আসাদ চৌধুরী! কবি হিশেবে যে বিপুল খ্যাতি পেয়েছেন; একজন সমাজচিন্তক ও বিশ্লেষক কিংবা পণ্ডিত হিশেবে ততোটুকু পাননি। হয়তো সেটা গ্রহণেও তিনি এতোটা আগ্রহী নয়। এমনও কখনো কখনো মনে হয়, তার পাণ্ডিত্য কবিত্বের শক্তিকে কিছুটা হলেও অবদমিত করেছে। যতোটা আবেগ নিঃসরণ হয়েছে তার কবিতায় তারচেয়ে ঢের বেশি হয়েছে গ্রামীণ লৌকিক দর্শন ও লোকায়িত সংস্কৃতি বর্ণনায়। হ্যা, আবেগ ছিলো। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে আবেগ নিয়ে মেঘের মতো নিঃসঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াননি। তার মধ্যে আবেগের কৃত্রিমতা নয়; ছিলো এক দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। সেটা তার কবিতা, প্রবন্ধ বা চিন্তায়।
কবি আসাদ চৌধুরী আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক যে সংকটের মধ্য দিয়ে হাজির হয়েছিলেন, সেই যাত্রা তার চিন্তা ও প্রজ্ঞাকে করে তুলেছিল আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। কবি হিশেবে আসাদ চৌধুরী যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, তারচেয়ে অনেক বেশি সমাজচিন্তক হিশেবে। অন্তত দীর্ঘ আলাপচারিতায় আমার কাছে সেটাই মনে হয়েছে। তার কিছু প্রমাণ হয়তো আমরা এই সাক্ষাৎকারেই পাবো।
যাই হোক, কবি আসাদ চৌধুরী কিছুদিন আগে সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের একটি সাহিত্য সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে । সম্মেলনের পূর্বে কবি ও গবেষক সৈয়দ মবনুর শাহী ঈদগাহের বাসায় আসাদ চৌধীরীর সঙ্গে এক দীর্ঘ আলাপচারিতা হয়। যেখানে ধর্ম, দেশভাগ, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নগরায়ন, সিলেটের আঞ্চলিক সাহিত্য ও বিশ্ব রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। আলাপচারিতার সময় যেহেতু দীর্ঘ ছিলো তাই সেখানে কোনো বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। অনেক সময় কবি নিজ থেকে কথা বলে গেছেন। এই দীর্ঘ আলোচনায় প্রথম থেকেই কবি সৈয়দ মবনু, প্রাবন্ধিক মীর ফায়সাল আলী, শৈলীর সাবেক সভাপতি হেলাল হামাম ও সাধারণ সম্পাদক ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন। শেষের দিকে কবি নৃপেন্দলাল দাশ ও গল্পকার সেলিম আওয়ালের উপস্থিতি আলাপচারিতাকে আরো বেশি প্রাঞ্জল করে তুলেছিলো। এই গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতার বেশ কিছু অংশ শিল্প-সাহিত্যের ওয়েবজিন দ্রাবিড়-এ ধারাবাহিক প্রকাশ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্ব পড়ার আমন্ত্রন থাকলো। – মাহবুব মুহম্মদ
মীর ফয়সাল: সারা পৃথিবীতেই এমন। মুসলমানরা ইউনাইটেড হয়ে কাজ করতে পারেন নাই।
আসাদ চৌধুরী: নট নেসেসারি। বাঙালি মুসলমানরা চ্যাম্পিয়ান। (আসাদ চৌধুরীর এই কথায় সবাই সমস্বরে হেসে ওঠেন) আবার বলতে শুরু করলেন, আমি টরেন্টোর কথা বলি। ঐখানের গভর্মেন্ট কমিউনিটির জন্য বিল্ডিং নির্মাণের জন্য টাকা দিবে। বাঙালি এপ্লিকেশন করলো আট থেকে নয়জন। পাকিস্তানিদের মধ্যে দলাদলি অনেক বেশি। তবে তারা এপ্লাই করলো মাত্র একজন। বিল্ডিং পেয়ে গেলো ওরা। পাকিস্তানিদের বিল্ডিং আছে, বাঙালিদের এখনও পর্যন্ত বিল্ডিং নাই। আমি না পাই, ওরে পাইতে দিমু না। এইতো বাঙালি। সারওয়ার্দীর সঙ্গে শেরে বাংলার রাজনৈতিক বিভেদ ছিলো এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। তারা কিন্তু মোটামুটি ওয়েস্টার্ন স্টাইলের ডেমোক্রেসি পছন্দ করতেন। মাওলানা ভাসানীর মধ্যে একটুখানি ছিলো ইসলামিক ডেমোক্রেসি বা ইসলামিক সোসালিজম কাজ করছিলো। কোনো এক সময় বাঙালি এবং মুসলমানকে সাংঘর্ষিক ভাবা হতো।
একান্ত আলাপচারিতায় আসাদ চৌধুরী প্রথম পর্ব পড়ুন ↓
মাহবুব মুহম্মদ: আপনার কাছে কি মনে হয় এই সংকট বাঙালি মুসলমানকে আরো পেছনের দিকে নিয়ে গেছে?
