরবনের মাটিতে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। প্রায় ১ ঘণ্টা বনে ঘুরে উঠে এলাম জাহাজে। জাহাজ এগিয়ে চললো নদীপথে। দুপাশে ঘন বন। নদীতীরে গাছের ডালে মাঝে মাঝে দেখলাম একা বসে থাকা সাদা বক। আমরা ছুটছি কটকার উদ্দেশ্যে। বিকেল সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এলো এভাবেই। জাহাজের ছাদে চেয়ারে বসে দেখছি দুপাশের বন। নিরব বসে থেকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এই সুন্দরবন মুগ্ধ হয়ে দেখছি। বিকেল, সন্ধ্যা, রাতÑএকেক সময়ে একেক রকমের মুগ্ধতায় তন্ময় হয়ে বসে থাকি। কেবিনে যেতে ইচ্ছে করে না। সময় মতো খাবারদাবার হচ্ছে এখানেই। চা-কফি তো আছেই। সঙ্গে আছে ঝুলানো এক ছড়ি চাপাকলা।
কটকায় পৌঁছলাম রাতে। মধ্যরাত পর্যন্ত বসে রইলাম ছাদে। তারপর আমি আর কুমকুম কেবিনে গেলাম। জেনারেটর চলছে। তার শব্দে মাথা ভনভন করছে। ঘুমুতে ইচ্ছে করছে না। অস্বস্তির মধ্যে জেনারেটরের শব্দটাই শুধু। ছাদে থাকলে এর যন্ত্রণা হারিয়ে যায় বনের অপরূপ সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়।
গাইড ভোর পাঁচটায় সবাইকে নক করলেন। আমি উঠেই ছাদে চলে গেলাম। আহা! সুন্দরবনে প্রথম রাত কাটিয়ে অদ্ভূত সুন্দর এক ভোর। মিষ্টি ঝিরিঝিরি হাওয়া আর পাখির ডাক। আর শুধু নিস্তব্দতা। এ ভালোলাগা যেন বুকের হাড় জুড়িয়ে দেয়।
ভোর ছটায় আমরা বোটে করে তীরে উঠলাম। কটকা। জামতলি সমুদ্র সৈকত। টাইগার পয়েন্ট হয়ে যাবার পথে সুনশান বন। শরীরে কাঁপন ধরায়। দূরে হরিনেরা ঘাস খায়। পাখির কলতান। ডানে-বায়ে লাল রঙের পত্রপল্লবে সুশোভিত সুন্দরী গাছ। একদিকে বন অন্যদিকে জামতলি বিচ। বাংলাদেশের শেষ সীমানা।
প্রায় দু-ঘণ্টা বনে হাঁটা হলো যেতে-আসতে। ফিরে এসে নাস্তা সেরে জাহাজের উপরে বসে রইলাম। কি সুন্দর! প্রাণ জুড়িয়ে যায় যেন।
সন্ধ্যা নামে দুপাশে বন আর আমাদের জাহাজ এগিয়ে যায় অন্ধকার ভেদ করে নদীজলে।
জাহাজের ছাদের কৃত্রিম আলো আর চাঁদের মায়াবি আলো দুপাশের বনে ছড়িয়ে পড়ছে। অদূরে আরও চারটি জাহাজ। কটকায় রাত যাপন। বিকেলে ছোট বোট দিয়ে ঘুরে এলাম কটকা অফিস পাড়।
২০০৭ সালের ভয়াবহ সিডরের থাবা এখনো লেগে আছে গাছে দালানে। কেমন ছিল তখন বনের পাখি, হরিণ, আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারগুলো আর বিশাল প্রাণীকূল?
