উদয়ন বাজপেয়ি একাধারে কবি, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক। ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাগর শহরে ৪ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে তার জন্ম। বাবা ছিলেন সাগর শহরের মেয়র। মা ছিলেন বইপোকা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন উদয়ন বাজপেয়ি। তিন দশক থেকে শিক্ষকতার পাশাপাশি হিন্দি সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় সক্রিয় রয়েছেন।
তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেযোগ্য- ‘কুছ বাক্য’, ‘পাগল গনিতজ্ঞ কি কবিতাঁয়ে’ এবং ‘কেবল কুছ বাক্য’, ‘সুদেশনা’, ‘দূর দেশ কি গন্ধ’, এবং ‘সাতওয়া বাটন’। তাঁর অনুবাদে জাপানী কবি সুনতারো তানিকাবার কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে,’মটম্যায়লি স্মৃতি মে প্রশান্ত সমুদ্র’ শিরোনামে।
উদয়ন বাজপেয়ি সম্পাদিত ‘সমাস’ হিন্দি সাহিত্যের পাঠকপ্রিয় একটি পত্রিকা।
তাঁর কবিতা বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কৃষ্ণ বলদেব বৈদ্য পুরস্কার এবং রাজা ফাউন্ডেশন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন উদয়ন বাজপেয়ি।
রাত
বৃক্ষের অদৃশ্য শীতল ছায়ায়
হাঁটছে ধীরে ধীরে এক শিশু
আকাশে অর্ধেক চাঁদ
সাঁতার কাটছে চুপচাপ, বাকি অর্ধেকে পূর্বপুরুষ
পার করছে আকাশগঙ্গা
মধ্যরাতে নৌকা ডুবার প্রতীক্ষায়
দিঘীর পাড়ে উদ্বিগ্ন টহল দিচ্ছে মৃত্যু
পাগল গনিতজ্ঞের কবিতা-১
ছেড়ে আসিনি তো
আমার কম্পমান আঙ্গুলের চিহ্ন
তোমার বুকে?
কোথাও থেকে যায়নি তো
আমার অশ্রুর লবণ
তোমার হাতের তালুতে?
হঠাৎ উপচে পড়েনি তো
আমার আগ্রহের প্রতিবিম্ব
তোমার চোখে?
পাগল গনিতজ্ঞের কবিতা-২
সংখ্যার উপর ছড়িয়ে থাকার পরও
তোমার শরীর বিলীন হয়ে যায় না
তুমি আমাকে, তোমার শরীরের
প্রতি টুকরো থেকে
এমনভাবে দেখেছ
যেমন সেদিন যাবার বেলায়
দেখেছিলে
শূন্য
নানার কাছে বিলাত থেকে প্রতিদিন একটা চিঠি আসতো
তার ছেলে সেখান থেকে ফিরতে পারছিলো না
মা, এই দুঃখ নানার দুঃখের মতো অনুভব করে দুঃখ পেত
সে বাড়ির ছাদের উপর দাঁড়িয়ে নিজের ভাই নয়,
নানার ছেলেকে ছোট ছোট দুই হাত উচু করে ডাকতো
বাবা মা’কে তার কষ্টের কথা বলতো না
মায়ের দুঃখ শোনার জন্য সে আর বেঁচে নেই
সে যখন পুনরায় ফিরে আসে তখন মাও ফিরে আসে
তার কষ্ট মায়ের দুঃখের সঙ্গে স্বর্গের দরজা খুঁজে ফিরে
নানীর মৃতদেহে ফুল ছিটায় নানার মৃতদেহ
পিতার মৃতদেহ দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখে মায়ের মৃতদেহ
ভাষা ডমরুর মতো বাজে শূন্য-শূন্য, শূন্য-শূন্য
কুয়া
সবুজ বাক্সে মায়ের জমানো টাকা কাগজ মুড়ে বালিশের নীচে রাখা আছে
বাবা কালো আলমাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। ভাই, মধ্যরাতে কুয়ায় উঁকি দিয়ে আছে
সে জলের মটকার পাশে রাখা গ্লাস খুঁজে বেড়ায় যা কখনো সে খুঁজে পায় না
বাবা, ক্ষেতে লাল টমেটো দেখে খুশী হয়। বাবার পেছনে লেগে থাকে এক মালী
মালী, ক্ষেতের কোনে কালো মাটির উপরে এক বাচ্চাকে ঘুম পাড়াচ্ছে
নিদ্রায় হাঁটতে থাকা মা, কুয়ার কাছে এসে দাঁড়ায়, তারা একে অপরকে চিনতে পারে না
কুয়ায় অস্পষ্ট মুখের এক প্রেত জল ভরে। নানী, বিরবিরিয়ে বলে আমি কখনো গ্লাস খুঁজে পাই না
সে গলাচেপে চিৎকার করে, মা যেখানে খুশি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে
উঠোনের প্রতিটি কোণ সাদা ফুলে পিতার শবদেহ পুরোপুরি ঢেকে দেয়।