আসাদ চৌধুরী: অবশ্যই নিয়ে গেছে। বাঙালি মুসলমানের সংকটটা এখন কী, এই মুহুর্তে? তুমি বিশ্বাস করবে না! শিক্ষিত মুসলমান যারা কলেজ বা ইউনিভার্সিটি লেভেলে পড়াশুনা করছে, এরা প্রকাশ্যে নিজের আইডেন্টিটি প্রকাশ করে না সে যে মুসলমান। যদি করে তাহলে তার স্যাকুলারিজমটা নষ্ট হয়ে যাবে। ধর্মনিরপেক্ষ ভাবটা নষ্ট হয়ে যাবে। রোজা রাখলেও বলে না। আমার বন্ধু রোজা রাখছে কিন্তু বলে না। আমি রোজা না রাখলেও বলবো আমি মুসলমান। বলবোই। আমার মুসলমান আইডেন্টিটিতে কোনো দ্বিধা নাই। আমি আল্লাহ সম্পর্কে জোর করে কিছু বলতে পারবো না। সে বিষয়ে আমার ধারণা খুব কম। কিন্তু আমার নবী সম্পর্কে ধারণা আছে। সেখান থেকে কেউ আমাকে একচুল সরাতে পারবে না। কিন্তু তার অর্থ এই না আমি একটু মারফতি লাইনের লোক। বরং আমার কাছে শরীয়ত অনেকটা বেটার মনে হয়। কিন্তু মারফতির মধ্যে আধ্যাত্মিক বা ভেতরের চিন্তা আছে যেটা শরীয়ত মারফত ছাড়া বোঝতে পারবে না। বিকল্প কিছু নাই। আমার সঙ্গে অনেক তর্ক করতে পারেন, যেমন আমি রাসুল সম্পর্কে বলি, সিরিয়াসলি বলি, কে কি মনে করেন আমার কিছু যায় আসে না। গাফফার ভাইয়ের (আবদুল গাফফার) স্ত্রী যখন মারা গেলেন সন্ধ্যার দিকে কবর দিয়ে আসার পর আমাকে জিজ্ঞাস করলেন আচ্ছা তুমি কি পরকাল বিশ্বাস করো? আমি বলেছি, পরকাল সম্পর্কে আমার ধারণা অস্পষ্ট। আমি বলতে পারবো না। মরার সঙ্গে সঙ্গে ফেরেশতা এসে জিজ্ঞাস করবে আমার দ্বীন কী? আমার রব কে? এর পর কি হবে না হবে সমস্ত কিছু মিলিয়ে ভীতিকর যে পরিস্থিতি আমাদের বক্তৃতায় বলা হয়ে থাকে এবং আমরাও বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি না তা না কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি। এই প্রশ্নগুলো কিন্তু আমাদের কাবু করে। আমার কাছে যেটা অবিশ্বাস্য মনে হয়, সেটা নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই কারণ তখন অনেক নির্মম কথা মানুষের মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে। যেমন মাদার তেরেসা, উনি দুজখে যাবেন এটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে? পেনিসিলিন যিনি আবিষ্কার করেছিলেন বা যারা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সরঞ্জাম আবিষ্কার করেছেন এরা সব দুজখে যাবে? এটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু এটা তো মুসলমান হিসাবে দ্বায়িত, যারা আল্লাহ ও রাসুলকে স্বীকার করবে না তারা যতোই ভালো কাজ করুক না কেন তাদের দুজখে যেতে হবে।