জাহাজের সারেং মুজিব ভাই, শেফ নয়নগাজি, গাইড পিকলু ভাই কিংবা আমাদের ট্রিপের আর্মগার্ড মোস্তফা ভাই, সুলতান ভাইÑসবার কাছে সুন্দরবনের গল্প শুনি আর অবাক হই। কি মমতার বাঁধনে আগলে রেখেছে আমাদের এই বন।
আমরা ছুটছি হিরন পয়েন্টের দিকে। হিরন পয়েন্টের অন্য নাম নীলকমল। শুক্রবার সকালে যাত্রা শুরু করে কটকায় রাত কাটিয়ে শনিবার ভোরে যাত্রা শুরু। বঙ্গোপসাগর ধরে হিরনপয়েন্ট ঘুরে আমরা যাব দুবলার চর। দুবলার চরের একটা চরের নাম আলোরকোল। ওখানে সূর্যাস্ত দেখে চরের জেলেদের জীবনযাপনের চিত্র দেখব নিজ চোখে। হু হু হাওয়া আর মিষ্টি রোদ। জাহাজ এতক্ষণ ছিল শান্ত। এখন ঢেউয়ের সঙ্গে দুলছে। বোঝা যাচ্ছে, এ দুলুনি নদীর না, সাগরের। নানা বাঁক নিয়ে ৪ ঘণ্টার যাত্রায় কটকা থেকে পৌঁছলাম হিরন পয়েন্ট।
কাঠ নির্মিত ট্রেইল ধরে বনে ঢুকছি আমরা। সামনে পেছনে আর্মগার্ড। আমরা হাঁটছি খুবই সাবধানে। শব্দ করে হাঁটলে প্রাণীগুলো পালাবে। আমাদের ভ্রমণসঙ্গী বাচ্চু সাহেবের হাতে কাপড়ের ব্যাগ। হঠাৎ বেশ বড়সড় এক বানর এক ঝাঁপটায় ব্যাগ নিয়ে লাফ দিয়ে কাঠের সেতুর নীচে নেমে গেল। ব্যাগ থেকে দ্রুত সব বের করে দেখে নিলো। ব্যাগের ভেতরে ছিল কয়েক টুকরা পাউরুটি। বানর সেটি নিয়ে ব্যাগটা রেখে কিছু দূরে চলে গেলেন। বোঝাল, ‘আমার আর কিছু লাগবে না, ব্যাগ নিয়ে যাও।’ এক তরুণ গাছ বেয়ে নিচে নেমে ব্যাগ নিয়ে এলো। বাচ্চু সাহেব অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। লেখালেখি করেন। ব্যাগ থেকে বের করে আমাকে তাঁর দুটো লেখা উপহার দিলেন। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে আমরা ওয়াচ টাওয়ারে পৌঁছলাম। চারিদিকে গভীর অরণ্য। খুব বেশি দূরে কিছু দেখা যায় না উঁচু ঘন বৃক্ষরাজির কারণে।
বের হয়ে জাহাজে উঠে চললাম দুবলার চর। যেতে যেতে জাহাজে বসেই সূর্যাস্ত দেখা হলো। সাগরে নেমেছে সন্ধ্যা। দূরে চরে অনেকগুলো মাছ ধরার নৌকা সারি সারি বাঁধা। জাহাজ নোঙ্গর করে চরে উঠতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল।
আমরা ছোট বোটে করে চরে উঠলাম। ফ্রান্স থেকে আসা নিকোলাস আর কানাডার মাশা ঝাঁপিয়ে পড়লো সমুদ্র স্নানে। সঙ্গে আরও কয়েক যুবক। আমরা পাড়েই দাঁড়িয়ে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ শুনছি আর কূল-কিনারাবিহীন সাগরে তাকিয়ে আছি। পেছনে হাজারেরও বেশি জেলেদের কোলাহল আর মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরির কাজ চলছে ছোট্ট এ চরে।
এখানে কোনো স্থায়ী বাসিন্দা নেই। নভেম্বর থেকে মার্চ। জেলেরা আসেন মাছ ধরতে। ছোট ছোট আবাসস্থল, বাজারের দোকান সবই অস্থায়ী। চর ছেড়ে যাবার সময় সব কিছু সঙ্গে নিয়ে যান জেলেরা।
কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলো। তাদের দুঃসাহসী জীবনের করুণ কাহিনির কিছু খ-কথা শোনা হলো।
মহাজনী দাদন ব্যবসা, প্রকৃতির সঙ্গে লড়ে জেলেদের জীবন বাজি রেখে মাছ ধরার কাহিনী। অনেকেই শুটকি কিনলেন। আমরা প্লেনে করে ফিরব তাই ইচ্ছে থাকলেও কেনা হলো না।
চললাম জাহাজে। রাতে খাবারের বিশাল আয়োজন। বারবিকিউ হচ্ছে জাহাজের উপরে। কয়লায় তৈরি আগুন থেকে সৃষ্ট ধোয়া উড়ে যাচ্ছে দুবলার চরের দিকে। কেন জানি বুকটা হু হু করে উঠল। চরের মানুষগুলো কী দুঃসাহসী জীবনযাপন করছে জীবন বাজি রেখে। জাহাজ ছেড়ে দিলো। আমি তাকিয়ে রইলাম চরবাসী জেলেদের জ্বালানো কেরোসিনের আলোর দিকে। ভালো থেকো, নিরাপদে থেকো দুবলার জেলে বন্ধুরা।
সাগর থেকে জাহাজ ঢুকে গেল তিনকোনা আইল্যান্ডে। এখন আর ধূ ধূ জল নেই। জাহাজের দুলুনি নেই। শান্ত সুনশান! আবার দুপাশ জুড়ে সুন্দরবনের গভীর অরণ্য।
রাত এখানেই কাটবে। গল্প-আড্ডায় জমে উঠেছে জাহাজের ছাদ। নীচে আমাদের কেবিন। বন্ধ কেবিনে যেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে সারারাত বসে থাকি!
