রুহেনের সপ্তকুমারী
কবজ ভেঙে উরুবেলায় উড়ে
শ্বাসরুদ্ধ আমার হাইন্জাবেলার পাখি
বোধিবৃক্ষ ভেসে চলে; মনের সাগরে, জোয়ারে, জ্যোৎস্নায়
মান্দা স্বকালে আমি তারে ডাকি
শুকনো গাছের বাতেনি কথা
সুজাতার পায়েস বেদনা খুঁড়ে তাহার গৌতম মনে
ঝাঁক ছেড়ে আমি একলা পাখি
তপস্যা করি মরাগাছের ডালে
কুয়োপারে হাস্য করে রুহেনের সপ্তকুমারী
অতলে ধ্বসে বেদনার পাহাড়
অন্তরে রক্তারক্তি
একদিন মরুতৃষ্ণায় কাঁদিয়াছে মুসার হাড়
নিশুতির মাঝে হাঁটি আমি
নিষ্কৃতি খুঁজি ফেরাউনের সাঁজোয়া ভেঙে
ফেনার সংসার নীলনদে
আমি নিঃসঙ্গ হাঁটি অনন্তের পথে।
তুমি খুনি,আমিও তাই
আমি দীর্ঘদিন সাদা সাদা গুরুন্ডা ফুলের অতলে লুকিয়ে রেখেছি রসুনের মতো দেখিতে আমার নিঃসঙ্গ বেদনা। আমি আমার সিনার সবগুলো মুরমুরির ফাঁক দিয়ে খুঁজেছি সখি তোমাকে, আর বাতাসে উড়ন্ত তোমার কালোকেশে শব্দের দানা। গভীর নিশির স্কাই-পথে হঠাৎ তোমার কৃষ্ণ কৃষ্ণ ডাক, তখন আমি উড়ন্ত ছিলাম পুবালি বাতাসে, তোমার ডাক শোনে নীল আকাশে জমে আমার সিনার নিঃশ্বাসে কালো ধোঁয়া, সকালের পৃথিবী কালো হয়, এখানে কালো বৃষ্টি ঝরে, আমার সিনা-ভাঙা বৃষ্টি। বৃষ্টির জলে দূরদেশের খুস্ত পাহাড়ের পাদদেশে আষাঢ়ি ঢলে প্রবাহিত নহরে লিজা। লিজার জলে সাঁতার কেটে আমি বেহেস্তি আদমের নিঃসঙ্গ বেদনা কাতর হয়। মনে ঝরে রক্ত। তুমি চামড়ার অতলে লুকিয়ে রাখো তোমার মনের কথা, আর ক্রমাগত আমার ভাব দেহ থেকে ভারি করো মোবাইল চলনায়। আমি তোমার পথ চেয়ে নৌকা চালাই বুড়িগঙ্গার জলে। পথে-পথে যেতে-যেতে যারে দেখি তারে মনে হয় তুমি। তুমি কি জানো না সখি, সবই মিথ্যা; যা আছে দুনিয়ার গুলশান-বনানী? আমি জানি; আলবার্ট নোবেলের ডিনামাইটের নিচে মানুষ বিধ্বস্ত। তবুও আমি মানুষের দুর্গতির ফাঁক দিয়ে হেটে হেটে গাছের কাঁচা আমে খুঁজি আলবার্ট নোবেলের বার্থার। সখি, তুমি কি হবে আমার কালিক বার্থার? মানুষ-ই মানুষ খুন করে, তবু আমি মানুষ খুঁজি তোমার মতো মানুষের ভিড়ে। হ্যাঁ, আমি তাও জানি, হয়তো তুমি আমার খুনি। কারণ, তুমি মানুষ,তুমি-ই খুনি। আমিও তাই। তুমি যেদিন আমাকে নির্মমভাবে খুন করবে। নিষ্ঠুর হয়ে পিছনে ফেলে চলে যাবে, সে দিনও জেনে যেও; তোমার সাথে আমার ভালোবাসায় মিথ্যা মেকিয়াভেলি ছিলো না।
শাহের পরানে নুরের জাহান
আমি ঈশ্বরে নশ্বর হলে
নভোমণ্ডলে দেখি নুরের জাহান
আধাঁরে আমার ফুলের কুসুম
খাদিম পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে কাঁদে শাহের পরান