মীর ফয়সাল: আমরা যখন খুব দুর্বলবোধ করি বা অসুস্থ বেশি হয়ে যাই, তখন অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে পরকাল বলে যে কিছু একটা আছে এটা বিশ্বাস করার তাড়না ভেতর থেকে অনেক বেশি হয়। এটা এমন এক জিনিস যেটা আটকানো যায় না। আমার বাবা ছিলেন কমিউনিস্ট। তার বন্ধুদের পুরো সার্কেলটা কমিউনিস্ট ছাড়া কেউ ছিলো না। কিন্তু খুব ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার হলো এরা প্রত্যেকেই এখন নামাজ পরেন ও ধর্ম-কর্ম করেন। এটা আসলে মানুষের রক্তের মধ্যে কিছু একটা আছে।
আসাদ চৌধুরী: এটা মানুষের সহজাত। হাসান রাজার একটা গান আছে না, কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরও মাজার। কি অবিশ্বাস্য চিন্তা কর যায়। উনি কত বড় কবি ছিলেন সেটা বুঝা যায়।
কথাবার্তার এই সময়ে সৈয়দ মবনু কবি নৃপেন্দলাল দাশকে নিয়ে ঘরে ডুকলেন। পরিচয় করিয়ে দিলেন আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে। কবি সিলেটে আসার খবর শুনে শ্রীমঙ্গল থেকে এসেছেন দেখা করতে। নৃপেন্দলাল তার লেখা ‘শ্রীভূমি সিলেটে রবীন্দ্রনাথ’ বইটি আসাদ চৌধুরীকে দিয়ে বলেন- রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সিলেটের মানুষের কী সম্পর্ক ছিলো সেটা নিয়ে এই বই।
আসাদ চৌধুরী খুব আগ্রহ নিয়ে বইটি খুলে দেখতে দেখতে বললেন- সিলেটে রবীন্দ্রনাথের সামনে একজন ভদ্রলোক সম্ভবত উর্দুতে বক্তৃতা দিয়েছিলেন?
নৃপেন্দলাল বললেন- হ্যা। উনি ছিলেন আসামের শিক্ষামন্ত্রী কাপ্তান মিয়া। উনাদের পারিবারিক ভাষা ছিলো উর্দু। উনি শুদ্ধ বাংলা বলতে পারতেন না, তবে ইংরেজি খুব ভাল জানতেন। উর্দুতে উনার বক্তব্যের পর রবীন্দ্রনাথ তখন খুব সমস্যায় পরেছিলেন। বললেন আমি বাংলায় বলবো না ইংরেজিতে? কারণ উনি তো উর্দুতে বললো।
আসাদ চৌধুরী প্রশ্ন করলেন- এটার সোর্সটা কী?
নৃপেন্দলাল বললেন- সিলেট থেকে অসাধারণ একটা বই বেরিয়েছিল। কবি প্রণাম, পরমানন্দ স্বরসতীর দেয়া এই নামটা। কলকাতা থেকে এটির রিপ্রিন্ট হয়েছিলো, শঙ্খ ঘোষ তার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। সেই বইতে এ সম্পর্কে আছে। আমার একটা বই বেরিয়েছে ঢাকা থেকে মুক্তধারা করেছে; শ্রীভূমি সিলেটে রবীন্দ্রনাথ। এই বইতে আমি বিস্তারিত লিখেছি।
কথা বলার এই ফাঁকে আসাদ চৌধুরী নৃপেন্দলালের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। উত্তরে নৃপেন্দলাল বলেন- আমি অধ্যাপক ছিলাম। ঝিনাইদাহের কেসি কলেজ থেকে অবসরে গেছি।
আসাদ চৌধুরী আবার বলা শুরু করলেন- আমি এই একটা বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে এই ভদ্রলোক ইংরেজি না উর্দুতে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ খুব বিস্মৃত হয়েছিলেন তার সামনে সিলেটের মানুষ বাংলাতে বলছে না কিছু, যা বলছে সব উর্দুতে। আসাদ চৌধুরী জানতে চাইলেন প্রশান্ত কুমার পাল কি এই বিষয়ে কিছু লিখেছিলেন ?