শেষ রাতে নামলাম। করমজলের কাছে এসে নোঙ্গর করেছে আমাদের জাহাজ। রাত কাটবে এখানেই। আর সকালের নাস্তা সেরে আমরা উঠব করমজল। আর সেখান থেকেই মংলা হয়ে তৃতীয় দিনে ফিরে যাব খুলনা।
ভোরেই জাহাজের ছাদে উঠে বসে আছি। একা। সবাই যার যার কেবিনে। অন্যরকম এক ভালো লাগা নিয়ে উপভোগ করছি প্রকৃতির অনন্য দান সুন্দরবনে নেমে আসা স্নিগ্ধ ভোর। হঠাৎ দেখি ছাদে এলেন মনিকা। মধ্যবয়েসী, পেশায় জজ মনিকা এসেছেন নিউজিল্যান্ড থেকে। বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। এ দেশ ঘুরে মুগ্ধ তিনি। এর আগে আরও দুজন বিদেশির সঙ্গে আমার সখ্যতা হয়েছে। একজন ফ্রান্সের নিকোলাস অন্যজন কানাডার মাশা। তাঁদের সঙ্গে কথা হলো ইশমামকে নিয়ে, বাংলাদেশ নিয়ে। এ দেশের প্রকৃতি আর মানুষ তাঁদের মুগ্ধ করেছে।
সকাল নয়টায় উঠলাম করমজলে। দুদিন ছিলাম মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে। হিরনপয়েন্ট আর দুবলার চরে শুধুমাত্র টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এখানে আমার মোবাইলের নেটওয়ার্ক পেয়ে গেলাম। পরিবার-পরিজনের খোঁজ নেয়া হলো দুদিন পর।
করমজল থেকেই মূলত সুন্দরবন শুরু। আমরা এখন ডেংমারি খালে। যদিও আমরা ফেরার পথেই শুরুর অংশতে নামলাম আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনাকারীদের প্ল্যানমাফিক।
করমজল ফরেস্ট অফিসের তত্ত্বাবধায়নে এখানে সুন্দরবনের একটা পূর্ণ ধারনা উপস্থাপন করা হয়েছে। হরিণ আর কুমিরের বাচ্চা পালন করা হচ্ছে, যা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এ ছাড়া এখানে গাছের পরিচয় লিখে রাখা আছে। আছে বন ও বনের প্রাণীদের বিবরণ।
বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে জাহাজে উঠলাম। জাহাজ চললো মংলা হয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যায় সবাই মিলে জাহাজের ছাদে আনন্দনৃত্য শুরু করলেন। আমরাও যোগ দিলাম। বিদেশিরা ভীষণ আনন্দিত। তাঁরাই এই আনন্দনৃত্যের মূল আকর্ষণ। ঘাম ঝরানো নাচে মেতে উঠলো সবাই।
খুলনায় পৌঁছতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। বিদায়ের বিষাদ নেমে এলো জাহাজে। তিনদিনের চমৎকার এ যাত্রার যবনিকা টেনে সবাই ছুটলাম যার যার গন্তব্যে।
ভালো থেকো সুন্দরবন। ভালো থেকো বনের প্রাণিকূল। ভালো থেকো দুবলারচরের সাহসী জেলের দল।
(ভ্রমণকাল : ১৬, ১৭, ১৮ নভেম্বর ২০১৮। শুক্র, শনি, রোববার)।