আলো জ্বলে
আমি জ্বলি
নীরবে জ্বলে মায়াফুলের কলি
সূর্যের গাঢ় চুম্বন
মায়ার ঘরে বেদনার শিশির ভাঙে
গোপন কথা
আঁধারে আঁধারে আমার বুক কুঁড়ে
নির্জনে জ্বলে
নিঃসঙ্গ গাছের পাতা
সবুজ শ্যামলের ধানক্ষেতে আমি জ্বলে ছাই হই
শাহের পরান
জালালের কৈতর উড়ে আকাশে
তার বুকে লুকিয়ে কাঁদে নিঃসঙ্গ নুরের জাহান।
নিথর প্রেমের লবনাক্ত জল
মায়ার ক্ষেত্রে অঙ্করিত দায়িত্বের বীজ গোপন বাসরে ভাঙে নিথর প্রেমের লবনাক্ত জল। আমায় সওদা করে প্রতিক্ষণ আমার ভালোবাসা। খেলাঘরের ক্ষেতে প্রষ্ফূটিত শান্তনার ফুল ঝরে অসময়ের কালোরাত। মনের চিমটি ঝাকুনি দিয়ে উঠে নিজের অস্তিত্বে। মুসা নবির মতো আমিও গোপনে তোমায় দেখার বিন্দু বিন্দু জলে তুর পাহাড় জ্বালাই। প্রাপ্তিতে তৃপ্তি নাই। দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের যোগসূত্রে আমার মায়াগাছের সকল পাতা ঝেরে বেঁধে দিলাম তোমার ওড়নার মাথায়। বিনিময়ে ভালোবাসা কিংবা ঘৃনা, দু’টা-ই আমার জীবনের অমূল্যধন। তবে, আমি আতংকিত হই, যেদিন তোমার কাকুতি খোঁড়ে না আমার মন।
কর্নিথের রোদ
হাড়কাঁপা শীতভোরে
তুষারে সাদা হয় অন্ধকার শহরের বুক
মাটির ঘরে বন্দি আমি কালের ঘোড়া
কংকটের মতো উড়ি কালান্তরে
মানুষে লাশ মাড়িয়ে প্রজাপতির সোহাগ মূর্চায়
বুনো আলেকজান্ডার
নৃপতি তুমি সরে দাঁড়াও
আমার সাথে করো না সূর্য্যরে আড়াল
কচুপাতার বাতাসে
কেঁপে ওঠে বটগাছের আগা
শেকড়ে ক্ষয় হয়
কালোজামের অহংকার
আমি একলা পাখি
স্বপ্নিল চোখে নীরব হলে
আমার ডায়োজেনিস মনে
থিতিয়ে পড়ে কর্নিথের রোদ
পৃথিবীর মানচিত্রে
আমি ক্ষুদ্র পুরুপাখি ধীমান
বিলেতের আকাশে
নাইওরি রাজহাঁস উড়ে
নিসর্গে
বসন্তের গুণগুণ জয়গান
আমি আর আমি নয়
আমি শুকনো গাছের মরা ডালে জেগে-ওঠা কচিপাতা
ফুলের কলি
মানুষের ভালোবাসা
আর
একখণ্ড কবিতা।
ঝরাপাতার শূন্য সময়
মাটির ছাচে দীর্ঘ ঢেকেছি আমি ঝরাপাতার শূন্য সময়। সেদিন আমাকে আরো শূন্য করে অন্ধকারের মুখোমুখি তোমার এক লুকমা মায়া। সাধনে আমার ভজন তুমি। ভজনের দানায় দানায় মায়ার লেলিহান শিখা। মানুষের আত্মা যখন দখল করে নিয়েছে যন্ত্রের কোলাহল, তখন আমি কালিক বিন্দাবনের কৃষ্ণকলি তোমার আত্মায় খুঁজি আত্মার নৈঃশব্দ গান। তবু কোনো জানি আত্মিকতায় খুব ভয় হয়। আত্মায় আত্মা রাখতে গেলে শুধু আমার ক্ষয় হয়। ভালোবাসাবাসির জগতে বড়-ই কপালপোড়া সখি আমি। অথচ আমারও যে একটা মন আছে।