নৃপেন্দলাল বললেন, উনি অনেক জায়গায় ভুল তথ্য দিয়েছেন। এমসি কলেজের প্রিন্সিপাল শতীশ চন্দ্র রায়কে বলেছেন কুমিল্লার লোক। এই রকম অনেক তথ্য আছে যেগুলো সঠিক নয়।
আসাদ চৌধুরী একটি বিস্মৃত হয়ে বললেন, সত্যি? আমাকে আবার অনেকে বললো প্রশান্ত বাবু একেবারে ঈমানদ্বার মানুষ। এক লাইনও এদিক সেদিক করবে না। আমি কালও কার সঙ্গে তর্ক করেছি রবীন্দ্রনাথ বাংলাতে বক্তব্য দেন নাই ,ইংরেজিতে দিয়েছিলেন।
কথা বলার সময় আসাদ চৌধুরী জানতে চাইলেন শ্রীহট্ট এর হট্ট শব্দের অর্থ কী? নৃপেন্দলাল বললেন, হট্ট অর্থ বাজার বা হাট। শ্রীহট্ট মানে সুন্দর বাজার। সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে।
আসাদ চৌধুরী বললেন, বুঝতে পেরেছি যা হয় আর কি, র-ফলা আছে র ল হয়ে যায়। যেমন ব্রাম্মণবাড়িয়ায় রবিবারকে বলে লইব্বার। রংপুরে র এর উচ্চারণ অ ‘তে বলে।
কথা বলার এমন সময়ে সেলিম আউয়াল প্রবেশ করলেন। আসাদ চৌধুরী দেখে একটু হেসে বললেন তুমি বাচবা অনেকদিন। একটু আগে তোমার কথা মবনুকে বলেছি।
আসাদ চৌধুরী নৃপেন্দলালের দিকে থাকিয়ে বললেন আপনি থাকেন কোথায়? উত্তরে তিনি বললেন, শ্রীমঙ্গলে। মীর মোশাররফ হোসেন যেমন মামলার কাজ ছাড়া ঢাকা যেতেন না, তেমনি আমি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঢাকা যাই না।
একটু পরে সৈয়দ মবনু তার মেয়ে সাইয়্যিদা মারহামার করা আসাদ চৌধুরীর পোট্রের্ট নিয়ে ঘরে ঢুকেন। বলেন, আমার মেয়ে আপনি আসবেন শুনে কাল রাতে আপনার ছবি আর্ট করেছে। আসাদ চৌধুরী নিজের ছবি দেখে মুগ্ধই হলেন। একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন। একটু পর গল্পকার সেলিম আউয়াল জেনারেল ওসমানীকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থের জন্য আসাদ চৌধুরীর ‘আপনি, সর্বাধিনায়ক’ কবিতার লিখিত অনুমতি চাইলেন। সেই সঙ্গে কবিতার ব্যাখ্যাও শুনতে চাইলেন কবির কাছে। আসাদ চৌধুরী প্রথমে কবিতাটি পাঠ করা শুরু করলেন-
আপনার স্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদে
আমি অস্বাভাবিক আনন্দিত।
আপনার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলাম
বাংলা একাডেমীর একুশের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে
মহাপরিচালকের থম-থমে মুখ থেকে,
মুক্তিযোদ্ধা মোশাদ আলী তখন গাইছিলেন
রাজশাহীর একটি আঞ্চলিক গান,
গানটি তিনি শেষ করতে পারেন নি।
রেডিও, টিভি, আমাদের কল্ কল্ ছল্ ছল্
ঠিকই চলছিলো,
আহাজারি শুরু হয়েছিলো, আরও পরে,
বিমান-বন্দরে আপনার লাশ আসার পর।
ভালোই হ’লো গণতন্ত্রের তীর্থে
আপনি ঠোঁটে ওষুধ নিয়ে মরেছেন
আপনার হেলিকপ্টারটি একাত্তরে বিধ্বস্ত হয় নি,
নিক্ষিপ্ত গুলি আপনার শরীরেও লাগে নি।
গুলি লেগেছিলো আপনার সাধের গণতন্ত্রের ওপর,
আপনি তাতেই স’রে দাঁড়ালেন
গণতন্ত্র একটু-একটু ক’রে সরলো,
মুক্তিযোদ্ধারা ঝুর-ঝুর ক’রে ঝরলো,
আর
আপনার সই-করা অতিরিক্ত দশলাখ মুক্তিযোদ্ধা
ফুলে-ফেঁপে উঠলো।
আপনি টাই-বাঁধতে গিয়ে আঁৎকে উঠলেন,
কর্ণেল তাহেরের ফাঁসির দড়ির কথা মনে পড়েছিলো আপনার?
আপনার আদরের খালেদ মোশাররফের মুখ আপনি চিনতে
পেরেছিলেন ?
জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আপনার ভোটাভুটির খেলাটা
বেশ জমেছিলো।
স্বাধীনতার সপক্ষে যরা তারাই তো পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হন।
নির্বাচনে আপনি আর প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন না,
সমর্থন না-করার বেদনা থেকে আপনি আমাকে
রেহাই দিলেন।
শুরুটা যেমন চাঁটগাতে হয়েছিলো
শেষটাও সেখানে…
আপনি সম্পূর্ণ স’রে যাওয়ার আগেই
সর্বাধিনায়ক
আপনার সন্তানেরা বিদায় নিলেন ॥
পাঠ শেষে ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করলেন এভাবে- এদেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে জিয়াউর রহমানের অর্ডারে হত্যা করা হয়েছে। এবং এই সংখ্যাটা কিন্তু কম না। সেই হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতির মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে। এই যে উনার স্বাভাবিক মৃত্যু এটাতেই আমি আনন্দিত। কেননা অন্যকারো অর্ডারে তার মৃত্যু হয়নি। জানেন, জিয়াউর রহমান খুব অফিসিয়াল ছিলেন। মুফাজ্জল করিম ছিলেন তার সেক্রেটারি। উনি আবার কবিতা লিখতেন। এটা জিয়াউর রহমান পছন্দ করতেন না। বলতেন, কবিতা কেন লিখবা? কবিতা লিখে কি হয়? একটু থেমে আবার বলা শুরু করলেন, কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দিসে কে? জিয়াউর রহমান। কবিতায় উনার টাই এবং কর্নেল তাহেরের ফাঁসির দড়িকে পাশাপাশি এনেছি। কয়েক সেকেন্ড থেমে বললেন, কবিতা এতোটা সরাসরি লেখা উচিত না। কিন্তু আমি ঐসময়ে এতোটা রাগী অবস্থায় ছিলাম, নিজের ক্ষোভ থেকে পুরো কবিতাটি লেখা। বললেন, বাংলা একাডেমির একটি অনুষ্ঠানে আমি তখন উপস্থাপনা করছিলাম। তখনই শুনলাম ওসমানী সাহেব মারা গেছেন। আমি মৃত্যুর সংবাদটা তৎকালীন মহাপরিচালক মনজুরে মওলাকে দিলাম। আমাকে তখন তিনি বললেন, আসাদ এই মুহূর্তে অনুষ্ঠান বন্ধ করেন। ঘোষণা করেন, আমরা শোকাহত।
কথা বলার এক পর্যায়ে আসাদ চৌধুরী বলে উঠলেন, শ্রীহট্ট শব্দের অর্থ জেনে আমার খুব ভালো লাগছে।
কবি নৃপেন্দলাল বললেন, ‘শ্রীহট্ট’ শব্দটি একদশ শতাব্দীর একটি তাম্রশাসনে পাওয়া গিয়েছে। সিলেটের কুলাউড়ার ভাটেরা নামক একটি জায়গায় এটি আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখানে প্রশাসনিক অঞ্চল হিসাবে শ্রীহট্ট কথাটা আছে। এবং আরেকটি মজার বিষয় হলো, ‘কালী বিলাস তন্ত্র’ নামে সিলেটের একটি প্রাচীন বইতে বাংলা বর্ণমালার কথা আছে।